Thursday 11 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির-মুরতাদ’ আখ্যায়িত, রাবি শিক্ষকের মন্তব্যে বেরোবির নিন্দা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৯ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:৫৭

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে ‘কাফির-মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেরোবি প্রশাসন এসব তথ্য জানিয়েছে।

এই মন্তব্যকে নারীমুক্তি আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এবং সরকারের কাছে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বেগম রোকেয়া দিবসে ফেসবুকে দেওয়া এই পোস্ট সমাজে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, যা শিক্ষাঙ্গনে দায়িত্বশীল আচরণের প্রশ্ন তুলেছে।

বেরোবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোকেয়ার মতো আলোকিত মানুষ সম্পর্কে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের এমন অবমাননাকর মন্তব্য গভীর উদ্বেগজনক।

আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রোকেয়া তার সমগ্র জীবন সমাজের পশ্চাৎপদতা, কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পণপ্রথা এবং নারীর অধীনস্থ অবস্থানের বিরুদ্ধে কলম ও সংগ্রামের মাধ্যমে অতিক্রম করেছেন। তার কীর্তি যেমন ‘মতিচূর’, ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘অবরোধবাসিনী’ বা ‘পদ্মরাগ’-এ প্রতিফলিত, সেখানে তিনি মানুষ ও মানবতার পক্ষে যুক্তি, প্রগতি, মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

রোকেয়ার চিন্তা-দর্শন কখনো ইসলাম বা ধর্মীয় মৌলিক নীতিমালার বিপক্ষে ছিল না; তিনি ইসলামী অনুশাসনের মধ্যে থেকেই নারীর অধিকারের কথা বলেছেন এবং নিজে একজন ‘প্র্যাকটিসিং মুসলিম’ ছিলেন বলে তার জীবনীকাররা উল্লেখ করেছেন। এমন একজনকে ‘মুরতাদ’ বা ‘কাফির’ আখ্যা দেওয়া কেবল অবমাননাকর নয়, এটি সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা এবং দেশীয় আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও স্মৃতিকে ধারণ করেই উত্তরাঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে। শিক্ষা, গবেষণা ও মুক্তজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নারীর অগ্রযাত্রা এবং বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর ‘রোকেয়া দিবস’ মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যা তার আদর্শকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক। রোকেয়ার স্বপ্ন দেখা নারী উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ এবং প্রগতিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বেরোবি কাজ করে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মান ও মর্যাদা রক্ষায় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। প্রশাসন আশা করছে, সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনভিপ্রেত মন্তব্য রোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান লিখেছেন, ‘আজ মুরতাদ-কাফির বেগম রোকেয়ার জন্মদিন’। এই পোস্ট দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, এবং অনেকে এটিকে নারীর অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস বলে মনে করছেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান তার মন্তব্যের সাফাই গেয়েছেন, তবে বিস্তারিত জানা যায়নি।

সূত্রমতে, এই মন্তব্যের পর রাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো আসেনি, তবে শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে এটিকে শিক্ষকের দায়িত্বহীনতার উদাহরণ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রাণ গ্রুপে চাকরির সুযোগ
১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:১৬

নিয়োগ দিচ্ছে মেঘনা ব্যাংক
১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:১৪

আরো

সম্পর্কিত খবর