ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার শুরুতেই তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সেখানে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ধর্ম উপদেষ্টা এএফএম খালিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং আগামীকাল এক দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে শোক বই খোলা হবে।
বিশেষ আমন্ত্রণে সভায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
মির্জা ফখরুল জানান, আগামীকাল বুধবার বাদ যোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও এর সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জানান, বেগম খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সংক্রান্ত সব বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা গভীর শোকের সময় একত্রিত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সঙ্গে আরও বহু বছর থাকেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং জাতির পক্ষ থেকে তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা প্রয়োজন, সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।’
স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন এবং আমার ও আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও অন্যদের সুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, তখন তার উপস্থিতি আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। তার চলে যাওয়া জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি।’
