Wednesday 10 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত সাড়ে ৪৯ লাখ মানুষ: আইওএম

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৩২

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের (আইডিপি) সঠিক সংখ্যা জানতে এই প্রথমবারের মতো সারাদেশজুড়ে বিস্তারিত গণনা সম্পন্ন করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) (জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা)। সংস্থাটির প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৭ জন মানুষ দেশের ভেতরে নিজেদের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে আইওএম। নতুন এই তথ্যপ্রকাশ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনসহ নানামুখী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার একটি সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।

বিজ্ঞাপন

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ে ২৯ হাজারের বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যদাতা (কী-ইনফরম্যান্ট) সাক্ষাৎকার এবং ৫ হাজার ৩৮৮টি মাঠ পরিদর্শন সম্পন্ন হয়, যা বাংলাদেশে এই ধরনের গবেষণার মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ।

বাংলাদেশে প্রতি বছর নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত দুর্যোগজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির কোনো যাচাইকৃত জাতীয় পরিসংখ্যান ছিল না। এই তথ্যের ঘাটতি পূরণে আইওএম দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪ হাজার ৫৭৯টি ইউনিয়ন, ৩২৯টি পৌরসভা এবং ৪৮০টি সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ডজুড়ে এই ব্যাপক গণনা পরিচালনা করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান ল্যান্স বোনো বলেন, “বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা জানা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ফলাফল জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আরও সুসংগঠিত পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।

এই গণনায় জানা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ (৬৩ শতাংশ) ২০২০ সালের এপ্রিলের আগেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা দীর্ঘস্থায়ী ও অমীমাংসিত বাস্তুচ্যুতিরই প্রতিফলন। এক-চতুর্থাংশ (২৫ শতাংশ) ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ (১২.১ লাখ) রয়েছেন, এরপর ঢাকা বিভাগে ৭.৯ লাখ এবং রাজশাহী বিভাগে ৬.৬ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছেন। মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের এক-চতুর্থাংশই রয়েছে্ন চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ভোলা ও নোয়াখালী এই চারটি জেলায়। অধিকাংশ বাস্তুচ্যুত মানুষ (৮৫ শতাংশ) গ্রামীণ ইউনিয়ন এলাকায় বসবাস করেন।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা এই গণনাটিকে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনার জাতীয় কৌশলের বাস্তবায়নকে আরও শক্তিশালী করার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে স্বাগত জানান। এই কৌশলে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর নিয়মিত ও কাঠামোগত তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আবদুল ওয়াদুদ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ সাইফুল্লাহ; এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ইভা আতানাসোভা অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে গণনা পদ্ধতি নিয়ে উপস্থাপনা, প্রতিবেদন উন্মোচন এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির তথ্য সরকারি ডেটা ব্যবস্থায় কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় সে বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা।

উদ্যোগটির সহায়তাকারীরা বাংলাদেশকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির এই প্রথম জাতীয় গণনা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি দুর্যোগ প্রস্তুতি, পুনর্বাসন পরিকল্পনা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু অভিযোজন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় নীতিনির্ধারকদের আরও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর