Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৌতাতভঙ্গ

নভেরা হোসেন
১৬ জুন ২০২৪ ১৭:৫৩
আর এভাবেই দিন চলে যায়
যেতে থাকে
রাত্রির নিকষতা আঙুরলতার মতো
মনকে পেঁচিয়ে ধরে,
বাঁধন খুলে সে ভারমুক্ত হতে চায়
কিন্তু রাশি রাশি মৃত্যুর ছায়া
পেছনে তাড়া করে ফেরে,
সহস্র রাত্রির নীরবতা
প্রচ- ঝড় হয়ে ভেঙে ফেলে
সকল অর্থহীনতাকে।
আকাশে কালো মেঘ। এক ঝাঁক কাক উড়ে গেল মাথার ওপর দিয়ে। প্রাচীন পক্ষীকুল ফিরে ফিরে আসে লোকালয়ে। উঠানে পা ফেলার জায়গা নেই, থকথকে কাদা। কাদায় সয়লাব হয়ে আছে চরাচর। আর পুরোটাই কি ঘন সন্নিবদ্ধ কবর? সকালের ঘন বর্ষণে দ্বিজয়িতার মনের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। মন থেকে সরিয়ে দিতে পারছে না চিকন তারের মতো গলায় বিঁধে থাকা স্মৃতিগুলো। আর স্মৃতিই বা কেন; সে এইসব মানুষ, ঘটনাপুঞ্জ, সারিবদ্ধ ঝাউবন, সারসের উচ্চকিত কণ্ঠস্বর, গ্রেভইয়ার্ডের নৈঃশব্দ্য সবকিছুর মধ্যে ডুবে আছে, উন্মগ্ন হয়ে আছে। দ্বিজয়িতার ঘোর কিছুটা কাটল বাসের দুলুনিতে। শরতের আকাশের মতো জলে ডোবা চাঁদের আলোয় প্রকৃতিতে আলো-ছায়া তৈরি হয়েছে। সঙ্গে অভিজিৎ, সৈকত অসাড় হয়ে ঘুমাচ্ছে। অভিজিতের ভাঙা চোয়ালের ওপর চোখ পড়তেই দ্বিজয়িতার শীত শীত লাগল। বৃষ্টিতে চারপাশ ছেয়ে আছে। জানালা দিয়ে ঘন বৃষ্টির ঝাপসা অবয়ব ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। সবুজাভ বৃক্ষের অস্পষ্ট রেখা চকিতে ভেসে উঠছে বাসের জানালায়।
কি দ্বিজয়িতা খাবি নাকি?
কী?
চকলেট।
মানে!
তুমি বাসের মধ্যে ধূম্র উদগীরণ করবে?
সো হোয়াট শ্রাগ করে বলল অভিজিৎ।
অভিজিতের আচরণে সবসময় এই উন্নাসিক ব্যাপারটা থাকে। দ্বিজয়িতা নিজের ক্ষেত্রে এই উন্নাসিকতাকে প্রশ্রয় দেয় কিন্তু অভিজিতের বেলায় সহ্য করতে পারে না।
না, আমি না আর তুমিও না। এখানে নয়।
কেন? তোর ভয় করছে নাকি?
ভয়? নাহ্। আই ডোন্ট লাইক টু স্মোক ইন এ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। তার ওপরে এই জিনিস!
অভিজিৎ বেসুরো গলায় ধন ধন্যে গাইতে শুরু করলে দ্বিজয়িতা তলস্তয়ের শয়তান খুলে পড়তে শুরু করল। সৈকত বাসে ওঠার পর সেই যে চুপ মেরে আছে কোনো সাড়াশব্দ নাই। উত্তরবঙ্গের পথে দ্বিজয়িতার এটা প্রথম ভ্রমণ নয় কিন্তু এখনকার সাথে আগের কোনো মিল নেই, তখন ছিল মনে নির্মল আনন্দ, উচ্ছ্বাস। সবকিছুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দেখার সুখ। বন্ধু, বন্ধু আর সে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক আত্মার সাথে আত্মার। একজনের থেকে অন্যজন আলাদা কেউ নয়। দ্বিজয়িতাও যে সজলও সে, অভিজিৎও সে- সকলে একই, একজন। ঘুম থেকে জেগে একজন অন্যজনের কথা ভাবছে, টাকা-পয়সা যা আছে সব নিয়ে সোজা শাহ্বাগ। দোকানগুলো তখনও বন্ধ, একটা দুটো খুলেছে কী খোলে নি, কিন্তু সবাই এত পরিচিত যে কেউ তেমন একটা কিছু ভাবে না। চেহারার দিকে তাকালে কোনো ভাবান্তর হয় না। তবু দু-একজন উটকো লোক এসে জানতে চায়—আপা কাউকে খুঁজছেন অথবা সে যে কেন এলো না কিছু ভালো লাগে না টাইপ গান ছুঁড়ে দিয়ে চলে যায়। বেশিরভাগ সময়ই দ্বিজয়িতা না দেখার ভান করে কিন্তু মেজাজ চড়ে থাকলে বলে ফেলে, কেন আপনাকেই তো খুঁজছি, চিনতে পারছেন না, লোকজন হতবিহ্বল হয়ে চলে যায়। দ্বিজয়িতাও মাঝে মাঝে ঝিমিয়ে পড়ে তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মার্কেটের তিনতলার সিঁড়িতে বসে থাকে, অনেকেই আসে যায়, সিঁড়ি ঘরের বন্ধুরা, প্রাণের বন্ধুরা কিন্তু দ্বিজয়িতার কোনো হুঁশ নেই। ডিসেম্বরের দুপুরে গায়ের কালো কোটটা টেনেটুনে বসে সে। সেবার ঢাকায় হাড়-কাঁপানো শীত পড়েছিল, সূর্যের আলো দেখা যায় নি প্রায় পাঁচদিন। জানালার কাচ গলে শীতল জল গড়িয়ে পড়ে ঘরের মেঝেতে। এক ফোঁটা ঠা-া জল জানালার কাচ চুঁইয়ে দ্বিজয়িতার গালে এসে লাগে, তখন একটা ভাবালুতায় আচ্ছন্ন হয় সে। দু-পাশের সারিবদ্ধ ঘন কালো বৃক্ষের সারি, বৃষ্টির উন্মাতাল ছন্দ, বাসের একটানা দুলুনি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
