Monday 08 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুনামগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:২২ | আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:০৫

সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরায় ৪৮ শহিদের স্মৃতি সমাধিসৌধ। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ: আজ ৬ ডিসেম্বর। সুনামগঞ্জবাসীর কাছে এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়। এটি দখলমুক্ত ভূমির মুক্তির অঙ্গীকার এবং ত্যাগের স্মারক। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকারদের পরাজিত করে মুক্ত হয় সুনামগঞ্জ।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুনামগঞ্জ ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৫ নম্বর সেক্টরের অধীন। নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল মীর শওকত আলী। যুদ্ধের শেষ প্রহরে বালাট সাব সেক্টরের কমান্ডার মেজর মোতালিব, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন যাদব এবং ক্যাপ্টেন রঘুনাথ ভাটের নেতৃত্বে চার কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধা শহরের প্রবেশমুখ দখলে নেন। পরিকল্পিত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং পরদিন শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু পালানোর আগমুহূর্তে ঘটে নির্মমতা। সুনামগঞ্জ পিটিআইকে তারা নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত করে। সেখানে রক্তের দাগ, ছিন্ন কাপড়, হাড়গোড় এবং অসংখ্য হত্যার চিহ্ন ইতিহাসে এখনো এক বেদনাবহ স্মৃতি। এসময় স্থানীয় রাজাকারদের ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ এবং নৃশংস।

তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মুক্তিযোদ্ধা শহীদ তালেব উদ্দিনকে ধরিয়ে দিতে রাজাকাররা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে। উজ্জীবনী স্লোগান, সাহস এবং নেতৃত্বে তিনি ছিলেন তরুণদের অনুপ্রেরণা। তাকে শহরের অলিগলি প্রদক্ষিণ করিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। পরে পিটিআই টর্চার সেলে নির্যাতনের পর তালেব উদ্দিনসহ তিন মুক্তিযোদ্ধাকে আহসানমারা সেতুর কাছে রশিতে বেঁধে গুলি করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

৬ ডিসেম্বর শহর মুক্ত হওয়ায় মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। শহর পুনরুদ্ধারের আনন্দে চোখ ভিজে ওঠে বিজয়ের আবেগে। কিন্তু সেই উল্লাসের মাঝেই তালেব উদ্দিনসহ তিন সহযোদ্ধার নিথর দেহ সহযোদ্ধাদের হৃদয়ে রেখে যায় গভীর শোক।

সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ছিল দৃষ্টান্তমূলক। শহর নয় গ্রাম ছিল প্রতিরোধের দুর্গ। কৃষক, জেলে, শ্রমিক, ছাত্র, ব্যবসায়ী-সবাই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। কেউ আশ্রয় দিয়েছে, কেউ খাদ্য, কেউ অস্ত্র সংগ্রহে সহায়তা করেছে। তা ইতিহাসে অমর অধ্যায় হয়ে আছে।

তবে স্বাধীনতার এত বছর পরও বেশ কিছু স্মৃতি, নির্যাতন কেন্দ্র ও ঐতিহাসিক চিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছে অবহেলায়। স্থানীয়দের দাবি, রাজাকারদের ভূমিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের বিবরণ, বীরাঙ্গনা এবং শহিদদের তথ্য সংরক্ষণ জরুরি। নতুন প্রজন্মের সামনে সত্য ইতিহাস তুলে ধরাই এখন সময়ের দাবি।

কারণ ৬ ডিসেম্বর শুধু শত্রুমুক্তির দিন নয় এটি ত্যাগ, অপরাধের মুখোমুখি দাঁড়ানো এবং আত্মমর্যাদার পুনর্জাগরণের দিন। সুনামগঞ্জের মানুষের কাছে তাই আজকের দিন বিজয়ের দীপ্তি, বেদনার স্মৃতি এবং মুক্তির গর্ব নিয়ে ফিরে আসে।