রংপুর: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তরের রাজনৈতিক দুর্গ রংপুরে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে মাঠ। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর হারানো আসন পুনরুদ্ধারে উদ্যমী হয়ে উঠেছে বিএনপি, পাশাপাশি প্রচারে নেমেছে জামায়াতে ইসলামি ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একসময় জাতীয় পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা এই জেলায় এখন রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন রূপ নিচ্ছে।
রংপুরের ৬টি আসনেই বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপির মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
রংপুর-১
রংপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোকাররম হোসেন সুজন বলেন, “ষড়যন্ত্র ছাড়া সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি শতভাগ জিতবে।” অন্যদিকে জামায়াতের রায়হান সিরাজী মনে করেন, জামায়াতের ভিত্তি এখন আরও মজবুত, সাধারণ মানুষ তাদের পাশে আছে।
রংপুর-২
রংপুর-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার একইভাবে প্রচারে নেমেছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আর জামায়াতের প্রার্থী সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রতিদিনই সমাবেশ, উঠান বৈঠক করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা মো. আশরাফ আলীও মাঠে নেমেছেন।
রংপুর-৩
রংপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপি প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু জোহরের নামাজ শেষে কেরামতিয়া মসজিদ ও শাহ কারামত আলী (রহ.) মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু করেন নির্বাচনি যাত্রা। তার ভাষায়, “উন্নয়নহীনতার দায় আওয়ামী শাসনের। এবার ধানের শীষে ভোট দিয়ে ‘সমৃদ্ধ রংপুর’ গড়ব।” তার প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, চরমোনাইয়ের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল ও এনসিপির আলমগীর হোসেন নয়নও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লিফলেট বিলি করছেন।
রংপুর-৪
রংপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা গ্রামের পর গ্রামে ঘুরে ভোট চাইছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “১৭ বছর ধরে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে আমাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।” এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী এটিএম আজম খান একইভাবে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।
এ আসনে নতুন রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)ও প্রচারে জানান দিচ্ছে। ডাকসুর সাবেক নেতা আখতার হোসেন বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছে, এবার ভোটের মাধ্যমে রংপুরের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।” ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুহাম্মাদ জাহিদ হাসানও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত।
রংপুর-৫
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিএনপির গোলাম রব্বানী বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের ভোট কেড়ে নিয়েছিল, এবার ধানের শীষের জয় হবেই।” অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী গোলাম রব্বানীও দাবি করছেন জনগণের সমর্থন ক্রমেই তাদের দিকে ঝুঁকছে।
তিনি বলেন, “আগে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় পেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছি। তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পাবে। সুষ্ঠু নির্বাচনে জামায়াত ব্যাপক ভোটে জয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।”
রংপুর-৬
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করে প্রচারণা শুরু করেন। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয় সুনিশ্চিত।” একই আসনে জামায়াতের নুরুল আমিন এবং এনসিপির তাকিয়া জাহান চৌধুরী নারী ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে আলোচনায় এসেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রংপুর দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হলেও বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপির পুনরুত্থান প্রচেষ্টা এবার চোখে পড়ার মতো। পীরগঞ্জ, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও সদর আসনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ধানের শীষ, দাড়ি পাল্লা ও শাপলা কলি প্রতীকের প্রতিযোগিতা মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। তবে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা “বিকল্প জোটের শক্তি যাচাইয়ের লড়াই” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এখন একটাই প্রশ্ন—রংপুর কি আবার বিএনপির হাতে ফিরবে, নাকি জামায়াত-এনসিপি ছিনিয়ে নেবে?