Monday 29 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাত পোহালেই জকসু নির্বাচন

আবু সুফিয়ান সরকার শুভ, জবি করেসপন্ডেন্ট
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:২৩ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:২৮

ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরান ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক নিয়ে স্ব-মহিমায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। যদিও প্রাচীন আমলে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু রূপান্তরের দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত ছিল না কোনো ছাত্রসংসদ। এবার সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন (জকসু)। রাত পোহালেই মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ কলেজ থাকাকালীন সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ থেকে ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর এবারই প্রথম কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যা জবি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ৩০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩৯ কেন্দ্রের ১৭৮টি বুথে হবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আলোচনা-সমালোচনাকে উপেক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত জবি প্রশাসন। এদিকে প্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনার। আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচন হচ্ছে। আমরা চাই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে প্রস্তুত তারা। জকসুর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধান হবে বলে আশা তাদের।

নির্বাচন উপলক্ষ্যে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবাই এনজয় করছে। প্রার্থীরা সবার কাছে যাচ্ছে, ভোট চাচ্ছে। সবাই সবাইকে সাদরে গ্রহণ করছে, কথা বলছে। খুবই ফেস্টিভ মুডে আছে। ক্যাম্পাসে সুন্দর একটা আবহ বিরাজ করছে।’

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী একেএম রাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সবাই এনজয় করছে। আশা করছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এটা পূর্ণতা পাবে।’

জাতীয় ছাত্রশক্তি-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমরা হতাশ। তাদের প্রতিটি কার্যক্রম বিতর্কিত, তাই কোনো আশা রাখছি না।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট-সমর্থিত ‘মাওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী গৌরব ভৌমিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রচারে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি। ফলে আশাবাদী। তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কিছু সংশয় আছে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

উল্লেখ্য, জকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ৮ হাজার ৪৭৯ এবং ছাত্র ভোটার ৮ হাজার ১৭০ জন। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থী ১৮৭ জন। এবার ৩৯ কেন্দ্রের ১৭৮টি বুথে ভোট হবে। প্রতি ১০০ শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ভোটগ্রহণ বুথ থাকবে। ভোট শেষে মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনা করা হবে।

জানা গেছে, ব্যালট পেপার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট চলাকালে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ টিম দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা ব্যক্ত করেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পুরো ক্যাম্পাস সার্বিক নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে। প্রতিটা বুথ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। নিরাপত্তা বিষয়ে প্রক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করে কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। সার্বিকভাবে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি, সুন্দভাবে ভোট সম্পন্ন হবে।’

ভোট প্রদানে সচেতনার জন্য তিনি বলেন, ‘ভোট প্রদান নিয়ে আমরা একটি ভিডিও তৈরি করেছি। এটা দেখে কীভাবে ভোট দিতে হবে শিক্ষার্থীরা তা জানতে পারবে। যাদের আইডি কার্ডের মেয়াদ আছে, তারা আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে আসবে। এ ছাড়া, ওয়েবসাইট থেকেও ভোটারের সিরিয়াল পাওয়া যাবে। এটা নিলেও ভোট দেওয়া যাবে।’

আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন সম্পর্কে প্রথম থেকেই টুকটাক অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। আমরা অনেকগুলো খতিয়ে দেখেছি, কথা বলেছি তাদের সঙ্গে। শেষ মুহূর্তেও দুয়েকটা অভিযোগ আসছে। আমি সবাইকে এটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার অনুরোধ করব।’

নির্বাচনে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে প্রস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল ইসলাম এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব ক্যাম্পাসের বাইরে সবসময়ের জন্য নিযুক্ত থাকবেন। সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রক্টরিয়াল টিমের ১১ জন ছাড়াও জকসু উপলক্ষ্যে ১৭ জন নিযুক্ত করা হয়েছে।’

এছাড়া তিনি আরও বলেন, ‘২০০ স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন সার্বিক সহায়তায় জন্য। সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদান শেষে শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন, সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে স্বচ্ছ একটি নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি, এবং এতে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা পেয়েছি। আশা করছি, খুব ভালো একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

নির্বাচন বন্ধে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চাপ আছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না এ ধরনের কোনো চাপ নেই। তবে, আমার কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সেগুলো আমরা দিয়েছি। নির্বাচন স্থগিতর বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি। শুধু তথ্য চাওয়া হয়েছে।’

সহযোগিতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ট্রাইং আওয়ার লেভেল বেস্ট। আমি সাংবাদিকসহ শিক্ষার্থী ও আমাদের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।’ সবশেষে তিনি নিশ্চিত করেন যে, যথাসময় নির্বাচন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর