কুমিল্লা: কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ইতিহাসে ১২ ডিসেম্বর চিরস্মরণীয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত হয় পুরো চান্দিনা। দীর্ঘ ৯ মাসের দুঃসহ নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার বিভীষিকার পর এই দিনটি এনে দেয় মুক্তির আনন্দ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনী প্রায়ই চান্দিনার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালাত। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান না পেলে গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিত। ১২ ডিসেম্বর পাকবাহিনী মাইজখার ইউনিয়নের ফাঐ করতলা এলাকায় পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দ্রুতই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে মিত্রবাহিনী ও পাকবাহিনীর সম্মুখ সংঘর্ষে।
এই তুমুল যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে শহিদ হন মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমদ, ইউপিআর সদস্য কাজী আব্দুল লতিফসহ মোট ৩ মুক্তিযোদ্ধা এবং আরও ৩ জন বীর জনতা। তাদের আত্মত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে আরও দৃঢ় হয় জনতার প্রতিরোধ।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাক হানাদার বাহিনীর গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তেজিত জনতার আক্রমণে বহু পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। একই দিনে চান্দিনার হারং উদালিয়ারপাড় ও এতবারপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের সম্মুখ যুদ্ধে পরিস্থিতি তীব্র হয়। অবশেষে প্রায় ১১০০-১৫০০ পাক সৈন্য মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
১২ ডিসেম্বরের এই মহান বিজয়ের মধ্য দিয়ে হানাদারমুক্ত হয় চান্দিনা উপজেলা এবং জন্ম নেয় গৌরবময় স্বাধীনতার নতুন ভোর।