ঢাকা: আগামী জানুয়ারি থেকেই নতুন পে স্কেল চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরে চলতি বাজেট সংশোধনকালে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান এবং নতুন পে স্কেল কার্যকরে অধ্যাদেশ জারি করা হতে পারে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এমন আভাস দেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ সরকারের মেয়াদেই নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী বছরে নতুন পে স্কেল কার্যকর করতে হলে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই সেজন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বাজেট সংশোধন শুরু হবে ডিসেম্বরে, সেখানে নতুন পে স্কেল কার্যকর করার বিধান যুক্ত করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, আগামী নতুন বছরের শুরু থেকেই সরকার এটি কার্যকর করতে চাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে গত ২৪ জুলাই পে কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠিত এ কমিশন বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির চাকরিজীবীদের মতামত নিচ্ছে।
জানা যায়, দেশে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যুক্ত করলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখে।
বাজেট ডকুমেন্ট অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।
নতুন বেতন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নতুন পে স্কেলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া বিদ্যমান পে স্কেলের তুলনায় গড়ে কী হারে বাড়ানো হবে সেটাও চূড়ান্ত নয়। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে।
জানা যায়, বর্তমানে সর্বোচ্চ পদ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন পদ (গ্রেড-২০)-এর বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। নতুন কাঠামোতেও এ অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকতে পারে। বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা যদি কমানোও হয়, তারপরেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে একই অনুপাত বহাল রাখার সুপারিশ করবে কমিশন। এছাড়া চিকিৎসা ভাতাসহ কয়েকটি ভাতা বৃদ্ধি এবং অবসরোত্তর সময়ে বাড়তি সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করা হতে পারে। এ ছাড়া কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতাও বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত: বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন। ২০১৫ সালে ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে ১০ বছর পর স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করা হয়। বর্তমান কমিশনও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করার প্রস্তাব দিতে পারে।
অন্যান্যের মধ্যে গবেষণায় সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোতে বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হতে পারে। প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া এই ভাতা অন্য সামরিক বা বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।