দিনাজপুর বাস স্টপেজে বাস এসে থামল খুব ভোরে। স্টপেজে অল্পকিছু লোকের আনাগোনা। চা বিক্রেতারা সবে চুলায় চায়ের জল চাপিয়েছে। কেরোসিনের স্টোভ থেকে ধোঁয়ার গন্ধ এসে নাকে লাগে, কেমন একটা কাপড় পোড়া ঘ্রাণ। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে সৈকত এসে জানতে চাইল কি প্রিন্সেস অব ওয়েলস চা চলবে? চিনি ক-চামচ? দ্বিজয়িতা মাথা নাড়তেই সৈকত তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তড়িঘড়ি করে দুহাতে দুকাপ চা নিয়ে এলো। গরম ধোঁয়া ওঠা চা বৃষ্টির কাকভোরে। দ্বিজয়িতার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে রাতের ক্লান্তিতে, শহরটা ছিমছাম। বড় রাস্তা ধরে পলাশবাড়ি মোড়ে যেতে যেতে দু-একটা রিকশা দেখা গেল রাস্তায়। সারারাত বৃষ্টির পর উত্তরের এই মফস্বল শহরটা শিশিরভেজা শিউলির মতো কোমল হয়ে আছে। ছুঁয়ে দিলেই টুপ করে ঝরে পড়বে। এ সজীবতা, বাতাসের তাজা গন্ধ সব ভীষণ নতুন লাগছে।
অচেনা শহরে যেতে দ্বিজয়িতার বরাবরই ভালো লাগে। এ আকস্মিক ভ্রমণের পরিকল্পনা সজলের। সজল চলচ্চিত্রের প্রচারণার কাজ করছে; ঢাকা শহর থেকে মফস্বলে, গ্রামে-গঞ্জে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সিনেমা প্রদর্শন, কোথাও টাকা নিয়ে কোথাও ফ্রি। দর্শকের জিভে ভিন্নধারার চলচ্চিত্রের স্বাদ ধরিয়ে দেয়ার চিন্তা। পরে ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডির ব্যবসা।
পলাশবাড়িতে সজলদের গেটের সামনে রিকশা থামলে ভেতরে গোলাপের বেশ বড়সড় একটা বাগান দেখা গেল। সাদা ফুলে ছেয়ে আছে বাগান।
গেটে অনেকক্ষণ ধরে খুটখুট শব্দ করলে সজলের মা এসে গেট খুলে দিলেন। কাকে চাই? বেশ রাগত গলা।
সজল আছে? সৈকত খুব স্মার্টলি বলল, ওই আমাদের আসতে বলেছিল।
দ্বিজয়িতার দিকে তাকিয়ে সজলের মা চরম বিরক্তি নিয়ে জানতে চাইল, ও তোমাদের সাথে এসেছে নাকি?
দ্বিজয়িতা সজলের মার কথা শুনে লাল হয়ে উঠল। আমি দ্বিজয়িতা, সজলের বন্ধু।
ও তুমিই! ভদ্রমহিলা গট গট করে ভেতরে চলে গেলেন।
বেশ কিছুক্ষণ প্রায় দশ মিনিট পর সজল ঘুম জড়ানো চোখে এসে জানতে চাইলÑআম্মা গেট খুলছে? ওহ! আয় ভিতরে আয়।
অনেকটা বাধ্য হয়েই যেন সজল ওদেরকে নিয়ে বাগানের পথ পেরিয়ে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। নাকে কামিনীর একটা কড়া ঘ্রাণ এসে লাগল। সজলের ছোট কামরায় সাবেকি আমলের ফ্যান চলছে ঘট ঘট করে। বিকট শব্দ। সজল চা আর বিস্কিট দিল।
সজলের মা সেই যে কুলুপ এঁটেছেন মুখে, রা নাই। সবার অস্বস্তি হলো, এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না বোঝা গেল। তারপর চারজন দু-রিকশায় চেপে জামিল ভাইয়ের বাসায়, এখানে থাকাই ঠিক হলো। জামিল ভাইয়ের বউ ইভা আপাকে দ্বিজয়িতার খুব ভালো লাগল, মেরুদ-টা কেমন খাড়া করে হাঁটেন, কথাবার্তায়ও চটপটে।
তুমি হুট করে চলে আসলে ওদের সাথে, বাসায় চিন্তা করবে না?
নাহ্। চিন্তা, ওরা তো জানেই না এখানে এসেছি। হলের কথা বলে এসেছি। খুব অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে খোঁজ করবে না।
জামিল ভাই বলল, অভিজিৎ আমার দোকানে কিন্তু ভালো শতরঞ্জি আছে, দেখবা? আলবত। আমি আগেই একটা বুক করলাম বাকিতে।
হা … হা … হা … সবাই একত্রে হেসে উঠল।
ইভা আপা প্রচ- ঝাল দিয়ে মুরগি রান্না করলেন। সবার চোখ দিয়ে পানি-টানি বেরিয়ে বিচ্ছিরি অবস্থা। কিন্তু খেতে অসাধারণ। সাথে লেবু বলে যেটা দিলেন ছোট বাতাবি লেবু হবে। তার টক স্বাদ মাংসের সাথে আরও ভালো লাগল। খেয়েই দৌড়; পাবলিক লাইব্রেরিতে তিনটায় শো। সজল ক্যামেরা এনে দ্বিজয়িতার হাতে ধরিয়ে দিল কিন্তু ইলেকট্রিসিটি নাই। গরমে দর্শকরা সিদ্ধ হচ্ছে। বৃষ্টির পরের ভ্যাপসা গরম। অভিজিৎ তিরিক্ষি চেহারা করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। সেইসাথে ইলেকট্রিসিটিও এলো, দরজা সব বন্ধ হয়ে গেল। ঘরের ভেতর পিনপতন নিস্তব্ধতা, প্র্রজেক্টর অন। ১৯৭১। পর্দায় ভেসে উঠল পানির ভেতর ভেসে থাকা গলিত লাশ; যুবক, শিশু, নারী সব একত্রে জড়াজড়ি করে আছে, যেন শিল্পীর হাতে গড়া নিপুণ ভাস্কর্য। দ্বিজয়িতা টানা আধা ঘণ্টা দেখে বাইরে চলে আসল। সৈকত, অভিজিৎ, জামিল ভাই, আরিফ সব বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
জামিল ভাই বলল, চল তিনতলায় একটা ঘর আছে। সব ধুপধাপ করে লালরঙা সিঁড়ি মাড়িয়ে তিনতলার অফিস ঘরে। সবুজ রঙের অয়েলক্লথ দিয়ে ঢাকা টেবিল, বাঘের পাওয়ালা চেয়ার সব স্থির অপেক্ষমাণ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল ধূমপান। অভিজিৎ কুটকুট করে ছোট কাঁচি দিয়ে এরিনমোর কেটে ক্যানাবিসের সাথে মিশিয়ে নিল, জিভ দিয়ে আঠা লাগিয়ে তৈরি করল পুরিয়া। দ্বিজয়িতা এখন এসবে এত অভ্যস্ত যে অনেকসময়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
পাবলিক লাইব্রেরির ঝামেলা শেষ করে সব চলল জামিল ভাইয়ের দোকানে। সেখানে স্থানীয় রাজবংশীদের বোনা শতরঞ্জি সবাইকে অবাক করে দিল। অভিজিৎ গোঁ ধরল লালডোরা বাদামি রঙের একটা শতরঞ্জি নেয়ার জন্য।
সন্ধ্যায় জমিদার বাড়ি; জীবন্ত ভাস্কর্য। দূর হতে মনে হচ্ছে ক্যানভাসের ওপর জলরঙে আঁকা এক রাজমহল। প্রধান ফটকের কাছে ভেনাস ডি মিলোর ভাস্কর্যটি দ্বিজয়িতাকে আশ্চর্য করে দিল। জমিদার বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে কেয়ারটেকার ছাদে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার; কাঠের মচমচ শব্দ, কিছু দেখা যাচ্ছে না। অভিজিৎ ফস করে একটা ম্যাচের কাঠি ধরালে চোখে পড়ল দেয়ালে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ সাজানো, চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে, বাম পাশে বাঈজির নাচের মুদ্রার পেন্টিং, আবার অন্ধকার। দ্বিজয়িতা সৈকতের হাত ধরে উঠছিল, হঠাৎ ডান পা সিঁড়ির কাঠের মধ্যকার ফাঁকা জায়গায় ঢুকে গেল। অন্ধকারে দ্বিজয়িতার মনে হলো অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। পুরনো আমলের জমিদার বাড়ির অন্ধকারে সবসময় একটা নৃশংসতা লুকিয়ে থাকে। হা করা গহ্বর সকলকে টেনে নিতে চায়। সৈকত দ্বিজয়িতার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখল।
সিঁড়ি দিয়ে চারতলার উপরে ওঠার পর শুরু হলো প্যাঁচানো লোহার সিঁড়ি, তা আবার স্থানে স্থানে তারকাঁটা বিছানো, অন্ধকারে ওঠাটা খুব রিস্কি হয়ে গেল। অভিজিৎ ঘোষণা করল ছাদের নাচঘরে যাবে না।
শেষে কোনোমতে ছাদে পৌঁছাতেই অদ্ভুত শিহরণ জাগানো একটা ঠা-া বাতাস বয়ে গেল। বিশাল ছাদ, চাঁদের আলোতে আলো-আঁধারি পরিবেশ, ছাদে না এলে বোঝা যেত না কত বড় বাড়িটা। মাঝখানে পানির ফোয়ারা, নারীদেহের আবক্ষ মূর্তি। আর পুরো ছাদ জুড়ে নৃত্যরতা সেবাদাসীদের ভাস্কর্য।
হঠাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। সব দৌড়ে নাচঘরে। গোলাকৃতি ঘর, দেয়াল কাচ দিয়ে ঘেরা, কাচের ওপর কারুকাজ করা অন্ধকারে ঠিক বোঝা গেল না। অভিজিৎ ম্যাচের কাঠি জ্বালাতেই অপূর্ব কারুকার্যময় নাচঘরটা দেখা গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। তারপর কাঠির আগায় আগুন জ্বলতে শুরু করল।
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি, কাচের দেয়ালের মাঝখানে মাঝখানে ভাঙা, সেখান দিয়ে বৃষ্টির পানি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। কত রাত হলো? ধোঁয়ায় নাচঘরটা ভরে গেল। কখনো কখনো সময় থেমে যায়, এক মুহূর্ত ঘণ্টায় পরিণত হয়।
সবার ঘোর কাটল কেয়ারটেকারের ডাকে। সে টর্চ লাইট হাতে ছাদে এসেছে। আপনারা নামবেন না? বৃষ্টি কমছে, বাড়ি যাব, অনেক রাত হলো, শেষে রিকশা পাবেন না।
সজল বলল, তাড়াতাড়ি চল।
ওঠাটা যত কষ্টের ছিল, নামাটা তেমন হলো না। কেয়ারটেকারের টর্চের আলোতে আর ফেরার তাড়ায় সব দ্রুত শেষ হয়ে গেল। ফেরার পথে রাস্তার দুপাশে গাছের সারিকে ঘন অন্ধকারে আরও কালো লাগছিল। সারা পথে জোনাকির আলো। বৃষ্টির পর সব ঝাঁকে ঝাঁকে নেমেছে। অভিজিৎ, সৈকত, দ্বিজয়িতা জামিল ভাইয়ের বাসায় থাকল। রাতেও শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। জুলাই মাসের বৃষ্টিতে মনে হচ্ছে চরাচর ভেসে যাবে।
মফস্বলের ভোর। দু-একটা পাখির কিচিরমিচির। দ্বিজয়িতারা তিনজনই বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠল। গরম গরম চালের রুটি আর মুরগিভুনা দিয়ে নাশতা। সকাল থেকেই যোগাড়-যন্ত্র, সব হুড়াহুড়ি করে বেড়িয়ে পড়ল। বারোটায় শো পাবলিক লাইব্রেরিতে। আজও বেশ লোক সমাগম। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরা এসেছে বেশি। দ্বিজয়িতা, অভিজিৎ, সৈকত সব পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে বসে আছে বৃষ্টিভেজা ঘাসে। কামু নামে এক ছেলে এসে বলল, সব সজলের গং?
মানে? অভিজিৎ খ্যাক্ করে উঠল।
না মানে সব ঢাকা থেকে আসা হচ্ছে?
হ্যাঁ।
আপনি?
কামু। কবিতা লিখি, নাটক করি।
সৈকত উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসল। মাঠে বসে থাকতে থাকতে দ্বিজয়িতার হাঁফ ধরে আসে। সত্যি ভীষণ একঘেয়ে আর ক্লান্তিকর। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নদী বেয়ে চলা, বৈঠার ছপ্ ছপ্ শব্দ শুনতে শুনতে ক্লান্তিতে অবসন্ন লাগতে থাকা। দ্বিজয়িতা হাঁটতে শুরু করল। মাঠের পাশে দেয়াল ঘিরে যে চায়ের দোকান সেখানের বেঞ্চে বসে একটার পর একটা চা খেতে লাগল। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেতেই দেখে একটা ক্যাটস আই চোখের ছেলে তাকিয়ে আছে ওর দিকে সরাসরি, একেবারে চোখের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। শরীরে একটা ঝাঁকুনি লাগল। দ্বিজয়িতারা প্রদর্শনী শেষে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় শহরের অলি থেকে গলি; বড় রাস্তা, ডাকবাংলো, সোনাপট্টি। শহরের ক্লান্তিকর দীর্ঘ দুপুর বুভুক্ষুর মতো তাদের গিলতে আসছিল আর ওরা সে গহ্বরের মধ্যে ঢুকে পড়ছিল। বৃষ্টিস্নাত বিকালের পর সব চলল শশ্মানের পথে। না কোনো ঘাট নয়, একটা বাগানের মতো। তিনটা মন্দিরের মাথা এক হয়ে ত্রিভুজ তৈরি করেছে। ঘন ঘাস দিয়ে ঘেরা শিবলিঙ্গ, পুরানো ইটের গন্ধে আকীর্ণ হয়ে আছে।
ফেরার পথে অভিজিৎ রিকশাওয়ালার সাথে গোলযোগ শুরু করল।
অভিজিৎ থামবি?
ওহ্ রিয়েলি সৈকত!
মার খেলে দিবি না এমন ছেলে তুই না তা তো জানিই।
ভালো করছিস, জানিস, তাতে আমার বাল ছিঁড়া যায়।
অভিজিৎ দয়া করে মুখ বন্ধ কর।
কেন, না করলে কী হবে?
দ্বিজয়িতা ওদের তর্কে বিরক্ত হয়ে সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়। রিকশাওয়ালা ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখে, চোখে বিস্ময়। সারা সন্ধ্যা কাটল জামিল ভাইয়ের দোকানে; চায়ের পর চা, চা খেতে খেতে ওদের জিভ অসাড় হয়ে আসে। সজল চকচকে চোখে বলল, চল আজ রাতে কেরুর বন্দোবস্ত করি। আরিফ লাফ দিয়ে উঠল। হ্যাঁ বস এত বড় কাজের ক্লান্তির পর একটু রিলাকসেশন লাগে। আরিফের ভাইয়ের মাইক্রোতে খাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। দ্বিজয়িতার কাছে গাড়িতে খাওয়ার আইডিয়াটা তত পছন্দ হলো না, কিন্তু কোনো জায়গা পাওয়া গেল না। আরিফ রাত এগারটার দিকে মাইক্রো নিয়ে হাজির। একে একে সজল, অভিজিৎ, সৈকত, আরিফ, দ্বিজয়িতা আরও দুজন ছেলে মীর আর তারিক এসে যোগ দিল। মীর গত বারো বছর ধরে মেডিকেল কলেজের ছাত্র, একেক ক্লাসে দুই-তিন বছর ধরে ছিল। মীর এমন নেশাখোর হাসপাতালের কঙ্কাল চুরি করে বিক্রি করে পয়সা যোগাড় করে। রাতটা ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে একটা মেঘপুঞ্জের মতো এসে জড়ো হয় মাথার ওপরে। দ্বিজয়িতার হতোদ্যম লাগতে থাকে। মাইক্রোবাসটা চলতে শুরু করলে সবাই গা ছেড়ে বসে। দ্বিজয়িতা, অভিজিৎ, সৈকত, মীর, তারিক বসেছে পেছনের সিটে। সজল সামনের সিটে। আরিফ খুব স্পিডে গাড়ি চালাতে শুরু করে মফস্বলের ছোট রাস্তা ধরে। শিরিষতলায় গাড়িটা পার্ক করা হয় কিছুক্ষণের জন্য। বোতল থেকে সবাই খেতে শুরু করে ‘র’। দ্বিজয়িতা কোকের ক্যানে ঢেলে একটু একটু করে খায়। ঝাল চানাচুর মুখের মধ্যে ভিন্ন স্বাদ এনে দেয়। পাঞ্জাবি পরা কয়েকজন লোক খুব উৎসুক দৃষ্টিতে গাড়ির ভেতরটা দেখতে দেখতে চলে যায়। আরিফ দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে হাইওয়ের দিকে চলতে শুরু করে, হাতের স্টিয়ারিং এলোমেলোভাবে ঘোরাতে থাকে। গাড়ি একবার রাস্তার ডানে আরেকবার বামে ঝুঁকে পড়তে থাকে। একটা অন্ধকার রাস্তায় গাড়িটা চলতে থাকে।
দ্বিজয়িতার মনে হয় সরু একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে গাড়িটা চলছে অন্তহীন। একটা কালো গহ্বর সবাইকে গিলে নিচ্ছে, কোন্ অতলে হারিয়ে যাচ্ছে দ্বিজয়িতাদের গাড়িটা, পা একটু টলে উঠল। পেছনে পুলিশের গাড়ির হর্ন। আরিফ গতি বাড়িয়ে দিল গাড়ির, প্রায় হানড্রেড। পুলিশের গাড়ির সাইরেন জোরে জোরে বাজতে শুরু করেছে। সবাই একটু মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে কেরুর বোতলগুলো সিটের পেছনের দিকে ঠেলে দিল। সজল বলল ডোন্ট ওরি, আই ক্যান ম্যানেজ ইট।
পুলিশের গাড়িটা মাইক্রোর প্রায় বামপাশে চলে আসল। আরিফ হার্ড ব্রেক কষে গাড়ি থামাল। দারোগা মতো একজন আর দুজন কনস্টেবল নেমে এলো জিপ থেকে।
সজল সবাইকে ঠা-া হয়ে বসতে বলে বাম পা আগে ফেলে নামতে গেলে একটু টলে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল, তবে স্মার্টলি বলল, ইটস ওকে।
গাড়ির ভেতরে অভিজিৎ বেশ শব্দ করে হেসে বলল, শালা।
দারোগা আরিফের দিকে এগিয়ে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইল।
আরিফ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে বলল, বাসায় ফেলে এসেছি।
দারোগা সাহেব বেশ বিরক্ত হয়ে নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠলেন।
একজন কনস্টেবল মাইক্রোর মধ্যে উঁকি দিয়ে বলল, ওরে বাবা একজন মেয়ে আছে স্যার, সে বেশ চিৎকার করে বলে উঠল, কেউ যেন পালাবার চেষ্টা করবেন না।
কিন্তু মীরের বন্ধু তার আগেই গাড়ি থেকে নেমে গেছে। ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে সবার চোখ এড়িয়ে চলে গেছে। পুলিশের গাড়ি থেকে কে একজন চিৎকার করে বলে উঠল, ফলো আস।
পুলিশের গাড়ির পেছন পেছন মাইক্রো চলতে শুরু করল।
সবাই বেশ একটু হকচকিয়ে গেছে, গাড়ি ধীরে চলে আরিফদের বাসার সামনে দাঁড়াল, সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেল একে একে।
অভিজিৎ কোক খেয়ে টিনটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেললে ঘন অন্ধকারে টং শব্দ করে উঠল।
দ্বিজয়িতাকে আরিফের বাবা এসে বললেন, তুমি বাসার ভেতরে আসো মা।
সজল দ্বিজয়িতার পেছনে পেছনে এসে বলল, খবর আছে, গাড়ির লাইসেন্স আরিফের ভাইয়ের অফিসে তালা মারা, আর লাইসেন্স তো ড্রাইভারের নামে করা থানায় যেতে হতে পারে, তুমি পারলে কলের পারে গিয়ে বমি করে ফেলো।
দ্বিজয়িতা চোখমুখ ধুয়ে ব্যাগ থেকে পাউডারের পাফটা মুখে বুলিয়ে নিল।
আধা ঘণ্টার মতো আরিফদের বাড়িতে লাইসেন্স খোঁজাখুঁজির পর দারোগা বলল, থানায় চলেন সব। গাড়ি চলতে শুরু করলে সজল বলল জামিল ভাইকে দরকার, কোনোভাবে খবর পৌঁছানো যেত! ঠা-ার মধ্যে সবাই বেশ একটু ঘামতে শুরু করে। গাড়ি এসে থানায় ঢুকল, রাতের থানা লোকজন কম।
কিরে দ্বিজয়িতা ভয় লাগছে?
দ্বিজয়িতা কিছুটা চিন্তিত চেহারা নিয়ে বলল, না।
একে একে ছয়জনকে ওসির রুমে নিয়ে যাওয়া হল। টানা লম্বা একটা ঘরে বেশ কিছু চেয়ার টেবিল ছড়ানো। ওসির রুমে ঢুকতেই বেশ সম্ভ্রান্ত চেহারার এক লোককে থানা ইনচার্জের চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেল, সজল হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলে ভদ্রলোক বললেন বসেন, বসেন … কয়জন আপনারা? সঙ্গে একজন মেয়ে আছে শুনলাম। অভিজিৎ দ্বিজয়িতাকে ইঙ্গিত করলে দ্বিজয়িতা একটু সামনে এগিয়ে গেল, ওসি সাহেব দ্বিজয়িতাকে বসতে বললেন।
আপনার নাম?
দ্বিজয়িতা।
সব কি ইউনিভার্সিটির ছাত্র?
না।
এরা কে আপনার সাথে?
বন্ধু সবাই।
কি জন্য এসেছেন এখানে?
চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর কাজে এসেছি।
ওহ্ আর্ট-কালচার!
কিন্তু এদের সাথে আপনার ঘনিষ্ঠ কেউ আছে?
সজল আগ বাড়িয়ে বলল, আমরা সবাই বন্ধু, সবাই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একজন কনস্টেবল পেছন থেকে সাউন্ড করে উঠল, দেখা যাবে কোর্টে উঠলে কে কার!
ওসি সাহেব জোরে বলে উঠলেন, যান যান সব কাজে যান, ভিড় করবেন না, আমাকে কাজ করতে দিন।
সজল বলল, এখানে কারুজের প্রোপ্রাইটর জামিল ভাইয়ের বাসায় উঠেছি সবাই। আর আমার বাবা ডক্টর কামাল ইউসুফ।
ওহ্ ডাক্তার সাহেবের ছেলে, তো এত রাতে গাড়ি নিয়ে কী করছিলেন?
অভিজিৎ বলল, কাজ শেষে আমরা গাড়ি নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।
ড্রিংক করেছেন আপনারা?
এই একটু, হাত দিয়ে দেখিয়ে সজল বলল।
ওসি সাহেব বললেন, সেটা হাসপাতালে দেখা যাবে।
দ্বিজয়িতা বিমূঢ় হয়ে চেয়ারে বসে ওদের কথা শুনছিল, ওসি সাহেব দ্বিজয়িতাকে বলল, আপনি করেছেন ড্রিংক?
দ্বিজয়িতা বলল, হ্যাঁ করেছি অল্প।
এসময় বেশ সুদর্শন একজন পুলিশ অফিসার এসে সরাসরি দ্বিজয়িতার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাকে তো চিনি আমি।
দ্বিজয়িতা অফিসারের চেহারার দিকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল, না তো। আপনাকে চিনি বলে মনে হচ্ছে না, কোনোদিন দেখিও নাই।
কেন মনে নাই? চাপ দিলেই সব মনে পড়বে।
দ্বিজয়িতা চিৎকার করে বলে উঠল, না, না, আপনার সাথে কখনোই আমার পরিচয় হয় নি, আপনি আমাকে বিপদে ফেলার জন্য এসব বলছেন।
অভিজিৎ অফিসারকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল, ইউ বাস্টার্ড।
ওসির রুমের ভেতর বেশ একটু হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। ওসি খসখস করে কাগজে সকলকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য লিখে দেয়।
দুইটার দিকে পুলিশের লম্বা ভ্যানে সকলকে তোলা হয়। ছেলেদের সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে শেষে দ্বিজয়িতাকে তোলা হয়। ড্রাইভারের অংশটা মোটা লোহার নেট দিয়ে আলাদা করা। পেছনে দুপাশে লম্বা টানা সিট।
কিন্তু দ্বিজয়িতাকে ছেলেদের সাথে বসানো হয় নি, লম্বা টানা সিটগুলোর পরে আরেকটা লোহার দরজা দিয়ে মাঝের অংশটাকে আলাদা করা হয়েছে। দ্বিজয়িতা লোহার দরজা দিয়ে আলাদা করা অংশে বসে একা। এরপরেই গাড়ি থেকে নামার পথ, নামার দরজাটা শেকল দিয়ে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে, দুজন কনস্টেবল দরজায় ঝুলছে। তাদের কাঁধে মোটা রাইফেল। দরজার ফাঁক দিয়ে দু-এক ঝাপটা বাতাস এসে দ্বিজয়িতার মুখে লাগছিল মাঝরাতে। চোখে-মুখে সারাদিনের ক্লান্তি, ঘটনার অনিশ্চয়তায় দ্বিজয়িতা আর তার বন্ধুরা এমন এক অবস্থার মধ্যে পড়ে যা টেনে নিয়ে চলেছে এক অ-পার্থিব অনুভূতির দিকে। দুপাশের ঘন রাত পুলিশ ভ্যানটিকে জাপটে ধরে, অভিজিৎ হাতের শেকল দিয়ে সিটের ওপর ঝনাৎ শব্দ তোলে। পেছনের কনস্টেবল দুজন হা হা করে ওঠে। দ্বিজয়িতার ইচ্ছে করে দরজাটা খুলে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়তে।
গাড়ি এসে মেডিকেল কলেজের বারান্দার সামনে থামে, কয়েকজন ওয়ার্ড বয়, আয়া এসে ঘিরে ধরে ওদেরকে, আরও কিছু কৌতূহলী চোখও গাড়ির চারপাশে ভিড় করে। সকলের কৌতূহলের কারণ দ্বিজয়িতা। দ্বিজয়িতা খুব ফ্যাকাশে মুখে গাড়ি থেকে নামে। গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ে একটু ব্যথা লাগে। নীল অ্যাপ্রনের আয়া খপ করে দ্বিজয়িতার হাত ধরে ফেলে। দ্বিজয়িতা বলে আমাকে ধরার দরকার নাই, আমি পালাব না। আয়া বলে, এইটা আমাদের ডিউটি। আয়া দুজনের শক্ত মুঠির মধ্যে বাঁধা হাতে রুমের পর রুম পেরিয়ে অন্যদের সাথে দ্বিজয়িতাকেও নিয়ে যাওয়া হয় মেডিকেল অফিসারের ঘরে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদির পর দ্বিজয়িতাকে আলাদা করে ফেলা হয়, অন্য এক ঘরে সাদা কভার আঁটা চেয়ারে বসতে দেয়া হয় তাকে। ক্লান্তিতে আর শরীরের ভারে দ্বিজয়িতা নুয়ে পড়ে।
আয়া দুজনের দিকে তাকিয়ে দ্বিজয়িতা বলে, বাথরুমে যাব।
না এখন না।
কেন?
