ঢাকা: আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে জেআইসি সেল বা কথিত ‘আয়নাঘর’ এ গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক ও বর্তমান ১৩ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আবেদন করেছে প্রসিকিউশন। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে প্রসিকিউশনের শুনানি শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী ঘরানার ব্যক্তিদের আটক করে গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ২৬ জনকে গুম করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করার আবেদন জানান তিনি।
শুনানি শেষে গ্রেপ্তার তিন আসামি ও স্টেট ডিফেন্সের পক্ষে সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল আগামী ৯ ডিসেম্বর শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। এদিন উপস্থিত তিন আসামির পক্ষে আবেদন করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু।
মামলার ১৩ আসামির মধ্যে বর্তমানে গ্রেপ্তার রয়েছেন তিনজন সেনা কর্মকর্তা। তারা হলেন—ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী। রোববার সকালে ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
শেখ হাসিনাসহ অপর আসামিরা পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ এবং লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।
এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য রোববারের দিন ধার্য করা হয় এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার পক্ষে স্বেচ্ছায় মামলা পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না আইনজীবী হিসেবে যুক্ত হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ৩ ডিসেম্বর তা প্রত্যাহার করেন। পরে তার পরিবর্তে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করার জন্য সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর এ মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।