ঢাকা: বাংলাদেশের ওষুধশিল্পকে কৌশলগতভাবে রূপান্তর এবং জাতীয় স্বাস্থ্য–নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) নীতি দ্রুত বাস্তবায়ন এবং এর ওপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে এ নীতিকে ‘জাতীয় স্বার্থে শীর্ষ অগ্রাধিকার’ হিসেবে বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে সই করেন—এএইচআরবির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশে এখন প্রায় সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন সম্ভব হলেও এপিআইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমদানি–নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে দেশের উৎপাদনব্যবস্থা ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য–নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। করোনা মহামারির সময় যা আরও স্পষ্ট হয়। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের মূল্যায়ন তুলে ধরে বলা হয়, এপিআই, ভ্যাকসিন, আইভিডি ও চিকিৎসা–সরঞ্জাম উৎপাদনে দেশীয় সক্ষমতা দ্রুত বাড়াতে হবে। এর জন্য আর অ্যান্ড ডি–তে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, প্রণোদনা দেওয়া এবং স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হওয়ার পর ধাপে ধাপে আমদানি সীমিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি বাস্তবায়নকে চিঠিতে “ঐতিহাসিক সফলতা” বলে উল্লেখ করা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গীকার, কঠোর তদারকি ও শক্তিশালী নেতৃত্ব সে সময় দেশের ওষুধশিল্পে আমূল পরিবর্তন এনেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্ঞানভিত্তিক শিল্পে রূপান্তর না ঘটলে দেশের ট্যাক্স–জিডিপি অনুপাত ৭ শতাংশের নিচেই থাকবে। ফার্মাসিউটিক্যাল খাত সে রূপান্তরের বড় সুযোগ তৈরি করতে পারে। ভারতে যেখানে মোট রপ্তানির ৫ শতাংশ আসে ওষুধশিল্প থেকে, বাংলাদেশে তা এখনো মাত্র ০.৫ শতাংশ।
এপিআই নীতি বাস্তবায়নে জরুরি পাঁচটি পদক্ষেপ চিঠিতে তুলে ধরা হয়—
১) প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত বাধা দূর করা
২) আকর্ষণীয় প্রোডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম চালু করা
৩) আর অ্যান্ড ডি–তে ধারাবাহিক সরকারি অনুদান
৪) অ্যাকাডেমিয়া–ইন্ডাস্ট্রি সহযোগিতা শক্তিশালী করা
৫) নির্দিষ্ট সময়সীমায় বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ নীতি স্বাভাবিকভাবে আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে দ্রুত অগ্রসর হবে না। তাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও সক্রিয় তদারকি জরুরি। প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার সরাসরি নজরদারি নিশ্চিত হলে এ নীতি আর কাগজে আটকে থাকবে না—আমদানি নির্ভরতা কমবে, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, রফতানি বৃদ্ধি পাবে, দক্ষ কর্মসংস্থান বাড়বে এবং ট্যাক্স–জিডিপি অনুপাতও উন্নত হবে।