Thursday 25 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুবদল নেতা রাশেদ হত্যার নির্দেশদাতার বিচার চায় পরিবার

স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:২৬ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:২৭

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির ও নিহত যুবদল নেতা রাশেদ

ঢাকা: বগুড়ার আলোচিত যুবদল নেতা রাশেদ হত্যাকাণ্ডের ১০ মাস পেরালেও হত্যাকারী ও নির্দেশদাতারা স্বদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে রাশেদের পরিবারের।

সম্প্রতি সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে রাশেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি হান্নান বাটালু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মাজেদুর রহমান জুয়েলের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। সেই ফোনালাপে বাটলু দাবি করেন, সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকিরের নির্দেশে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। এরপরই জাকিরের বিষয় তদন্ত করার দাবি করছে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার।

ভাইরাল হওয়া ফোনালাপে প্রধান আসামি হান্নান বাটলু সাবেক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জুয়েলকে বলেন, ‘আমি জাকির ভাইকে (সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি) অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। উনি আমাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। শুধু স্ট্রোক করা বাকি ছিল। তারপর বাধ্য হয়ে আমি রাশেদের দুর্ঘটনা (রাশেদ হত্যা) ঘটাইছি।’

বিজ্ঞাপন

তবে সেই ফোনালাপটি ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হলে হান্নান বাটালু সেই অডিও রেকর্ড মিথ্যা দাবি করে একটি প্রেস কনফারেন্সও করেন। সেই ফোনালাপের অপরপ্রান্তে যুক্ত থাকা বগুড়া জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েল বাটালুর সেই দাবিকে মিথ্যা বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘রাশেদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাকির ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ের হান্নান বাটলুর সাথের কথোপথনের বিষয়টি সত্য। বাটালু আমার সঙ্গে এসব কথা বলেছেন।’ সেখানে এই হত্যাকাণ্ডটি সরাসরি জাকিরের নির্দেশেই তিনি সংঘটিত করেছেন বলে স্বীকার করেছেন বলেও জানান জুয়েল।

এরইমধ্যে গত নভেম্বর মাসে মামলার চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে সেখান থেকে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ৮ জন আসামিকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে রাশেদের পরিবার।

রাশেদের চাচা জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সেই চার্জশিটের ওপর নারাজি দিয়েছি। ফলে মামলাটি পিবিআইয়ে পাঠানো হয়েছে পুনঃতদন্তের জন্য।’ আসামিদের বাদ দেওয়া ও হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ব্যক্তিদের আড়ালের ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দোষারোপ করেন তিনি।

তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাতলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মামলায় কারও প্রভাবে তদন্ত করা হয়নি।’ তবে জাকিরের বিষয়ে তদন্ত বা ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডের বিষয়ে তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

এদিকে, অভিযুক্ত সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির রাশেদ হত্যা মামলার সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাশেদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি শুনেছি অনেক পরে। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।’

বাটালুর ফোন আলাপটি এডিটেড বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ফোনালাপের বিষয়টি নিয়ে বাটালু তো সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারপরও কেন সেটা নিয়ে কথা বলছেন।‘

বাটালু তার অনুসারী নয় দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘খুনিদের সঙ্গে আমার কোনো সখ্যতা নেই।’ তাদের বিরুদ্ধে এখনো কেন কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি জাকির।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে জাকিরের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপি ও থানা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাকির সরাসরি যুক্ত। তার নির্দেশেই বাটালুরা রাশেদের হত্যাকাণ্ডের সাহস পায়।’

বাটালুদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জাকির বাধা দিয়েছে বলেও তারা জানান। তারা বলেন, ‘জাকির সভাপতি হওয়ার পর থেকে সোনাতরা থানা বিএনপি তার কুক্ষিগত করে রেখেছে। এখানে তার বিরোধিতা করলে তার আর বিএনপি করা হয়ে ওঠে না।‘ গেল স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে স্থানীয় এমপির বিশেষ সহায়তায় জাকির বিরোধী বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে তিনি নিজেই মামলা দিয়ে আসতেন বলেও অভিযোগ তাদের। একইসঙ্গে জাকিরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক তদন্ত ও রাশেদ হত্যাকাণ্ডে জাকিরকে তদন্তের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার সোনাতলায় বিএনপি নেতা হান্নান বাটালু ও তার লোকজনের হামলায় যুবদল নেতা রাশেদুল হাসান (২৭) মারা গেছেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

তারা অভিযোগ করে জানান, ‘গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পাকুল্লা বাজারে রাশেদুলের ওপর হামলা করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হান্নান বাটালু ও তার লোকজন। হান্নান বাটালু সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেনের অনুসারী। পাকুল্লা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে এলাকাবাসী তিন পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এক পক্ষের নেতৃত্ব ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হান্নান।’

সারাবাংলা/কেকে/এইচআই
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর