Wednesday 10 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেরোবির ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:০২ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:০৫

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ২৪ ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। ভোটার তালিকায় ত্রুটি, শিক্ষার্থীদের একাংশের মনোনয়নপত্র উত্তোলন বর্জন এবং সাম্প্রতিক মনোনয়ন জমাদানের জটিলতার কারণে নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সভায় উপস্থিত সূত্র জানায়, ভোটার তালিকায় ব্যাপক অসংগতি, হলভিত্তিক তালিকার জটিলতা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক প্যানেলের বর্জনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন হতে পারে তা জানায়নি কমিশন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ১ ডিসেম্বর ভোটার তালিকার ত্রুটির কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল এবং ৩ ডিসেম্বর সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যায়, মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর কমিশনের অফিসে তালা ঝুলিয়ে কর্মকর্তারা অনুপস্থিত ছিলেন, যা প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার অভিযোগ উঠেছে, যা নির্বাচনকে ‘হাস্যকর’ পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সভায় নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন না হওয়ার খবর শুনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সভা ত্যাগ করেন। এই প্যানেলটি গত ৯ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ভিপি পদে আহমেদুল হক আলবীর রয়েছেন।

শিবির সমর্থিত ‘বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদের’ সম্ভাব্য ভিপি প্রার্থী আহমেদুল হক আলবীর বলেন, ‘সভায় যারা মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছে তাদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমরা দেখি যারা সম্ভাব্য প্রার্থী কিন্তু মনোনয়ন তুলেনি, তারাও উপস্থিত। আবার তাদের জন্য মনোনয়ন উত্তোলন ও জমাদানের সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছে কমিশন। এ কারণে আমরা সভা ত্যাগ করেছি।’

তবে সভায় সাবেক সমন্বয়ক, ছাত্রদল এবং বামপন্থী প্যানেলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ছাত্রদল ও বামপন্থী সমর্থিত শিক্ষার্থীরা শীতকালীন ছুটির সময়সীমা মেনে নির্বাচনের দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান ও আন্দোলন চালিয়েছেন। অন্যদিকে শিবির সমর্থিত অংশ নির্বাচন অনড়ভাবে চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শীতকালীন ছুটি ও ফাইনাল পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচনি আমেজ কমে গেছে এবং অনেকে ঘরমুখো হয়েছেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ্জামান, সহকারী নির্বাচন কমিশনার একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাসুদ রানা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার সরকার, ইংরেজি বিভাগের প্রধান ড. মোহসীনা আহসান এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হাসান আলী। এই ছয় সদস্যের কমিশন গত ৪ নভেম্বর গঠিত হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এটি প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বারবার স্থগিতের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাস্থা বাড়ছে। গত ২১ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে ২৪ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে। কিন্তু শিবির-ছাত্রদলের মধ্যকার লড়াই, গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি এবং প্রশাসনিক অসংগতির কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা অব্যাহত রয়েছে। নতুন তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর