Tuesday 09 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হস্তক্ষেপ চেয়ে গভর্নকে চিঠি
৩১ ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষকের মতামতে বিএসইসির উদ্বেগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৫৭

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকরা আর্থিক অবস্থা ও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে প্রতিকূল ও শর্তযুক্ত মতামত, বিষয়বস্তুর ওপর বিশেষ জোর, প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ এবং গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এরই ধরাবাহিকতায় আর্থিক প্রতিবেদনে দেওয়া নিরীক্ষকদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে ওইসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন।

বিজ্ঞাপন

কমিশন মনে করে, নিরীক্ষকদের এসব পর্যবেক্ষণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ, বাজারে স্বচ্ছতা এবং সামগ্রিকভাবে মূলধন বাজারের প্রতি আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই ব্যাংকিং খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক ও ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বরাবর বিএসইসির করপোরেট রিপোর্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

যেসব ব্যাংক চিহ্নিত করেছে বিএসইসি

এবি ব্যাংক পিএলসি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ঢাকা ব্যাংক পিএলসি, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক পিএলসি, এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি, ওয়ান ব্যাংক পিএলসি, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি, পূবালী ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, এসবিএসি ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)।

যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে বিএসইসি

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পিএলসি, মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড।

নিরীক্ষকদের পর্যবেক্ষণ

৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষকরা আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করে কিছু গুরুতর বিষয় উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রতিকূল মতামত অর্থাৎ আর্থিক প্রতিবেদনে বড়ধরনের ভুল রয়েছে। শর্তযুক্ত মতামত অর্থাৎ কিছু অংশ ঠিক নেই, সন্দেহ রয়েছে। বিষয়বস্তুর ওপর বিশেষ জোর অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে চলতে পারবে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ। আর গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ অবস্থায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে এমন অনিশ্চয়তা।

বিএসইসির পর্যবেক্ষণ

বিএসইসি জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী পরীক্ষা করে তারা দেখতে পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরীক্ষকরা এমন মতামত দিয়েছেন যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য ও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ ধরনের প্রতিকূল বা শর্তযুক্ত নিরীক্ষা মতামত বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাসের সবচেয়ে বড় কারণ। কোনো কোম্পানির গোয়িং কনসার্ন ঝুঁকি থাকলে সেটি বিশেষ নজরের বিষয়। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে সামগ্রিক আর্থিক সুশাসন আরও শক্তিশালী হবে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিএসইসি তালিকাভুক্ত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করছে। এই প্রসঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে, নিরীক্ষকরা তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে মতামতের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে জোড় দিয়েছে।

কমিশন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, নিরীক্ষকদের উপরিউক্ত পর্যবেক্ষণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ, তথ্য প্রকাশের স্বচ্ছতা এবং পুঁজিবাজারের সামগ্রিক আস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতের জন্য এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি।

তাই এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, কমিশন প্রযোজ্য বিধিমালা অনুসারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আর্থিক প্রতিবেদনে এমন সমস্যা থাকলে তা শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো বাজারকেই ঝুঁকিতে ফেলে। তাই বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো জবাব এসেছে কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি আসেনি।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর