Tuesday 09 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যাংক কোম্পানি আইন
সংশোধিত অধ্যাদেশে পরিবারের আওতা বাড়ছে, কমছে ক্ষমতা

সোহেল রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৪৪ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৫৫

ব্যাংক কোম্পানি আইন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীর একক ও দীর্ঘমেয়াদি কর্তৃত্ব হ্রাসে পরিবারের সংজ্ঞার আওতা বাড়ানো এবং পরিচালনা পর্ষদে অর্ধেক সংখ্যক স্বতন্ত্র পরিচালক রাখার বিধান রেখে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’ নতুন করে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সংশোধিত আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

সম্প্রতি আইনটি সংশোধনের একটি খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংক ব্যবসা নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ এখতিয়ার প্রতিষ্ঠা, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করাই এবারের ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের অন্যতম উদ্দেশ্য। সংশোধিত প্রস্তাবটি উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদনের পর তা ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে।

বিজ্ঞাপন

সংশোধিত প্রস্তাবে পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- পরিবার বলতে কোনো ব্যক্তির স্ত্রী/স্বামী, পিতা-মাতা, পুত্র-পুত্রবধু, কন্যা-জামাতা, ভাই-ভাবী, বোন-ভগ্নীপতি, স্ত্রী/স্বামীর পিতা-মাতা ও ভাই-বোন এবং এদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বোঝাবে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, একই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা একই সময়ে একাধিক ব্যাংক কোম্পানির উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারণ করতে পারবে না;

কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কোনো একটি ব্যাংকের ২ শতাংশ বা এর অধিক শেয়ার ধারণ করলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি একই সময়ে অন্য ব্যাংকের মোট শেয়ারের ২ শতাংশ বা এর অধিক শেয়ার ধারণ করতে পারবে না;

কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কাছে নির্ধারিত শেয়ারের অতিরিক্ত শেয়ার থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা পরিবারের সদস্য নন- এমন ব্যক্তি বা উক্ত কোম্পানিতে শেয়ার নেই- এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করা যাবে।

এছাড়া সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার-অলাভজনক প্রতিষ্ঠান-কৌশলগত বিনিয়োগকারী ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংকের ৫ শতাংশের অধিক শেয়ার ধারণ করলেও তাদের ভোটাধিকার সকল শেয়ার হোল্ডারদের সামগ্রীক ভোটের ৫ শতাংশের বেশি হবে না।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অর্ধেক সংখ্যক স্বতন্ত্র পরিচালকসহ ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ১৫ জন। স্বতন্ত্র পরিচালকদের সঙ্গে ব্যাংকের কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। তারা শুধু ব্যাংকের স্বার্থে নিজস্ব মতামত দেবেন। কোনো পরিচালক তিন মাসের অধিক পর্ষদ সভায় অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না।

এছাড়া কোনো পরিচালক টানা ৬ বছরের অধিক কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না। বর্তমান নিয়মে পরিচালকেরা টানা ১২ বছর পর্ষদে থাকতে পারেন।

কোনো ব্যাংক তহবিলের অপ-ব্যবহার, মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী অর্থায়নে জড়িত থাকলে বা জনস্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করতে পারবে।

সংশোধনী প্রস্তাবে ‘স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান’-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হন বা ২০ শতাংশের অধিক শেয়ার ধারণ করেন বা ঋণের জামিনদাতা হন- তাহলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হিসেবে গণ্য হবেন।

ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে- বাংলাদেরশে কার্যরত সকল ব্যাংক-কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ, হারে ও পন্থায় মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। ‘মূলধন’ বলতে মূলধন সংরক্ষণ নীতিমালায় যে সকল উপাদানকে মূলধন বলে নির্দিষ্ট করা হবে- সেসব উপাদানকে বোঝাবে। বাংলাদেশের ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যাংক তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে মূলধন বিনিয়োগ বা ঋণ দিতে পারবে না। কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহীতার অনুকূলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো ঋণ সুবিধা প্রদান করবে না।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর