আনন্দ আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে উদ্যাপিত হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’। শান্তি, মৈত্রী আর সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে যিশু খ্রিষ্টের আগমনের এই দিনটি দেশের প্রতিটি গির্জায় যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে বিশ্বশান্তি ও দেশের মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি।
নীলফামারী: সারাদেশের ন্যায় নীলফামারীতেও খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরা যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করেন।
এ উপলক্ষ্যে জেলা শহরসহ ছয়টি উপজেলায় গির্জাগুলো নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়। এ ছাড়া বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। একইসঙ্গে রাত ৭টা থেকে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে নানা আয়োজনে মধুপুরে গড়াঞ্চলে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব বড়দিন জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হয়েছে।
এদিন সকালে মধুপুরে জলছত্র খ্রিষ্ট ধর্মপল্লী চার্চে অনুষ্ঠানে যিশু খ্রিষ্টের জীবন ও তার জনকল্যাণমূলক আদর্শ তুলে ধরে আলোচনা করেন চার্চ প্রাধান পাসটার নির্জন সিম সং।
এ সঙ্গে তিনি আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সুখ ও শান্তিপূর্ণ জীবন কামনা করেন।
সমবেত প্রার্থনা শেষে যিশুর আরাধনায় সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন তারা। বড়োদিন উপলক্ষ্যে খ্রিষ্টানদের ধর্মপল্লী, উপসনালয় ও বাড়িঘর সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এ দিকে মধুপুরের মমিনপুর, জলছত্র, ইদিলপুর, পীরগাছা, সাইনামারি, ধরাটিসহ বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে চলছে পিঠা উৎসব।
এর আগে বুধবার রাতে মধুপুর গড় এলাকার জলছত্র খ্রিষ্ট দেহ ধর্মপল্লী ও পীরগাছা সেন্টপৌল ধর্ম পল্লি, উত্তর মমিনপুরসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে কেক কাটা হয়। এরপর শিশু কিশোরসহ সব বয়সি নারী পুরুষরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কীর্তন পরিবেশন করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: নানান আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপিত হচ্ছে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন।
এদিন সকালে জেলার বিভিন্ন চার্চে প্রার্থনার মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়। প্রার্থনায় দেশবাসীসহ সবার শান্তি প্রত্যাশা করা হয়। পাশাপাশি দেশের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
প্রার্থনা শেষে বড়দিন উপলক্ষ্যে চার্চ প্রাঙ্গণে কেক কাটা হয়। পরে নাচ ও গানের মাধ্যমে আনন্দে মেতে ওঠেন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা। এ সময় বড়দিন ও আগামী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানো হয় সবাইকে।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবারও তারা বড়দিন উপলক্ষ্যে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠেছেন।
রাজবাড়ী: রাজবাড়ী সাইলাস মিড ব্যাপ্টিস্ট চার্চে বর্ণাঢ্য আয়োজনে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) উদযাপিত হয়েছে।
এদিন, জেলা শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় রাজবাড়ী ব্যাপ্টিস্ট চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে কেক কেটে যিশু খ্রিস্টের শুভ জন্মদিন উদযাপন করেন অতিথি ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা।
সকালে চার্চে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। প্রার্থনায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করা হয়।
ব্যাপ্টিস্ট চার্চের যাজক জেমস হালদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার ও বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ (বিপিএম) বক্তব্য দেন।
শুভ বড়দিন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রাজবাড়ী সাইলাস মিড ব্যাপ্টিস্ট চার্চে কেক উপহার দেওয়া হয়। পরে কেক কেটে ও চকলেট বিতরণের মাধ্যমে বড় দিনের উৎসব পালন হয়।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তারিফ-উল-হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, এনডিসি মো. হাফিজুর রহমান, সদর থানার ওসি খোন্দকার জিয়াউর রহমান, চার্চের সম্পাদক রবীন দে, উইলিয়াম কর্মকার, ক্রিষ্টানো মারিও রেখা, এলেক্স, মনোজ বিশ্বাস, বেবী বিশ্বাসসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহ: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে বিভাগীয় জেলা ময়মনসিংহে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচয়ে বড় উৎসব শুভ বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে।
সকাল ৯টা থেকে সব বয়সের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা নগরীর ভাটিকাশর এলাকার ক্যাথেড্রাল গির্জা হাউজে আসেন। পরে সেখানে বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনা শুরু হয়। বড়দিনে দেশবাসীর শান্তি ও মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের ধর্মগুরু বিশপ পনেন পল কুবি।
এ ছাড়া জেলার প্রতিটি গির্জায় একই ধরনের আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে।
গির্জাগুলোতে রঙিন বাতিসহ বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন উপাসনালয়, গির্জা এবং বড় দিন উদযাপন অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।