অর্ডার নাই। আপনার স্টমাক ওয়াশ না করা পর্যন্ত কোনো অর্ডার নাই।
কিন্তু আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে বলেন গিয়ে।
মাথায় লাল ফিতা বাঁধা আয়া দরজা ঠেলে বাইরে যায়, কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে জানায় বাথরুমে যাওয়া যাবে কিন্তু দরজা খোলা রেখে আর বমি করা যাবে না। দ্বিজয়িতা কোনোমতে মাথা নেড়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে, গন্ধে বমি চলে আসে।
শব্দ পেয়ে আয়া হাট করে দরজা খুলে বলে, বললাম না বমি করতে পারবেন না, বাইর হন।
দ্বিজয়িতা দরজাটা জোর করে টেনে ধরে বাথরুম করে। ছেলেরা সব টানা বারান্দায় বেঞ্চে বসে ঝিমাতে থাকে।
অভিজিৎ বলে, এই বালের ওয়াশ কখন শেষ হবে!
সজল বলে মজা টের পাবা, এমন জঘন্য লাগবে। ইস্ দ্বিজয়িতা একা একা কী অবস্থায় আছে কে জানে!
কী অবস্থায় আর থাকবে, এই পরিস্থিতিতে যেমন থাকা যায়, তবে শুয়োরের বাচ্চাদের বিশ্বাস নাই।
একজন অল্প বয়সি পুলিশ এসে বলল, আপা আপনার জন্য খারাপ লাগছে, এমন ঘটনায় জড়ালেন কীভাবে!
মদের ঘোরেই হোক বা ঘটনা প্রবাহে দ্বিজয়িতা একটু উত্তেজিত অবস্থায় ছিল…
ঘটনা তেমন কিছু না ভাই। খুব সিম্পল কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে তাই এত নাটক।
পুলিশ ছেলেটা বলল, যাই হোক না কেন এখন ভোগান্তি আছে, আমি চেষ্টা করব চার্জশিটে আপনাকে বাদ দেয়ার জন্য।
দ্বিজয়িতা হেসে বলল, থ্যাংক ইউ, তাতে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।
স্টমাক ওয়াশ রুমে সবাইকে একত্রে জড়ো করা হল। এতক্ষণে দ্বিজয়িতার সাথে অন্যদের দেখা। মীর এসে বলল, শোনেন দ্বিজয়িতা আপনি বলবেন প্রেমিকের সাথে এসেছেন, তাহলে সুবিধা হবে।
কেন তা বলব কেন?
তাহলে আপনাকে চার্জশিটে অন্যভাবে আনা হবে।
দ্বিজয়িতা বলল, যা সত্য আমি তার বাইরে একটা কথাও বলব না, এখানে মিথ্যা বলাটা আরও খারাপ হবে। আর কে আমার প্রেমিক! ফানি।
যে কাউকে বলে দিবেন প্রেমিক।
চুপ করেন, আর আপনারা উল্টাপাল্টা বললে আমার সমস্যা আরও বেড়ে যাবে, সো ডোন্ট ডু ইট।
সজলও মীরের সাথে গলা মিলিয়ে বলল, তুমি বলতে পারো তোমার হবু স্বামী বা প্রেমিকের সাথে এসেছ, তুমি কিছু জানো না।
দ্বিজয়িতা ওদের পাশ থেকে সরে এসে সাদা গদিমোড়া চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে লাগল। প্রথমেই দ্বিজয়িতাকে তোলা হল ওয়াশ টেবিলে। একটা লম্বা নল মুখের ভেতর সোজা ঢুকিয়ে দেয়া হলো, কত দীর্ঘ সে নল কে জানে! দ্বিজয়িতার মনে হলো বুকের ভেতরটা ছিদ্র করে ঠেলে দেয়া হয়েছে নলটা আর যন্ত্রণায় সে বলতে চেষ্টা করল, নাহ্। কিন্তু শব্দ গলার ভেতরে, বুকের ভেতরে আটকে থাকল। শুধু ঘড় ঘড় শব্দ বের হলো গলা দিয়ে। বুকটা একদম ঝাঁজরা করে নলটা বের হয়ে আসলো বুক চিরে। ক্লান্তি, অবসাদ, হতাশায় দ্বিজয়িতার চোখমুখ একদম গর্তে ঢুকে গেল।
সবার স্টমাক ওয়াশ শেষ হলে প্রিজন ভ্যানে করে ওদের নিয়ে নামানো হলো থানায়। এবারও দ্বিজয়িতাকে আলাদা করে একটা কাঠের চেয়ারে বসতে দেয়া হলো। দ্বিজয়িতা মাথা টেবিলে ঠেকিয়ে জেগে থাকতে চেষ্টা করল, মাঝে মাঝে ঘুমে চোখ ভেঙে আসছিল।
হঠাৎ টেবিলে শেকলের শব্দে চমকে উঠে দেখল অভিজিৎ শেকল বাঁধা হাত দিয়ে দ্বিজয়িতার টেবিলে শব্দ করছে, কীরে কী অবস্থা তোর?
