Saturday 27 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশের প্রথম আধুনিক সরকারি হাসপাতাল নিনস

মেহেদী হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০০

দেশের প্রথম আধুনিক সরকারি হাসপাতাল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সস অ্যান্ড হসপিটাল (নিনস)। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য ও সুসজ্জিত চারপাশ। এ ছাড়া, পুরোভবন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাতো আছেই। প্রথমে মনে হতে পারে বিদেশি কোনো অফিস বা কোনো দর্শনীয় স্থাপনায় চলে এসেছেন। কিন্তু না, আপনি এসেছেন বাংলাদেশের একটি সরকারি হাসপাতালে। আর এটি হলো রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সস অ্যান্ড হসপিটাল (নিনস)- এর এক্সপানশন ভবন।

৫০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এক্সপানশন এই হাসপাতাল ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে সম্প্রতি। তবে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল (নিনস) প্রথম উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালে। তাই আধুনিকতার ছোঁয়ায় ৫০০ শয্যা এক্সপানশন করায় হাসপাতালটির শয্যা দাঁড়াল হাজারে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, ভেতরে প্রবেশ করতেই দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য দেখে মন জুড়িয়ে যাবে যে কারোর-ই। তিনটি বেজমেন্টসহ ১৫তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। যেটি দেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে প্রথম সংযোজন। এমনকি, সরকারি হাসপাতাল যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে তা নিনসের সম্প্রসারিত ভবনটি না দেখলে বোঝার উপায় নেই।

বর্ধিত এই হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যার বিশেষায়িত ট্রমা ইউনিট রয়েছে। যেখানে ২৪ ঘণ্টা অপারেশন থিয়েটরের সুবিধা বিদ্যমান। চারটি ওটির মধ্যে দু’টি জীবাণুমুক্ত। এছাড়া, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অস্ত্রোপচারের জন্য বিশেষ ধরনের অপারেশন থিয়েটারও রয়েছে। জার্মান প্রযুক্তির অত্যাধুনিক এই অপারেশন থিয়েটরে অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীদের ইনফেকশন ঝুঁকি থাকবে না।

এছাড়াও, হাসপাতালের নতুন এই ভবনটির এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে রোগী স্থানান্তর সুবিধার জন্য এক থেকে তিনতলা পর্যন্ত চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা রয়েছে, যা কোনো সরকারি হাসপাতালে প্রথম সংযোজন। এতে রয়েছে ৪০ শয্যার আইসিইউ, ২০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র এবং ৬২টি ভেন্টিলেটর সুবিধাসম্পন্ন বেড। হাসপাতালটিতে একটি ক্যাথল্যাব, দু’টি এমআরই ও দু’টি সিটি স্ক্যান মেশিন বসানো হয়েছে। অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন, চিকিৎসা বর্জ্য অপসারণে সলিড ওয়েস্ট ডিজপোজাল সিস্টেম এবং পৃথক অক্সিজেন প্ল্যান্টের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্নায়ুরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র উল্লেখ করে নিনস’র এক্সপানশন প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. বদরুল আলম মন্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিউরোলজি ও নিউরো সার্জিক্যাল সেবা দিয়ে যাব। আপনারা চিন্তা করতে পারেন, হঠাৎ করে এত জনবল কোথায় থেকে পাব। আমাদের কিছু প্রশিক্ষিত জনবল আছে, তাদের কাজে লাগাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা বেশিরভাগ রোগীকে আউটডোরে চিকিৎসা দিতে পারি তাহলে নতুন এই ৫০০ শয্যা দিয়ে সারা বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারব। আশা করি, প্রযুক্তিগত দিক থেকে নিনস বাংলাদেশের নিউরো সেবার একটা প্রথিতযশা ইনস্টিটিউট হবে। এখানে ট্রেনিং করার জন্য ও চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আশেপাশের দেশ থেকে মানুষ আসবে। চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশের যে বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে যায়, একসময় সেটি আর যাবে না।’

দৃষ্টিনন্দন এই হাসপাতালটির বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলের নিউরো বিভাগে পা ফেলার জায়গা নেই। সেটা নিনস‘র সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সস ও হসপিটাল সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে, সুন্দর রাখতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। আগে দূর-দূরান্ত থেকে রোগী এলে আগে ফেরত দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেটা কমে যাবে।’

নিনস’র সম্প্রারিত ভবনটির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ঢুকলাম, আমার মনে হলো- এটা বিদেশের কোনো হাসপাতাল। মানুষের আস্থা অর্জন করে সেটি ধরে রাখতে পারব বলে আশা করছি। স্বাস্থ্য সেবায় এই হাসপাতাল উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও করবে। হাসপাতালে আমরা আরও জনবল নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে রোগীরা যেন এখানে এসে হয়রানির শিকার না হয়।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিউরো সায়েন্সসের ক্ষেত্রে এই হাসপাতাল পুরো দেশের জন্য অবিভাবকের ভূমিকা পালন করবে। পুরো দেশের নিউরো সায়েন্সস ইন্টিগ্রেটেড করা এই ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৩০০ শয্যার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পর ওই ভবনেই আরও ২০০ শয্যা বাড়ানো হলেও রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। আর এই চাপ কমাতে আরও ৫০০ শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। সে সময় ৫০০ শয্যা বাড়ানোর প্রকল্প পাস হলে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর পর নানান কারণে ২১ মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। পরে নির্মাণসামগ্রী ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই প্রকল্পের ব্যয় ৪৫০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫০৬ কোটি টাকা।