যে দিনটি মিশে গেল অবিনশ্বরতায়
২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৩৭
আমি, আমার তিন সন্তান আর আমার স্ত্রী, এই পাঁচজন মিলে এসেছি ছুটির সন্ধ্যা উদযাপনের জন্যে, বইমেলায়। আমার বড় ছেলেটি বই পড়তে পছন্দ করে খুব। তার পছন্দ অ্যাডভেঞ্চার এবং গোয়েন্দা ঘরানার বই। মেজ ছেলের জন্যে লাগবে কমিকস। আর ছোট্টটি এখনও পড়তে শেখে নি। তাকে রঙচঙে ছবিওলা কিছু কিনে দিলেই চলবে। আমার স্ত্রী একসময় শখের কবিতালেখক ছিলো। সে তার কিছু কলিগের বইপত্তর কিনবে। ইদানিং মানুষ বই পড়ছে না তেমন, তবে লিখছে খুব। বই লিখছে প্রতিবছর, এমন বন্ধুবান্ধব আমারও আছে বটে। তাদের সবার বই কেনার পর কিছু টাকা থাকলে ‘এক সময় আমার পড়লে ভাল লাগত’ এরকম কিছু বই কিনে আলমারিতে সাজিয়ে রাখা যাবে এখন। বইয়ের আলমারি ভরা থাকাটাকে আমি এই সময়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
ঢাকার সন্ধ্যা বেশিরভাগ মানুষের কাছেই রূপবতী মনে হবে না কখনও। বেশিরভাগ মানুষই এ সময়, থাকে ক্লান্ত। এটা বাড়ি ফেরার সময়। তারা বাড়ি ফেরার সময় গ্যাসনিরোধী মুখোশ কেন পরে না এ নিয়ে আমার আক্ষেপ হয় বৈকি। এই বিষাক্ত বাতাসে অযথা কেন আয়ুক্ষয়? ঘাম, দৌড়, হল্লা, কান্না থেকে দূরে ফেব্রুয়ারির আধাশীতল এই সন্ধ্যায় উদ্যান যদিও ভীড় আর ধূলোয় জর্জরিত, তবুও হ্রদের ওপর বুক চিতিয়ে থাকা স্তম্ভের আড়ালে লাজনম্র আকাশটা দেখতে ভাল লাগছে। এই গোলাপি আকাশ, বইয়ের সওদা, স্বাস্থ্যবতী বউ আর চঞ্চল শিশুদের হুটোপুটিতে জীবন নিয়ে একটা কৃতজ্ঞতাবোধ আসা উচিত। চড়া দাম দিয়ে খেয়ে ফেলা উচিত অস্বাস্থ্যকর খাবার! আমি ওদের সবাইকে ডাকলাম ফুচকা খেতে। এইসব বাইরের খাবার আমি অনুমোদন করি না, তবে আজ দ্বিগুণ দামে খেতেও আপত্তি নেই।
আপনি কি কখনও একা একা ফুচকা খেয়েছেন? খেয়েছেন হয়তো। আমিও হয়তো খেয়েছি, তবে ‘ফুচকা খাওয়া’ এই ফ্রেজটার কথা মনে এলেই আমার মনে হয় সবাই মিলে একসাথে হৈ হৈ করার কথা। ফুচকা খাওয়ার সময় গল্প জমাতে হয়, আর প্রচুর হাসতে হয়। গল্প আর হাসির অভাব নেই আমাদের মধ্যে। অভাব নেই কাগুজে মুদ্রারও। তাই ফুচকা ইচ্ছা হলে সেটা এখনই পূরণ করে ফেলাই শ্রেয়। আমরা দাঁড়ালাম একটা দোকানের সামনে। দোকানের কর্মীরা আমাদের আহবান জানালো তাদের খাবারের স্বাদ নিতে। সেখানে ফুচকা ছাড়াও ছিলো সুপুষ্ট মুরগীর রান দিয়ে তৈরি কাবাব আর বিশালাকৃতির লুচি।
আমার চঞ্চল সন্তানেরা হৈহৈ করে উঠলো। অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি তাদের বড্ড লোভ! তাদের মা শুধু আপত্তি জানালো। সে চাচ্ছিল ভাল কোনও রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারটা খেতে। এখন যদি আমরা ফুচকা আর/অথবা কাবাব খেয়ে নিই, তাহলে কি আর সহজে ক্ষুধা পাবে? আমরা হিসেব করে দেখলাম, যদি কাবাব বাদ দিয়ে শুধু ফুচকা খাই আর পান করি হজমবর্ধক পানীয়, তাহলে আর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর রওনা দিলে ক্ষুধা লেগে যাবে ঘন্টাদেড়েকের মধ্যে।
এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে খাদ্যগ্রহণ সংক্রান্ত যে ধরণের অভিজ্ঞতা দরকার হয়, তা আমাদের ছিলো বটে। সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, ১৫০ টাকা দাম নিলেও ফুচকার আকৃতি যথেষ্ট ছোট, আর পরিমাণেও কম। তাই এটা হজম হতে বেশি সময় লাগবে না। ছোট আকৃতি দেখে আমার স্ত্রীর মুখ প্রসন্ন হলো। আমরা অর্ডার করলাম চারটে ফুচকা। আর ছোট্টর জন্যে প্যাকেটজাত মিল্কশেক। মানুষজন অপ্রসন্ন মুখে বসে খাবার খাচ্ছে। দাম নিয়ে বেশ অসন্তোষ তাদের মধ্যে, বোঝা যাচ্ছে। আমাদের এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমি প্রচুর টাকা এনেছি সাথে। ক্যাশে, বিকাশে, কার্ডে উপচে পড়ছে আমার একচল্লিশ বছরের সাফল্যের খতিয়ান। ভরে ওঠা ব্যাগগুলি আমরা টেবিলে রাখলাম। ব্যাগের ভেতর থেকে উঁকি মারছে রঙিন প্রচ্ছদের ভেতরের আনন্দময় জগৎ। বাসায় গিয়ে ব্যাগ থেকে বই বের করে ছবি তোলা হবে, কোনটা আগে পড়া যায় এ নিয়ে আলোচনা, সময়ক্ষেপণ, তারপর বই পাশে নিয়ে অল্প একটু পড়ে ঘুমিয়ে যাবে আমার সন্তানেরা, তাদের জন্যে এমন একটি দিনই তো আমি দিতে চেয়েছি এতদিন!
আমার বড় ছেলে চমৎকার অভিনয়শৈলী দেখিয়ে কৌতুক বলতে থাকে। পত্রিকার পাতাতে দেওয়া কৌতুক সে খুব আগ্রহ করে পড়ে। মুখস্থ করে আমাকে শোনানোর জন্যে। কৌতুকগুলির সারল্য আমাকে মুগ্ধ করে। আমি হাসি। আমরা হাসি। মেজ ছেলে বলে সুপারম্যান আর ল্যাম্বারগিনি গাড়ির গল্প। আমাদেরও একটা গাড়ি আছে বটে। সেটা নিয়ে ওকে কিছু প্রশ্ন করে অবাক হয়ে গেলাম। গাড়ি সম্পর্কে আমার চেয়ে ওর জ্ঞান বেশি দেখছি! আমার স্ত্রী ফুচকা বেশ পছন্দ করলো। তার এখনকার চিন্তা হচ্ছে, আরেক প্লেট নেবে কি নেবে না। আমিই ওকে নিরুৎসাহিত করে ফুচকা পার্টির অবসান করলাম। ছোট্টটি ঘুরে বেড়ায় আশেপাশে আর আমাকে খালি মিল্কশেকের প্যাকেট থেকে একটু সাধে।
‘খাও বাবা, খাও’।
আহ, কী সুন্দর এই জীবন!
এবার যাবার পালা। আমাদের সাদা গাড়ি রাখা আছে শাহবাগের কাছাকাছি। আমরা ধীরে, ক্লান্তিকে সাথে নিয়ে হাঁটছি। এবার পাবো শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের অভ্যর্থনা। আরামদায়ক আসনে গা এলিয়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাব যে যার ফোন নিয়ে। বড় ছেলেটা গাড়ির মৃদু আলোতে বই পড়ার চেষ্টা করবে নিশ্চিত। তাকে আদর করে বকে দিতে হবে। প্রিয় বই পেলে তার আর হুঁশ থাকে না!
আমাদের গন্তব্য একটা রুফটপ রেস্টুরেন্ট। রাতের খাবারটা ওখানেই সেরে নেবো। ওখানে পাওয়া যাবে সত্যিকারের ভাল খাবার। বাজবে ধীরলয়ে মিউজিক আর থাকবে সন্তুষ্ট মানুষজন। আর চাইলে খাওয়া শেষে লাফিয়েও পড়া যাবে ছাদ থেকে! হাহাহা।
মাঝেমধ্যে আমি এমন বদ রসিকতা করি। আমার স্ত্রী এতে খুব বিরক্ত হয়। সুন্দর সন্ধ্যাটা নষ্ট করার জন্যে আমাকে দায়ী করে সে ওদিকে মুখ ফিরিয়ে রইলো। আমি তাকে চুম্বন করার ভঙ্গি করে কাছে এগিয়ে গিয়ে আরো ক্ষেপিয়ে দিলাম। তার মেজাজ ঠান্ডা করার জন্যে আমি সামনের গ্রীষ্মের ছুটিতে মধ্য এশিয়ার কোন দ্বীপে গিয়ে ছুটি কাটালে ভাল হয় তা নিয়ে গল্প জমালাম। এমন চমৎকার কৌশলে কাজ না হয়ে পারে? এইসব অনেক কৌশল আমার জানা আছে।
সিগনালে আটকে আছে গাড়ি। একটা অ্যাম্বুলেন্স আমাদের পাশে চিৎকার করে যাচ্ছে। আমার সংবেদনশীল স্ত্রী বেদনাতূর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। কারা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে অসুস্থতা আর কান্না? তেমন কিছু দেখতে না পাওয়ায় তাকে হতাশ মনে হলো। অশীতিপর বৃদ্ধ অক্সিজেন মাস্ক গোঁজা অবস্থায় প্রাণপন চেষ্টা করছে শ্বাস নেওয়ার, অথবা ক্ষতবিক্ষত, রক্তে প্লাবিত, আহত একজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এরকম কিছু দৃশ্য দেখলে আমরা মানুষের জীবনের অনিশ্চয়তা নিয়ে দার্শনিক আলাপ করতে পারতাম। সেটা হলো না। সিগনালও ছেড়ে দিলো। রাস্তা বেশ ফাঁকা। ভাল গতিতে চলছে গাড়ি। তাই আবারও সুখ এবং সাচ্ছন্দ্যে ফিরে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় রইলো না। রেস্তোরাঁর কাছাকাছি এসে গেছি। খাবার জন্যে আমাদের প্রিয় জায়গা এটা। এর আগে যেসব খাবার খেয়েছি সেগুলিই খাবো, না কি নতুন কিছু বেছে নেবো, এটাই এখন মূল চিন্তার বিষয়। নতুন কিছু নিলে যদি সেরকম ভাল না লাগে, তাহলে পয়সা, সময় আর স্বাদ সবই নষ্ট। সুন্দর একটা দিনের এমন সমাপ্তি নিশ্চয়ই কাম্য হতে পারে না? এসব নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে মনে হলো, মানুষের জীবন আসলে কখনই সমস্যামুক্ত হতে পারে না। কিছু না কিছু কিন্তু আমাদের পিছু পিছু রয়েই যায়। যাই হোক, জীবন তো এমনই। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এসব জয় করেই।
এসে গেছি রেস্তোঁরার সামনে। ড্রাইভারকে দিলাম দুইশত টাকা রাতের খাবারের জন্যে। সে কিছু খাবে না। রেখে দিবে টাকাটা। মঙ্গল হোক তার। আমি সম্ভব হলে তাকে প্রতিদিন দুইশত টাকা দিতাম রাতে খাবার জন্যে। কিন্তু প্রতিদিন তো আর বেড়াতে আসা হয় না। আমি চাইলেই তাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিতে পারি না। নাকি পারি? এ নিয়ে আমি হয়তো পরে কোনও একদিন ভাববো। যদি আসে সেই দিন, but what if tomorrow never comes?
