Wednesday 24 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইন্দুরকানীতে প্রবাসীদের নামে ভিজিডি কার্ড, চাল আত্মসাৎ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৩২ | আপডেট: ২ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:২৩

বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। ছবি: সারাবাংলা

পিরোজপুর: সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র নারীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে। অভিযোগ রয়েছে, এই ইউনিয়নে প্রবাসীদের নামে কার্ড তৈরি করে তা দিয়ে চাল আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পান্না মৃধা দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী মোছা. আকলিমা বেগমকে নিয়ে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বসবাস করছেন। সেখানে তাদের একটি দোকান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার নামে রয়েছে সরকারি ভিজিডি কার্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই কার্ডের বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করছেন বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, একই গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখের মেয়ে জাকিয়া আক্তার রিমা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন, তার নামেও ভিজিডি কার্ড রয়েছে। তবে রিমার পরিবার বলছে, তারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল নিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে আকলিমা বেগমের সঙ্গে ভারতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দশ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে আছি। কোনো কার্ডের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কে বা কারা আমার নামে কার্ড করেছে তা জানি না।’

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুধু আকলিমা ও রিমা নয়—বালিপাড়া ইউনিয়নের বহু কার্ড প্রকৃত দুস্থ নারীদের পরিবর্তে অন্যদের বিতরণ করা হয়েছে। কার্ডধারীদের অনেকেই চাল পাচ্ছেন না, আবার অনেকে বিদেশে থেকেও তাদের নামে বরাদ্দের সুবিধা পাচ্ছে তাদের পরিবার।

২০২৫–২৬ অর্থবছরের ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে বালিপাড়া ইউনিয়নে ২২৬টি কার্ড অনুমোদন হয়। তালিকায় আকলিমা বেগম, মিতু আক্তার, রাশিদা বেগম ও সুরিয়া বেগমের নাম থাকলেও তারা কেউ কার্ড বা চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের আশ্রাব আলী ফরাজী বলেন, ‘আমার মেয়ের নামে কার্ড হয়েছিল, কিন্তু চেয়ারম্যান বলেছে কার্ড দেবে যদি অর্ধেক চাল ভাগ দিই। গরিব মানুষ, তাই কিছু বলিনি।’

একই গ্রামের রাশিদা বেগম বলেন, ‘কার্ড দিয়েছিল, পরে আবার নিয়ে গেছে। আমি খুব কষ্টে আছি।’

বালিপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাসির উদ্দীন সেন্টু বলেন, ‘আমি কোনো কার্ড আটকাইনি। এগুলো চেয়ারম্যানের হাতে।’

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে আরেক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। জানা যায়, ইন্দুরকানী সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জমি রেজিস্ট্রেশনের ফি’র এক শতাংশ অর্থ উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বরাদ্দ চার লাখ টাকা ইউনিয়ন পরিষদের পরিবর্তে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুলের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে।

এবিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতারা করেছেন। আমি শুধু নামের তালিকা পেয়েছি। এক শতাংশ টাকার কোনো ভাউচার বা কাজের হিসাব পরিষদে নেই।’

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘উপকারভোগী বাছাই করেছেন সচিব। টাকা পরিষদের বা চেয়ারম্যানের একাউন্টে যেকোনো একটিতে জমা হতে পারে। কিছু কাজ হয়েছে, কিছু বাকি আছে।’

এবিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান বীন মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ‘

স্থানীয়দের অভিযোগ, দরিদ্র নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা এভাবে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হবেন এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর