Sunday 07 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১১ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৫৩

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইল: আফ্রো, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার মেহনতি বুভুক্ষু মানুষের অধিকার আদায়ের পথিকৃৎ মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।

১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৭ নভেম্বর) বঙ্গীয় এ দ্বীপে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা ভাসানী ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়।

মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অধিকার বঞ্চিত, অবহেলিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় সংকটে জনগণের পাশে থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ ও জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

বুজুর্গ পীর মাওলানা ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও তাকে কখনো ক্ষমতার মোহ আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধে। তার সাধারণ জীবনযাপন দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য মওলানা ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলা বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার সয়া-ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা ভাসানী। তিনি ছিলেন হাজী শরাফত আলী এবং মজিরন বিবি বা মাজিরান্নেসা বিবির তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও একমাত্র জীবিত সন্তান। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোটো থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে মজিরন বিবি বা মাজিরান্নেসা বিবি ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট্ট শিশু আব্দুল হামিদ খান। তাকে ছোটবেলায় ‘চেগা মিয়া’ নামে ডাকা হতো। কারণ তার পিতা হাজী শরাফত আলী এই নামে ডাকতেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ১৮৯৩ সালে তিনি পাঁচবিবির জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদরাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে পীর সৈয়দ নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে আসাম গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭ সালে দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে আব্দুল হামিদ অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ‘স্বরাজ্য পার্টি’ গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৬ সালে আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান তিনি। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। সেখানেই সর্বপ্রথম তার নামের শেষে ‘ভাসানী’ শব্দ যুক্ত হয়।

দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাঙ্গাইলের কাগমারী নামক স্থানে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ঐতিহাসিক ‘কাগমারী’ সম্মেলনে তিনি ‘ওয়াআলাইকুম আসসালাম’ বলে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্বপাকিস্তানের সম্পর্কচ্ছেদের ইঙ্গিত দেন এবং পাকিদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ‘খামোশ’’ বলে হুঙ্কার ছাড়েন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে গঠিত প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি ছিলেন।

দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি:
মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল পৌর শহরের সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল, ভাসানী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় মাওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। এরপর ভাসানীর পরিবার, রাজনীতিক দল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মওলানা ভাসানীর মুরিদান, ভক্ত, অনুসারীরা মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাত করবেন। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার পরিবেশন করা হবে।

ভাসানী ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, ‘মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সন্তোসে ভাসানী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে (১১-১৭) নভেম্বর পর্যন্ত ৭দিন ব্যাপী ভাসানী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন আলোচনা সভা সন্তোষে মাওলানা ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গনে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।

জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল গণমাধ্যমকে জানান, মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার সকাল ১১টায় ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গনে জেলা বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিক শওকত মাহমুদ গ্রেফতার
৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর