Sunday 07 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়, আবু সাঈদের বাড়িতে উৎসবের আমেজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৩১ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ২০:২৩

জুলাই শহিদ আবু সাঈদের পরিবার নিজ উদ্যোগে গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করেন। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের নিজ গ্রাম বাবনপুরে বিকেল থেকে মিষ্টির ঘ্রাণ ছড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরপরই শহিদের পরিবার নিজ উদ্যোগে গ্রামে মিষ্টি বিতরণ শুরু করে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায়ের পর বাড়ির উঠোনে, পাড়া-প্রতিবেশী, দূর-দূরান্ত থেকে আসা আত্মীয়-স্বজন ও আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের হাতে হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে রসগোল্লা, সন্দেশ আর লাড্ডু। আনন্দের এই উৎসবে মিশে আছে চোখের জল; কারণ ছেলেকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

শহিদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী মিষ্টির প্লেট হাতে গ্রামের লোকজনের মাঝে বিলি করতে করতে বলেন, “আজকে আমরা যে মিষ্টি বিতরণ করছি, এটা আনন্দের মিষ্টি, আবার কান্নার মিষ্টিও। আবু সাঈদের রক্তের বদলা আজ প্রথম কিস্তি পাওয়া গেছে। আমরা খুশি যে বিচার হলো। কিন্তু এই আনন্দ তখনই পূর্ণ হবে যখন শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। তবেই আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।”

বিজ্ঞাপন

মেজো ভাই আবু হোসেন আবেগে ভেঙে পড়ে বলেন, “ভাইয়ের লাশ যেদিন বাড়ি এসেছিল, সেদিন গোটা গ্রাম কাঁদছিল। আজ সেই গ্রামই মিষ্টি খাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ঈদের চেয়েও বড় দিন। তবে আমরা মিষ্টি খাওয়াচ্ছি শর্তসাপেক্ষে; রায় যেন শুধু কাগজে না থাকে। পলাতকদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি দিতে হবে। না হলে এই মিষ্টি আমাদের গলায় বিষ হয়ে যাবে।”

শহিদের একমাত্র বোন সুমি খাতুন চোখ মুছে মিষ্টির প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে বলেন, “ভাইয়া আমাকে বলতো, ‘আমি যেন দেশের জন্য কিছু করতে পারি।’ সে তার জীবন দিয়ে দিল। আজ তার স্বপ্নের প্রথম বিজয় এসেছে। আমি গ্রামের বোনদের হাতে মিষ্টি তুলে দিতে দিতে বলছি; আর কোনো বোনকে যেন ভাইহারা হতে না হয়। শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকর হলেই আমার ভাইয়ার শাহাদাত পূর্ণতা পাবে।”

বাবা মকবুল হোসেন বাড়ির উঠোনে বসে মানুষের ভিড়ের মাঝে বলেন, “আমি ছেলের লাশ কোলে নিয়েছিলাম। সেই দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। আজ রায় শুনে মনে হলো, আমার আবু সাঈদ বুকের ভেতর থেকে বলছে ‘বাবা, তোমার কষ্টের কিছুটা লাঘব হলো।’ আমি গ্রামের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছি। কিন্তু আমি বলছি, এই মিষ্টি তিক্ত হয়ে যাবে যদি ফাঁসি কার্যকর না হয়। সরকারের কাছে আমার আবদার আমার ছেলের রক্তের দাম শুধু রায় নয়, ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দিতে হবে।”

আর শহিদের মা মনোয়ারা বেগমের কথা শুনে উপস্থিত সবার চোখে পানি চলে আসে। তিনি কাঁপা গলায় বলেন, “আমার বুকটা যেদিন থেকে খালি হয়েছে, সেদিন থেকে আর কখনো ভরেনি। আজ রায় শুনে মনে হলো, আমার আবু সাঈদ যেন আমার কোলে ফিরে এসেছে। আমি নিজে মিষ্টি আনিয়েছি, গ্রামের প্রতিটি ঘরে পাঠিয়েছি। কিন্তু মা হিসেবে বলছি এই মিষ্টি আমার গলায় আটকে আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনার গলায় ফাঁসির দড়ি না পড়বে, ততক্ষণ আমার ছেলে আমাকে ক্ষমা করবে না। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আমার আবু সাঈদ যেন জান্নাতে বসে দেখতে পায় তার মায়ের বুকের জ্বালা মিটেছে। আর কোনো মায়ের এমন কান্না যেন না দেখতে হয়।”

রায় ঘোষণার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত বাবনপুর গ্রাম জুড়ে চলেছে মিষ্টি বিতরণ। শহিদ আবু সাঈদের কবরের পাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে দোয়া করা হয়েছে। গ্রামের যুবকরা স্লোগান দিচ্ছে, “আবু সাঈদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না!”, “ফাঁসির রায় কার্যকর করো, করো, করো!”

শহিদের পরিবার জানিয়েছে, মিষ্টি বিতরণ চলবে আগামীকালও। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এই আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ না থাকে। পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করলেই আবু সাঈদের আত্মা শান্তি পাবে এবং গোটা গ্রামের এই মিষ্টি সত্যিকারের মধুর হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞাপন

সিএসই'র শরিয়াহ সূচক সমন্বয়
৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:১৮

আরো

সম্পর্কিত খবর