পিরোজপুর: আজ ৮ ডিসেম্বর, পিরোজপুর হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদরদের পরাজিত করে মুক্ত হয় পিরোজপুর। এদিন শহরের আকাশে উড়েছিল লাল-সবুজের বিজয় পতাকা। দিনটি জেলাবাসীর কাছে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল নবম সেক্টরের অন্তর্গত সুন্দরবন সাব-সেক্টর, যার নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন। ১৯৭১ সালের ৩ মে পাকবাহিনী হুলারহাট নৌবন্দর দিয়ে শহরে প্রবেশ করে প্রথমেই মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর এলাকায় গণহত্যা চালায়। শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন গ্রামে আগুন দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতাপন্থী মানুষের ঘরে। হত্যা করা হয় প্রায় ৩০ হাজার নিরস্ত্র মানুষকে, সম্ভ্রমহানির শিকার হন বহু নারী।
পিরোজপুরকে মুক্ত করতে মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টায় পাড়েরহাট বন্দর হয়ে শহরে প্রবেশ করেন। মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রার খবর পেয়ে পাকসেনারা কচা নদী হয়ে বরিশালের দিকে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে গেরিলা আক্রমণে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে এবং অবশেষে ৮ ডিসেম্বর তারা পিরোজপুর ছাড়তে বাধ্য হয়।
হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পিরোজপুরের আয়োজনে সকাল সাড়ে ৯টায় পুরাতন কালেক্টরেট ভবনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের হয়ে বধ্যভূমি (বলেশ্বর খেয়াঘাট) পর্যন্ত যায়। পরে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবু সাঈদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহম্মেদ সিদ্দিকী, পৌর প্রশাসক ইশরাত জাহান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক চান, সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মুনান, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ পান্না লাল রায়, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. নজরুল ইসলাম খান, সদস্য সচিব এস এম সাইদুল ইসলাম কিসমতসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা। সার্বিক সহযোগিতা করেন পিরোজপুর পৌরসভা।
জেলা প্রশাসক আবু সাঈদ বলেন, ‘পিরোজপুরের হানাদারমুক্ত দিবস আমাদের গৌরবের দিন। শহিদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’