টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে বাঁধন (২৫) নামের এক বখাটের বিরুদ্ধে শিমু আক্তার (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে ।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বীরপুশিয়া নয়াপাড়া গ্রামে। কিন্তু, মামলা হওয়ার ১৮ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও এখনো স্কুলছাত্রী শিমুকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিমুর পরিবার ও এলাকাবাসী।
জানা যায়, শিমু আক্তার টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বীরপুশিয়া নয়াপাড়া মো. সেলিম মিয়া ও শিরিন বেগমের মেয়ে এবং করটিয়া আবেদা খানম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্ত বাঁধন একই গ্রামের খন্দকার কামরুল ও বুলবুলি বেগমের ছেলে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি বাঁধনের বাবা-মা বাড়ি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিমুর বাবা। ঘটনায় পর শিমুর বাবা ৪ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। সদর থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ১১ সেপ্টেম্বর আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন তিনি।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা যায়, মামলার এক নম্বর আসামী বাঁধন তার সহযোগী আসামি রিমন (২৫), হৃদয় (২৭), হাসান (২২), অন্তরের (২৩) সহযোগিতা নিয়ে করটিয়া আবেদা খানম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমু আক্তারকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে শিমুকে হয়রানিও করত বাঁধন। এতে সে সাড়া না দেওয়ায় শিমুকে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন প্রধান আসামী বাঁধন।
প্রেমে রাজি না হওয়ায় শিমুকে অপহরণ করার হুমকি দিয়ে আসছিল বাঁধন। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে শিমু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে ওত পেতে থাকা আসামিরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে শিমুকে জোরপূর্বক অপহরণ করে। ঘরে ফিরতে দেরি হওয়ায় শিমুর বাবা-মা বাইরে বেরিয়ে দেখেন শিমু কোথাও নেই। তারা তখনই প্রধান আসামী বাঁধনের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে বাঁধনের মা বুলবুলি বেগম জানায়, তার ছেলে বাড়িতে নেই। এরপর অন্য আসামীদের বাড়িতে গিয়েও ওদের পাওয়া যায়নি। বাঁধনের মা বুলবুলি বেগমকে এ মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
সরেজমিন শিমুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্কুল ছাত্রী শিমুর বাবা সেলিম মিয়া ও মা শিরিন বেগম। এ সময় তারা অশ্রুজড়িত কন্ঠে জানান, ‘আমরা অভিযুক্ত বাঁধনে বাড়িতে গিয়েছিলাম। এ ঘটনার পর তার পরিবারের লোকজন বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে। বাঁধন যে আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে সেটা আমরা আরো স্পষ্টভাবে জানতে পেরেছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে। ওর পেজ থেকে আমার মেয়ের ছবি পোস্ট করা হয়েছে।’
শিমুর বাবা মো. সেলিম মিয়া জানান, ‘আমি বাদী হয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করি। মামলা করার পর থেকে বাঁধনের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে প্রায় সময় মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানা রকম হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, উল্টো আমাদের পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা গুমের মামলা দিয়েছে। ২৫ দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও আমার মেয়ের কোনো সন্ধান পাইনি। পুলিশ ও এ ব্যাপারে আমাদের কোনো প্রকার সহযোগিতা করছে না। আমার মেয়ে বেঁচে আছে, না মরে গেছে আমি বলতে পারছি না।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়েকে ফিরে পেতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন শিমুর বাবা-মা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বাঁধন ছেলেটা ভাল নয়, সে বখাটে। সে আগেও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগেও একটি মেয়ে তার ইভটিজিং শিকার হয়ে ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিমুকে উদ্ধার করে আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে জানতে প্রধান আসামি বাঁধনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ জানান, থানায় অভিাযোগ করার পরে এ এস আই হেলাল উদ্দিনকে তদন্তের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু মামলাটি আদালতে দায়ের করা হয়েছে, তাই এখন সব দায়-দায়িত্ব আদালতের। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পরবর্তীতে ডিবি-কে দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার (তদন্ত) কর্মকর্তা টাঙ্গাইল ডিবি (দক্ষিণ) এস আই নুরুজ্জামান জানান, ‘এ মামলার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। স্কুল ছাত্রী শিমু আক্তারকে উদ্ধারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ওকে উদ্ধার করতে সক্ষম হব।’