এই রুফটপ রেস্তোরাঁতে বসলে দেখা যায় অন্য এক ঢাকাকে। স্ট্রিটলাইটের সান্নিধ্যে জ্যাম উপভোগ করা গাড়িগুলিকে দেখলে মনে হয় ঈশ্বরের খেয়ালী খেলনা। মার্কেটগুলিকে মনে হয় যেন একেকটা বাতিঘর হয়ে দিক দেখাচ্ছে উদভ্রান্ত মানুষকে। এত উপরে দূষণ নেই। টাটকা বাতাস। বাজছে রুচিকর মিউজিক। আসবে রুচিকর খাবার। হ্যাঁ, আমরা নতুন ধরণের কাবাব আর মাখন মেশানো রুটি খাবো বলে সিদ্ধান্ত নেই। আমার বড় ছেলেটা একটা বই লুকিয়ে নিয়ে এসেছে। এখানেও তার পড়ার চেষ্টা। আমি ওকে না বকে সস্নেহে তাকিয়ে রইলাম। ওর মাকেও দেখালাম। ডিজিটাল আসক্তিতে বুঁদ এই প্রজন্মের জন্যে আমার পুত্ররত্ন চমৎকার একটা উদাহরণ হতে পারে, আর আমরাও নিশ্চয়ই প্যারেন্টিং খারাপ শিখি নি একদম! এই গুড প্যারেন্টিং/ব্যাড প্যারেন্টিং নিয়ে ইদানিং খুব আলোচনা হচ্ছে। আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমি এ ব্যাপারে কথা বলতে পারতাম আজকে রাতে সঙ্গমের পরে, যদি না আমরা তার আগেই দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করি অথবা ভূমিকম্পে শহরটা বিচূর্ণ হয়ে যায়। আরে হ্যাঁ, এই কথাগুলি মনে মনেই বললাম। আমার স্ত্রী এ ধরণের কালো কৌতুক নিতে পারে না। কিন্তু কৌতুকই বা কেন বলছি? ভাল করে চিন্তা করলে দেখা যাবে এগুলি যথেষ্ট বাস্তব সম্ভাবনা। তুরস্কে সেদিন ভূমিকম্প হলো। কত হাজার মানুষ মারা গেল! ঢাকাতে ভূমিকম্প হবে এই বিষয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। আমি বেঁচে গেলেও দুর্ভোগ পোহাবে আমার সন্তানেরা, তারা বেঁচে গেলে তাদের সন্তানেরা। মোটকথা, দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
এই একচল্লিশ বছর বয়সে আমি শরীরে, স্বাস্থ্যে, যৌনতায়, ভালবাসায়, বাৎসল্যে, টাকা পয়সায়, খাদ্যে, পদ্যে, কুয়াশায় আর রৌদ্রে সম্পূর্ণ। হয়তো এইটাই আমার জীবনে চূড়ো। আর চূড়োয় কেউ চিরকাল থাকতে পারে না এ তো জানা কথাই। আজ বা কাল পতন হবেই। হতেই হবে। এর থেকে নিস্তার নেই।
আর তাই…
আর তাই আমি অনেক হিসেব কষে আজকের দিনটি ডিজাইন করেছিলাম। সুন্দর একটি দিন কাটাবো। যেন আমাকে দেখতে না হয় ভূমিকম্প, অথবা সম্মুখীন হতে না হয়
প্রিয়জনের
অপহরণ
অথবা
টর্চার
অথবা
ধর্ষণ
অথবা
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড
অথবা
গনপিটুনি
অথবা
দুর্ঘটনার
