Sunday 07 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো সেই চিকিৎসক যা বললেন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:১৯

ডা. ধনদেব বর্মণ

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাজুয়ালিটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মণকে বরখাস্তের নির্দেশ দিলেও রোববার (৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস ডিজির সঙ্গে অসদাচরণের জন্য ওই চিকিৎসককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শোকজ করেছেন। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণ জানতে চাইলে ডা. ধনদেব বর্মণ বলেন, ‘আমি গত ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে দায়িত্বে আছি। এ পর্যন্ত কোনো রোগী বা স্বজনদের সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করা অথবা কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি, কেউ বলতে পারবে না। আমরা সবসময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি যেকোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি খুব সুষ্ঠুভাবেই ক্যাজুয়ালিটি বিভাগ পরিচালনা করছি। আমাদের পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও ডেপুটি ডিরেক্টর সাহেবের তত্ত্বাবধানে আমরা খুব সুন্দরভাবেই চালাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এসে কী কী সমস্যা, সেগুলো জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এটা-সেটা নিয়ে নানাভাবে কথা বলেন। আমি তিনবার নাম বলার পরেও উনি আমাকে নানাভাবে সকলের উপস্থিতিতে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে কথা বলেছেন। অথচ আমার চাকরি বেশি দিন আর নাই। এক বছর পরেই আমি পিআরএলে চলে যাব।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি সিনিয়র, ২০১৩-তে আমি এমএস করেছি। আমাকে ২০২৫ সালে সহকারী অধ্যাপক বানাইলো। আমি জেনারেল সার্জারিতে অপারেশন থিয়েটারে আছি। হাসপাতালের ভেতরে কোনো অপারেশন করার এখনো আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যও হয়নি। যেটাই হোক, এই যে প্রেক্ষাপট এটার জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষ এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলা। আমাদের ম্যানপাওয়ারগুলো আমরা কাজে লাগাইতে ব্যর্থ। আমাদের সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় কাজে আমরা দিতে পারি না। আসলে কি বলব স্বাস্থ্য সেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট উটের পিঠে চলতেছে। এ রকম মনে হয় আমার কাছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, সব জায়গায় দুর্নীতি। এসব চিন্তা-ভাবনা করে আমার আসলে কাজ করার আর মানসিকতাই নাই। আমি সাসপেনশন চাই। আমি সরকারি চাকরি করতে চাই না। এদের চালানোর মতো মন মানসিকতা নাই। স্বাস্থ্য সেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভটভাবে চলতেছে। আর স্বাস্থ্য দ্বারা যারা রাজনীতি করে, পলিটিক্স করে, তারাও পলিটিক্সের সময় আসে খোঁজ নেয়। এ জন্য আমি খুব ত্যক্ত বিরক্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজি মহোদয়কে আমি গুরুজনের মতো মনে করছিলাম যে আমাদেরকে গাইডলাইন দেবে। উনি এসে বলে যে এটা কি, সেটা কি, টুল কেন নাই, এই নাই, সেই নাই। উনি এসে বলতো আপনার কি কি দরকার, যাতে আপগ্রেডেভাবে কাজটা করতে পারি। কিন্তু সেটা না করে উল্টো পরিকল্পিতিভাবে ধমক। এটা কাম্য নয়।’

আবেগজড়িত কণ্ঠে ডা, ধনদেব বর্মণ বলেন, ‘এখন আমার চাকরি শেষের দিকে, আজকে আমার ফ্রেন্ড সবাই প্রফেসর হয়ে গেছে বিভিন্ন সেক্টরে। আমার বিভিন্ন কারণে হয়নি, ট্রেনিং পোস্ট পাইতে পাঁচ বছর দেরি করতে হইছে আমাকে। ডিজি অফিসের ডিজি দেখায়, রাজনৈতিক নেতাকে ধরেন। নেতাকে ধরে ট্রেনিং পোস্ট নেন। এই ধরনের কথাবার্তা ডিজি অফিস থেকে শুনতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে আমি স্বাস্থ্য সেবাটাকে মনে করি যে উদ্ভট উটের পিঠে চলতেছে। এতসব কারণে আমার চাকরি সাসপেনশন হলে আমি খুশি হবো।’ তবে অনাকাঙ্খিত তর্কের জন্য তাৎক্ষণিক ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে শিশুদের মূত্রাশয় ও প্রজননতন্ত্র সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসাবিষয়ক চলমান চিকিৎসার সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। সেমিনারে অংশ নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি সেবার মান, জরুরি বিভাগ পরিচালনা, রোগী ব্যবস্থাপনা ও স্টাফদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন ক্যাজুয়ালিটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মন তার বিভাগের সীমাবদ্ধতা, জনবল সংকট এবং দায়িত্ব পালনের চাপে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে চিকিৎসকের ক্ষোভের ভাষায় কথা বলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ক্ষিপ্ত হন। এ সময় উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর ডা. ধনদেব বর্মনকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন।

মচিমহা পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস জানান, ক্যাজুয়ালটি বিভাগের ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মন ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ। সেবার মান নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে ডা. ধনদেব বর্মনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। যা মোটেও ঠিক হয়নি। ডা. ধনদেব বর্মন এ রকম আচরণ করবে সেটা ধারণাও করতে পারিনি। ঘটনার পর ওই চিকিৎসককে বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য তাকে শোকজ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর