ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো থেকে: কপ৩০ সম্মেলন চলাকালে ব্রাজিলের বেলেমে কপের ভেন্যুকনফারেন্স সেন্টারে আগুন লেগেছে। এ সময় কপ সেন্টারের ভেতরে থাকা হাজার হাজার লোককে ভয়ে দিকবিদিগ ছোটাছুটি করে দেখা গেছে। তবে কোনো প্রকার হতাহত ছাড়াই সবাই বাইরে বের হতে পেরেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ২ টার দিকে কপ সেন্টারের ভেতরে একটি প্যাভিলিয়নে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কপ সেন্টারে উপস্থিত বাংলাদেশি সাংবাদিক, লবিস্ট ও পরিবেশবিদরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বেলেমের পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে।
ডয়চে ভেলের বাংলাদেশি সাংবাদিক ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘কপ সেন্টারে এর আগে কখনো আগুনের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানা নেই। তবে এবারে সাক্ষী হতে হলো বেলেম কপ কনফারেন্সে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত সবাইকে বাইরে বের করেছে। প্রথমে অনেকে বুঝতে পারেননি। পরে ভয়ে আতঙ্কের মতো ছোটাছুটি করেছে লোকজন।’
পরিবেশবিদ শরীফ জামিল বলেন, ‘শুরু থেকেই এবারের কপের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকে বিরূপ মন্তব্য করে আসছিলেন। এর মধ্যে এই আগুন সেই মন্তব্যে ঘি ঢেলে দিল। এত মানুষের আয়োজন হঠাৎ করে থেমে গেলে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হবে বিশ্ব। বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলো। কারণ, একটা শ্রেণি চায়-ই যে, সব সিদ্ধান্ত আটকে থাক। আজকে আগুন লাগার কারনে সবাই বাইরে অবস্থান করছে। কতগুলো সেশন চলছিল। আর মাত্র একদিন বাকি। এর পরই বেলেম আয়োজনের সমাপ্তি। আজ ও আগামীকাল গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তগুলোই হচ্ছিল। সবকিছু রেখে সবাই বের হয়ে গেছে।’
আরেক সাংবাদিক শাফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভেতরে সব দাহ্য পদার্থ থাকায় আতঙ্কটা বেশি ছিল। ওপরে-নিচে, টেবিলে, মাটিতে সবই দাহ্য পদার্থ। ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা করে আগুন নিভিয়ে ফেলে। তবে আতঙ্ক এখনো কাটেনি। আজ কপের ভেন্যু খুলবে কিনা জানা নেই।’
জাতিসংঘের যতগুলো সংস্থা রয়েছে তার মধ্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানের কনফারেন্স এটি। এই আয়োজন ঘিরে সারা বিশ্বের অন্তত ৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে থাকে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, COP30-এর চীনা প্যাভিলিয়নের প্রদর্শনী অংশে আগুন লাগে। আগুনের উৎস আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না হলেও তদন্তকারীদের ধারণা—বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনার পরপরই বেলেম ফায়ার ডিপার্টমেন্টের একাধিক ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় এবং এলাকা সুরক্ষিত ঘোষণা করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডে প্যাভিলিয়নের সাজসজ্জা, কাঠের পার্টিশন, ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে ও প্রচার সামগ্রী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মূল কনফারেন্স হল, আলোচনা কক্ষ ও নেগোশিয়েশন জোন অক্ষত রয়েছে।
আয়োজকদের ভাষ্য, এটি একটি “লোকালাইজড ইনসিডেন্ট”—যা সম্মেলনের সার্বিক কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটায়নি। COP30 সেক্রেটারিয়েট এক বিবৃতিতে জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কোনো প্রাণহানি বা আহতের ঘটনা ঘটেনি। নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দ্রুত খুলে দেওয়া হবে।
ঘটনার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা বিভাগ ব্লু জোনজুড়ে অতিরিক্ত অগ্নিনিরাপত্তা পরীক্ষা শুরু করেছে।现场 উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ দ্রুত এলাকা খালি করে। কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হলেও সবাই শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন।
COP30-এ যখন জলবায়ু ঝুঁকি, স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা চলছে, ঠিক তখনই সম্মেলনস্থলে আগুন লাগা বিশেষজ্ঞদের আলোচনার নতুন বিষয় হয়ে উঠেছে। তাদের মতে, বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অস্থায়ী প্যাভিলিয়ন নির্মাণে আরও কঠোর ফায়ার সেফটি স্ট্যান্ডার্ড জরুরি।
ফায়ার ডিপার্টমেন্ট ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্যাভিলিয়ন পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। সম্মেলনের অন্যান্য অংশ স্বাভাবিকভাবে চলছে; নেতাদের বৈঠক ও সাইড ইভেন্ট পুরোদমে চলছে।