Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনির্মাণের অংশীদার ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’


২২ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৪৫ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৫১

ঢাকা: ভাগীরথী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অকুতোভয় এক নারীর নাম। পিরোজপুর শহরের দুই কিলোমিটার সড়ক তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে তাঁকে মিলিটারি জিপের সঙ্গে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর শহরের রাস্তায়। তারপর রক্তাক্ত ভাগীরথীকে গুলি করে হত্যা করে তাঁর মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয় বলেশ্বর নদীতে— এই সত্য ঘটনাই উপন্যাসের আঙ্গিকে তুলে এনেছেন কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার। তার উপন্যাসের নাম ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ছিল উপন্যাসটির প্রকাশনা উৎসব। কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’ উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করেন নাট্যজন মাসুম রেজা, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. সরকার আব্দুল মান্নান। এছাড়া উপন্যাসটি লেখার অনুপ্রেরণা নিয়ে কথা বলেন গ্রন্থটির লেখক মনি হায়দার।

বিজ্ঞাপন

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘রাজনীতিবিদরাই মুক্তিযুদ্ধকে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত করেছেন। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত রেখেছেন কবি-সাহিত্যিকরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশীদার হয়ে থাকবে কিংবদন্তির ভাগীরথী। আর ভাগীরথীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে আরও শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখবে।’

নাট্যজন মাসুম রেজা বলেন, ‘কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত রূপ উন্মোচন করেছেন। যেখানে একটি ভূ-খণ্ডের সাধারণ মানুষ তার মৌলিক অধিকারের কথা না জানলেও এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, পাকিস্তানি হায়নাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। আর সেজন্যই জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিলেন পিরোজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুচি ঘনশ্যামের স্ত্রী ভাগীরথী। আর এ কারণেই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হায়নারা।’

অনুষ্ঠানের আলোচক ড. সরকার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এই উপন্যাসে মনি হায়দার ব্যক্তির সংলাপের মধ্য দিয়ে চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেজন্য চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ভাগীরথী একক কোনো নারী নয়। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো দু্লক্ষ মা-বোনের প্রতিচ্ছবি। মূলত ভাগীরথীই বাংলাদেশের মানচিত্র। এরকম অনেক ভাগীরথীই বাংলাদেশ ছড়িয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বলেশ্বর নদীতে তাঁর মৃতদেহ মিলিয়ে গেলেও সে আসলে জ্বলজ্বল করছে আমাদের মানচিত্রে।’

সভাপতির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই বলেন, ‘ধীরে ধীরে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে ফেলছি। সেজন্য এখন মনি হায়দার লিখছেন কিংবদন্তির ভাগীরথী। তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন ভাগীরথীরা জীবন্ত না থেকে কিংবদন্তি হয়ে উঠছেন। কয়েকদিন পর হয়তো তারা রূপকথার গল্প ঢুকে যাবে। কাজেই এখনই সময় আমাদের চেতনায় ভাগীরথীদের জায়গা করে দেওয়া। না হলে সামনে এমন দিন আসবে যখন ইতিহাস থেকেও হারিয়ে যাবেন তারা।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’ উপন্যাসটি প্রকাশ হয়। উপন্যাসটি প্রকাশ করে বেহুলা বাংলা প্রকাশন।

কিংবদন্তির ভাগীরথী প্রকাশনা উৎসব মনি হায়দার মাসুম রেজা শ ম রেজাউল করিম হাসনাত আবদুল হাই