তোর কী অবস্থা!
দেখতেই পাচ্ছিস বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অভিজিতের বাথরুমে যাওয়ার কথা শুনে দ্বিজয়িতাও তলপেটে চাপ অনুভব করে।
পাশের টেবিলের পুলিশকে ডেকে বলল, এক্স্কিউজ মি, বাথরুমে যাব।
পুলিশটি বলল, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে খোলা অবস্থায় নেয়া যাবে না।
কেন আপনারা সাথে গেলে তো সমস্যা নাই।
দেখি কী করা যায় বলে পুলিশটি পাশের রুমে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ পর দ্বিজয়িতাকে বারান্দার গ্রিলের দরজা ঠেলে বাইরে নেয়া হলো; একটা সরু গলি পেরিয়ে ঝুপড়ি ঘর।
কয়েকজন মহিলা ওকে দেখে এগিয়ে এলো। কী কেস আপা? আপনারে ধরছে কেন?
দ্বিজয়িতা কোনো উত্তর না দিয়ে কল চেপে পানি নিয়ে টয়লেটে ঢোকে। টয়লেটের জানালা খোলা, কোনো গ্রিল নেই, বাইরের চাঁদের আলোয় ধবধবে মাঠ দেখা যাচ্ছে, অনেক দূর পর্যন্ত, প্রায় দিগন্ত পর্যন্ত দেখা গেল, ঝট করে দ্বিজয়িতার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল। বাসায় জানতে পারলে কী বাজে অবস্থা হবে বা ইউনিভার্সিটিতে! হতাশায় দ্বিজয়িতার চিবুক ঝুলে পড়ে, হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে বাইরে লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে দ্বিজয়িতার, তারপর ভুরুঙ্গামারি হয়ে একেবারে ঐপারে।
টয়লেটের দরজায় করাঘাত শুনে দ্বিজয়িতা সম্বিত ফিরে পায় আবার থানা ঘরের কাঠের চেয়ারে ফিরে আসা। পাশে মেঝেতে একজন শীর্ণকায় মহিলা শুয়ে; তার বুকের সাথে ছোট শিশু আঠার মতো লেগে আছে, মায়ের শুকিয়ে আসা দুধ কামড় দিয়ে ধরে রেখেছে। চোলাইমদবিক্রিকারী, রাতে আখড়া থেকে ধরে এনেছে পুলিশ, পায়ে ডান্ডাবেড়ি লাগানো। মাঝে মাঝে থানা-হাজতের ভেতর থেকে অভিজিতের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। আধোঘুম, আধোজাগরণে দ্বিজয়িতার মাথা ঢুলে পড়েছে টেবিলে।
কে একজন জোরে চিৎকার করে ফোনে কথা বলছে। শুনছেন! হ্যাঁ, পাঁচজন ছেলে একটা মেয়ে। এরা নাকি শিল্প-সাহিত্য করে। দেশটারে ভাবছে আমেরিকা বানাইয়া ফেলব, এত সোজা! কালকে পত্রিকা খুইলা বাপ-মা যখন দেখবে বড় বড় করে মেয়ের ছবি ছাপা হয়েছে। হ্যাঁ হ্যাঁ দ্বিজয়িতা, নামের বাহার।
এসব শুনতে শুনতে দ্বিজয়িতার চোখ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আসে। কতক্ষণ কেটে গেছে কে জানে! পিঠে আলতো চাপড়ে ধড়ফড়িয়ে তাকিয়ে দেখে জামিল ভাই। কী খিদা লাগে নাই? ওনার হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট।
দ্বিজয়িতা বলে আর কতক্ষণ থাকতে হবে? ধৈর্য্য ধরো, যদি কালকে আমি আসতে পারতাম! এখনতো কিছু করার নাই চার্জশিট তৈরি হয়ে গেছে, নয়টা নাগাদ কোর্টে চালান দেয়া হবে।
ওহ্! জোর করে দু-তিন চামচ বিরিয়ানি খায় দ্বিজয়িতা।
পাশের টেবিলগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে। রাতের থানা বদলে অন্যরূপ, নানা লোকের আনাগোনা। সবাই একবার করে দ্বিজয়িতার সামনে এসে দাঁড়ায়, এটা সেটা জানতে চায়। সাংবাদিক হাসু ভাই এলেন। ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না, ন্যাশনাল নিউজ কভার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, লোকালগুলোতে করা যায় নি, সেটা তেমন কোনো সমস্যা না। তবে আপনারা ভালো ঝামেলায় পড়েছেন। দ্বিজয়িতা খুব ক্লান্ত চোখে চারপাশ দেখতে থাকে আর ঘন ঘন কনস্টেবলের কাছে জানতে চায় কখন কোর্টে নেয়া হবে। হবে আপা, আরেকটু ওয়েট করেন। লেখা শেষ, তেমন কিছু হবে না। প্রায় পৌনে বারোটার দিকে সবাইকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। থানার মধ্যে বেশ একটা ভিড় জমে যায় ওদেরকে ঘিরে। গাড়িতে ওঠার সময় থানার বারান্দা থেকে কয়েকজন পুলিশ হাত নেড়ে বলে আবার দেখা হবে। দ্বিজয়িতাও তাদের দিকে হাত নেড়ে বলে, অবশ্যই।
কোর্ট হাজতে যাওয়ার পথে অসংখ্য কৌতূহলী চোখ দ্বিজয়িতাকে প্রায় গিলে খেতে চায়, জামিল ভাই দুহাত দিয়ে দ্বিজয়িতাকে পেঁচিয়ে নিয়ে আসাতে রক্ষা। কে একজন ওড়না ধরে টান মারলে দ্বিজয়িতা পড়তে পড়তে উঠে দাঁড়ায়। কোর্ট হাজতটা আস্ত একটা নর্দমা, মেঝেতে খড় বিছানো, অর্ধেক দেয়াল দিয়ে টয়লেট আলাদা করা হয়েছে, উন্মুক্ত টয়লেট থেকে গা গোলানো গন্ধ আসছে। ঢুকতেই ব্রহ্মতালু জ্বলে গেল। খড়ের বিছানার ওপরে মাথা মোড়ানো এক মেয়ে বসা, বয়স কত হবে বিশ, একুশ। দ্বিজয়িতার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। চোখেমুখে ভীতি কিন্তু তা কোনো হরিণীর নয়।
কালো বোরকাপরা পাহারাদারনী দ্বিজয়িতার দিকে খুব রুক্ষভাবে তাকিয়ে জানতে চাইল, কী কেস?
