Saturday 27 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রংপুর চিড়িয়াখানায় রোমিও–জুলিয়েটের ঘরে রাজা ও রানির আগমন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:২১

রংপুর চিড়িয়াখানা ও বিনোদন উদ্যানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রোমিও ও জুলিয়েটের ঘরে জন্ম নিয়েছে দুটি শাবক।

রংপুর: রংপুর চিড়িয়াখানা ও বিনোদন উদ্যানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রোমিও ও জুলিয়েটের ঘরে জন্ম নিয়েছে দুটি শাবক। তিন মাস আগে জন্ম নেওয়া এই শাবকদের নাম রাখা হয়েছে ‘রাজা’ ও ‘রানি’। গত মঙ্গলবার থেকে দর্শনার্থীদের জন্য শাবক দুটিকে উন্মুক্ত করা হলে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতের মৌসুম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী নতুন অতিথিদের দেখতে চিড়িয়াখানায় ভিড় করছেন।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, জন্মের পর থেকেই শাবক দুটির বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। মা জুলিয়েটের সঙ্গে আলাদা খাঁচায় রেখে তাদের লালন-পালন করা হয়েছে, যাতে তারা নির্বিঘ্নে মায়ের দুধ পান করতে পারে। নিরাপত্তার কারণে বাবা রোমিওকে পৃথক খাঁচায় রাখা হয়। তিন মাসের নিবিড় পরিচর্যার পর মঙ্গলবার থেকে শাবক দুটিকে মায়ের সঙ্গে দর্শনার্থীদের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

চিড়িয়াখানার পশুচিকিৎসক ডা. শাহাদত হোসেন জানান, এর আগে দুবার জুলিয়েট গর্ভবতী হলেও মিসক্যারেজের কারণে শাবক নষ্ট হয়ে যায়। এবার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিশেষ যত্নের ফলে সফলভাবে দুটি শাবকের জন্ম সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শাবক দুটির স্বাস্থ্য ভালো রয়েছে। তারা মায়ের সঙ্গে খেলাধুলা করছে এবং ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।’

দর্শনার্থীদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। পীরগঞ্জ উপজেলার নখারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাসুদা রহমা পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসেন। তিনি বলেন, ‘বাঘের শাবক দেখা সত্যিই আনন্দের। আমার ছেলে খুব খুশি।’

রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা গৃহবধূ সুমি বেগম বলেন, ‘বড় বাঘ তো প্রায়ই দেখি, কিন্তু শাবক প্রথমবার দেখলাম। সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। আমরা চাই, শাবকগুলো এখানেই থাকুক।’

চিড়িয়াখানার কেয়ারটেকার সামসুল জানান, জন্মের পর থেকেই শাবকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। মা জুলিয়েট সারাক্ষণ শাবকদের আগলে রাখছে। কখনো পানি পান করছে, আবার কখনো শাবকদের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠছে।

চিড়িয়াখানার ইজারাদার হজরত আলী বলেন, ‘শীত উপেক্ষা করেও দর্শনার্থীরা আসছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভিড় আরও বেড়েছে। জানুয়ারির শুরুতে স্কুল খুললে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

উল্লেখ্য, রংপুর চিড়িয়াখানা ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯১ সালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২১.৫১ একর আয়তনের এই চিড়িয়াখানা উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানা। বর্তমানে এখানে ২৭ প্রজাতির প্রায় আড়াইশ প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, গন্ডার, জলহস্তী, হরিণ, চিতাবাঘ, ভালুক, কুমির ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উল্লেখযোগ্য।

প্রাণী গবেষকদের মতে, এই শাবকদের জন্ম বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেশের জাতীয় প্রাণী হলেও এটি বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতি। চিড়িয়াখানার ক্যাপটিভ ব্রিডিং কর্মসূচির মাধ্যমে এমন জন্ম সংরক্ষণ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর