ঢাকা: জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বক্তব্য শুনে নিজের ‘বুকের জোর বেড়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ডিসি-এসপিসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভার প্রথম সেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সচিব ও বিভাগের প্রতিনিধি, আইজিপি, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশমনার, রিটার্নিং অফিসার ও জেলাপ্রশাসক, এসপি, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাপনী বক্তব্যে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মত বিনিময় ও ব্রিফিংয়ে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন তিনি।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আজকে খুব অসম্ভব রকমভাবে আমার বুকের জোর বেড়েছে আপনাদের কথাবর্তা শুনে। আপনারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আমি আশ্বস্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছি। ইনশাহআল্লাহ, যে উদ্দেশ্যে আজকে এখানে একত্রিত হয়েছি, সেটি আমরা ডেলিভার করতে পারব।’
সিইসি বলেন, ‘কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে কাজ করবেন না; পেশাদারত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে অসম্ভব রকমভাবে বুকের জোর বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুজন ব্যক্তি আমাদের কাছে ভিভিআইপি; যদি কোনো আইন থাকতো আমি ভিভিআইপি ঘোষণা করতাম এই মুহূর্তে। একজন রিটার্নিং অফিসার, আরেকজন প্রিজাইডিং অফিসার।’
এ সময় তিনি ইসির যত সার্কুলার, পরিচালনা বিধিসহ সব আইন-বিধি, নির্দেশনা রিটার্নিং অফিসারকে ভালোভাবে পড়ে নেওয়ার পাশাপাশি প্রিজাইডিং অফিসারদের গাইড করার নির্দেশনা দেন।
আচরণবিধি প্রতিপালন, জরিমানা ও প্রতিটি ‘অ্যাকশন’ এর বিষয়ে সচনেতা বাড়াতে গণমাধ্যমের সঙ্গে ভালো সমন্বয় করে ব্যাপক প্রচারণার বিষয়ে জোর দেন সিইসি।
সোশাল মিডিয়ায় সবাই সক্রিয়, যে কোনো ধরনের অপতথ্যসহ মিথ্যা তথ্য, গুজবের তথ্য রোধের পাশাপাশি ভালো উদ্যোগের প্রচারে কার্যকর ভূমিকায় সবার সহযোগিতা চান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় পোস্টারে ছেয়ে গেছে, এটা দেখা যাচ্ছে। আপনারা যে সরাচ্ছেন, রিমুভ করছেন, সেটার কোনো খবর নেই। প্রতিটি অ্যাকশন, প্লিজ গিভ পাবলিসি। আপনার অফিসে এত লোক আছে সবাই তো সারারাত বসে ফেইসবুক ঘাটাঘাটি করে; ফ্যামিলি মেম্বারকে বলে দিন এটা দিয়ে দাও। আপনি ছেলেকে বলেন, আপনার মেয়েকে বলেন, আপনার বাসায় যারা আছে কাজের মেয়ে পর্যন্ত ফেসবুক চালায় আজকাল। সুতরাং আপনারা যে কাজটা করছেন এটার পাবলিশ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচনি তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করার বিধান রয়েছে।’ রিটারনিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের নিজ অফিসের সামনে (দায়িত্বশীলের নাম, নম্বর দিয়ে) দৃষ্টিগোচর হয় এমন অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেন তিনি।
এ ছাড়া সাম্প্রতি সময়ে একজনকে পুড়িয়ে মারা ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সম্প্রীতি বজায়, নিরাপত্তা নিশ্চিদের নির্দেশনা দেন সিইসি।
প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কমিউনাল হারমনি মাস্ট বি মেনটেইন। এটা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখতে হবে। আর বয়স্ক, ফিজিক্যালি ডিজেবল যারা আছেন তাদের কেন্দ্রে এসে যাতে ভোট দিতে পারে এই ব্যবস্থাটা করতে হবে।’
‘মাইনরিটি কমিউনিটি’র নেতারা ইসির সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন সময়ে শঙ্কার কথাও বলেছে। তবে গত পূজার সময় নির্বিঘ্ন ও শঙ্কাহীনভাবে পূজা হওয়ায় সন্তোষ রয়েছে ইসির।
ভোটের সময় সংখ্যালঘুদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘দূর্গাপূজা ও ইলেকশনের তাদের ভয়ের কথা বলেছে। মাইনরিটি কমিউনিটি’র নেতারা বলেছেন- দুর্গাপূজা আসলে আমাদের ওপরে আক্রমণ হয়, মূর্তি ভাঙ্গা হয়; তবে এবারের মত সুন্দর করে পূজা উদযাপন আমরা জীবনে করতে পারি নাই। আমি বলেছি, ইলেকশনও ইনশাল্লাহ এ রকম হবে।’