কী কেস তা তো আপনি জানেন মনে হয়।
কেন আমি কেন জানব?
জানবেন, এত লোক জানে আপনি জানেন না! এত দেমাক দেখাইয়েন না, দেখেন কী হয়। আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেন, কেসতো ঝুইল্লা গেছে।
আপনি আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেন।
কী!
এত তেজ, দাঁড়ান দেখামু।
মানে? মানে পরে বুঝবেন, এখন চুপ মাইরা থাকেন।
দ্বিজয়িতা বেশ রেগে গিয়ে বল্ল, আপনি আমার সাথে আর কোনো কথা বলবেন না।
আচ্ছা আচ্ছা দেখা যাইব।
হাজতের জানালার কাছে বেশ ভিড় জমে গেল, বেশ কিছু ছেলে উঁকি দিচ্ছে। আপা এদিকে আসেন? কী কেস আপনার? দেখে তো ভদ্র ঘরের মনে হয়। দ্বিজয়িতার মাথায় প্রচ- ব্যথা হতে থাকে।
উকিলের মতো কোট গায়ে একজন ডাকলে দ্বিজয়িতা এগিয়ে যায়। বয়স্ক ভদ্রলোক বলেন আমি শুনেছি তোমাদের ঘটনা, চিন্তা করো না, কেস কোর্টে উঠলে আমরা দেখব। দ্বিজয়িতার হঠাৎ প্রচ- ডিপ্রেশন শুরু হয়, বুক জ্বলতে থাকে। তোমার বাসায় জানে? না জানাইনি এখনও, আর সম্ভবও হয় নি।
পারলে জানাও কাউকে, বিপদ-আপদের কথা তো বলা যায় না, তাদের এখন সাথে থাকা দরকার।
উকিলসাহেবের কথায় দ্বিজয়িতার টেনশন বেড়ে যায়। জামিল ভাই আরও দুজন ছেলেকে নিয়ে জানালার কাছে এগিয়ে আসে। দ্বিজয়িতা একটা সমস্যা হয়ে গেল।
কেন, আবার কী সমস্যা জামিল ভাই?
আজ জোহরের পর উকিলরা সব অন্য একটা কাজে ব্যস্ত থাকবে, তোমাদের কেসটা এর মধ্যে না উঠলে দুদিন পিছিয়ে যাবে। শুক্র, শনিবার কেস উঠবে না, তোমাকে জেল হাজতে থাকতে হবে। জামিল ভাইয়ের কথা শুনে দ্বিজয়িতা হাল ছেড়ে দেয়।
পাহারাদারনী এসে বলে, দেখি এইবার আপনার দেমাক কই যায়, রাতে কী যে হইব কইতে পারি না।
দ্বিজয়িতা পরিস্থিতির চাপে কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়ে, শরীর অসাড় লাগতে থাকে। জামিল ভাইকে বাসার ফোন নাম্বার দিয়ে ছোট বোনকে জানাতে বলে। জামিল ভাই বলে, দাঁড়াও দেখি একবার শেষ চেষ্টা করে, অ্যাডভোকেট তানজীব যদি রাজি হয় তাহলে সমস্যা হবে না। ক্লান্তিতে দ্বিজয়িতা খড় বিছানো মেঝেতে আধশোয়া হয়ে বসে থাকে। প্রায় পৌনে একটার সময় জামিল ভাই আসেন। কনস্টেবল গেট খুলে দেয়। পাবলিকের কৌতূহল এড়ানোর জন্য জেলখানার পেছন পথ রান্নাঘর দিয়ে দ্বিজয়িতাকে নিয়ে যাওয়া হয়। পচা বাসি খাবারের গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। একটা ছোট ঘরে এনে বসানো হয়, সেখানে হাতের ছাপ, আঙুলের ছাপ সব রাখা হয়। এরপর লাইন করে সারিতে দাঁড়াতে হয়। ছেলেদের সবার কোমরে দড়ি, দূর থেকে সৈকত, সজলরা হাত নাড়ে। মনে হচ্ছে কয়েক ঘণ্টা, সময় যেন শেষ হতে চায় না। লাইনটা একটু একটু করে আগালে দরজা দিয়ে ঠেলে অন্য সকলের সাথে দ্বিজয়িতাকেও ঢোকানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট কী কী পড়েন। কিছুই কানে যায় না, রেজারেকশনের কাতিউশার কথা মনে পড়তে থাকে, দ্বিজয়িতার মনে আরশিতে কাতিউশার কোঁকড়া চুলগুলো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
হঠাৎ অভিজিৎ বেশ জোরে হাসতে থাকে, পাবলিক নুইস্যান্স! জনগণের বিরক্তি উৎপাদনের জন্য পঞ্চাশ টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই দিনের জেল। হা!
জরিমানা দেয়ার পর সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। দ্বিজয়িতা ক্লান্তিতে প্রায় নুয়ে পড়ে। জামিল ভাইয়ের হাত ধরে কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে রিকশা; খোলা রিকশায় হু হু বাতাস, বৃষ্টির ঝাপটা। জামিল ভাইয়ের বাসায় গিয়ে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে বালিশে মাথা দিতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে একেবারে রাত হয়ে গেল। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, কানের কাছে সজল, সৈকত, অভিজিৎ চিৎকার করে কথা বলছে, আবার ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসে, দ্বিজয়িতা একটা স্বপ্নের মধ্যে ডুবে যেতে থাকে। স্বপ্ন, স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন। চারিদিকে অনেক ধোঁয়া, আগুন, বোমার শব্দ। সৈনিকরা সব প্যারেড করে যাচ্ছে, দ্বিজয়িতা একটা বাঙ্কারের মধ্যে মাথা নিচু করে বসে আছে, গায়ে সৈনিকদের পোশাক। হঠাৎ একটা বিকট শব্দে মাথার উপরে বাঙ্কারটা ভেঙে পড়ল। চোখ মেলে দ্বিজয়িতা দেখে সারা বিছানা বমিতে ভেসে গেছে। গত দুদিনের জমে থাকা বিষাক্ত অনুভূতি ছড়িয়ে আছে সারা বিছানা জুড়ে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

গল্প নভেরা হোসেন মৌতাতভঙ্গ সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর