ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন বলেছেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে স্মার্ট ডিজিটাল সাবমিশন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে। এ নতুন সিস্টেমের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট ও প্রকাশনা দ্রুত, নিরাপদ ও রিয়েল-টাইমে জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বাজারে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গতি বাড়াবে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারের মাল্টিপারপাস হলে ডিএসই’র স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমে “রেগুলেটরি সাবমিশন মডিউল ও সিএসই অনবোর্ডিং” আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
সাইফুদ্দিন বলেন, এই উদ্যোগটি চাইনিজ কনসোর্টিয়ামেরের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শুরু হয়, যেখানে বিপিএম–ভিত্তিক কার্যপ্রবাহ অটোমেশন ধারণা গ্রহণ করা হয়। ডিএসই’র ২ জন কর্মী ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে এবং সেই অভিজ্ঞতা দেশে এনে ইন–হাউস টিমের সহায়তায় স্থানীয় সিস্টেম উন্নয়নে কাজ করেন। এর ফলে ডিএসই এখন নিজস্ব সক্ষমতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য একটি কার্যকর ডিজিটাল সাবমিশন ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরেছে, যা বাজারে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও শক্তিশালী করবে। প্রকল্পে সমন্বিত সহযোগিতা দিয়েছে সিডিবিএল, বিএসইসি সহ অন্যান্য প্রধান অপারেটিং সংস্থাগুলো।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আর্থিক তথ্য–জমা শুধু পিডিএফ–এ সীমাবদ্ধ থাকবে না; ডিএসই অগ্রসর হবে এআই–পাঠযোগ্য ও মেশিন–রিডেবল ডেটা ফরম্যাট, এক্সবিআরএল–ভিত্তিক সাবমিশনের দিকে, এটি হবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায় –পাঠযোগ্য আর্থিক তথ্য অবকাঠামোর ভিত্তি, যা স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বাজার–গবেষণা, বিশ্লেষণ ও ডেটা–ইন্টেলিজেন্স সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পটি মূলত তথ্য–স্বচ্ছতা, মানসম্মত হিসাব ও প্রযুক্তিনির্ভর বাজার–সংস্কৃতি নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদি প্রয়াস, যা একটি আধুনিক পুঁজিবাজার গঠনের নতুন সূচনা নির্দেশ করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, আজ পুঁজিবাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে ডিএসই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিগত অবকাঠামোতে নেতৃত্ব ধরে রাখলেও এতদিন নথি জমা ও রিপোর্টিংয়ের বড় অংশ ম্যানুয়াল ও হার্ড কপি–নির্ভর ছিল, যা বিনিয়োগ কার্যচক্রকে ধীর ও জটিল করেছে; অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই অনলাইন রিপোর্টিং চালু করেছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে, গ্রাহক-কেন্দ্রিক চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিএসই উন্নয়ন করেছে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ই্ন্সুরেন্স এবং ক্যাপিটাল মার্কেট উইংসের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদ কুতুব বলেন, দেশের পুঁজিবাজার ডিজিটালাইজেশনে এখনও পিছিয়ে থাকলেও আজকের নতুন উদ্যোগ এই পিছিয়ে থাকা দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। তিনি উল্লেখ করেন যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্গঠনে স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য, আর এই ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। কমিশন, এক্সচেঞ্জ এবং সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ডিএসই পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অবঃ) বলেন, দেশে অনেক বিশেষজ্ঞ থাকলেও বাস্তবে কাজ শুরু করতে প্রায়ই সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সক্ষমতার অভাব দেখা যায়। কিন্তু ডিএসই ও সিএসই-এর সাম্প্রতিক উদ্যোগ—মাত্র ১৫ দিনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজস্ব চেষ্টায় স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম তৈরি—ডিজিটাল সক্ষমতায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
ফিনান্সিয়াল কাউন্সিল রিপোর্টিংয়ের নির্বাহী পরিচালক নাবিল জে আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের ডিজিটাইজেশন বহু বছর ধরে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও বর্তমান উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। তিনি উল্লেখ করেন, হাজারো ফাইল ম্যানুয়ালি পর্যালোচনা করতে দীর্ঘ সময় লাগে, বিশেষ করে একটি অডিট ফাইল পর্যালোচনায়ই এক সপ্তাহ লেগে যায়—যা ডিজিটাইজেশন জরুরি করে তুলেছে। এফআরসি ইতোমধ্যে নিজস্ব এআই ডাটাবেস ও টুলস তৈরি করছে, যা বিশ্লেষণ, ক্রস-চেক ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহের চায়না ট্রেনিংয়ের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ও অন্যান্য সহযোগী বিভাগ যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, তা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং চীনের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার সঠিক সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রমাণ। বিদেশে বসে বিনিয়োগকারীরা ব্লুমবার্গ থেকে বাংলাদেশের কোম্পানির বেশি তথ্য পাচ্ছেন, যা স্থানীয়ভাবে তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্ট করে। নতুন প্ল্যাটফর্ম ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তবে ডেটার প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। ডিএসই বোর্ডের সমর্থন এবং চলমান রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্ম বাজারে স্বচ্ছতা, তথ্যপ্রবাহ এবং বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে আরও শক্তিশালী করবে।
বিএপিএলসি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. কায়ছার হামিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ম্যানুয়াল ও দ্বৈত সাবমিশনের (ইমেইল ও হার্ড কপি) সমস্যায় কোম্পানিগুলো ভুগছিল, এবং অবশেষে ডিএসই ও সিএসই যৌথভাবে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করায় এখন সাবমিশন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী ও স্বচ্ছ হয়েছে। নতুন সিস্টেমে তথ্য প্রদানকারীর নিজের তথ্যই সরাসরি জমা পড়ে, ফলে টাইপো বা ডেটা ভুলের ঝুঁকি কমে যাচ্ছে এবং দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ডিজিটাল সাবমিশন কোম্পানিগুলোর গভারনেন্স কস্ট কমাবে, রিপোর্টিং প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং ভবিষ্যতে লিস্টিংয়ে আগ্রহী নতুন কোম্পানিগুলোর জন্যও একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে।
অনুষ্ঠানে ডিএসই’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রবিউল ইসলাম এক প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে রেগুলেটরি সাবমিশন মডিউল ও সিএসই অনবোর্ডিং-এর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।