কাবাব এসে গেছে। আমরা জানি ক্ষুধা পেটে নিয়েও কীভাবে শব্দ না করে রূচিসম্মতভাবে খেতে হয়। আমি মুখে দিলাম এক টুকরো। আহা, কী স্বাদ! আমরা ঠকিনি। আমি তৃপ্তির সাথে শেষ করলাম খাবার। ড্রিংকসের অর্ডার দিলাম।
ওরা এখন সন্তুষ্টচিত্তে অপেক্ষা করতে পারবে। আমি ওদের অপেক্ষা করতে দিয়ে ‘একটু আসছি’ বলে উঠে যাই।
এই সেই জায়গাটা। রেলিং এর ধারে। এক সপ্তাহ আগে এসে এখানে রেকি করে গেছি। এখানকার রেলিং ছোট। চাইলেই লাফ দেওয়া যায়। আরেকটা অপশন আছে। মাঝখানের শূন্যস্থান। ওখান দিয়েও সেঁধিয়ে গিয়ে চলে যাওয়ায়ে যেতে পারে মাটির আরো কাছে। কোনওরকম কারণ ছাড়া, কোনও অতৃপ্তি ছাড়া, অসুখ ছাড়া আত্মহত্যা করতে যাওয়া প্রথম মানুষ কি আমিই হতে যাচ্ছি? আমার পরিবারের জন্যে যা রেখে যাচ্ছি তা দিয়ে তারা চালিয়ে নিতে পারবে বেশ ক’বছর। তারপর ওরা শোক আর অর্থনৈতিক ধকল সামলে ঘুরে দাঁড়াবে। কে জানে! এটা হয়তো বা তাদের জন্যে ভালই হবে। ওহ, আমার ফোন আর মানিব্যাগ রেখে যেতে হবে। এগুলিও তাদের জন্যে সম্পদ হিসেবেই বিবেচিত হবে।
মোবাইল ফোন আর মানিব্যাগ বের করে রাখতে গিয়ে হাত থেকে ফসকে নিচে পড়ে গেল। বিপদজনকভাবে ছাদের কোনায় পড়ে আছে। সেও মনে হয় রেলিংয়ের শূন্যস্থান ধরে চলে যেতে চায় কোথাও। তার কেন এত দুঃখ?
‘বাবা, তোমার ফোন!’
আধো বোলে
আমার ছেলে
ছোট্টটা!!
সে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা নিতে গেল। ও এতক্ষণ আমার পিছে আসছিলো নিঃশব্দে! ওর মা কেন ওকে দেখে রাখেনি!
জায়গাটা অন্ধকার বলে সে বুঝতে পারেনি রেলিংয়ের মাঝখানে শুধুই শুন্যতা। সে নিচে পড়ে গেল। সেকেন্ডের মধ্যে আমি একটা শব্দ শুনলাম।
থ্যাপাত!
হাড্ডি, মাংস থেতলে যাওয়ার শব্দ। প্রাণ চলে যাওয়ার শব্দ। চিরনৈঃশব্দ্যের শব্দ।
আমি চিৎকার করে উঠলাম। কেউ ধরে ফেলার আগেই আমাকে পড়ে যেতে হবে নিচে। এই অসহনীয় বেদনা নিয়ে আমি বাকিজীবন বাঁচতে পারব না।
কিন্তু কোত্থেকে যেন কয়েকটা ছায়ামূর্তি এসে আমাকে ধরে ফেললো। তারা আমাকে পড়তে দেবে না। তারা কি আমাকে ভালবেসে ফেলেছে? আমি চাই না তাদের ভালবাসা। আমার যত্নে গড়ে তোলা শক্তিশালী দেহটা পাঁক খেয়ে খেয়ে তাদের বজ্রবন্ধনে আবদ্ধ হতে লাগল।
ছায়ার যে এত শক্তি তা কে জানতো!
সারাবাংলা/এসবিডিই
ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ গল্প যে দিনটি মিশে গেল অবিনশ্বরতায় সাহিত্য হাসান মাহবুব হাসান মাহবুবের গল্প 'যে দিনটি মিশে গেল অবিনশ্বরতায়'