Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুন্দর ছবির খোঁজে তিন চিত্রশিল্পী


২১ আগস্ট ২০১৮ ১২:২৩ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০১৮ ১৫:০৯

||আন্দালিব রাশদী||

১৭০ বছর আগে ১৮৪৮ সালে তিন জন চিত্রশিল্পী উইিলিয়াম হোলম্যান হান্ট, জন এভারেট মিলেইস এবং দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি তখনকার চিত্রধারার অপর্যাপ্ততা নিয়ে ভাবতে ভাবতে প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড গঠন করেন। তাদের সাথে যোগ দেন উইলিয়াম মাইকেল রসেটি, জেমস কলিসন, ফ্রেডেরিক জন স্টেফেনস এবং টমাস উলনার। সব মিলিয়ে সাতজনের এই সৌভ্রাতৃত্ব নিয়ে প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড আন্দোলন। র‌্যাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো পরবর্তী শিল্পীরা ব্রাদারহুডের ভাষায় যে অবিশ্বস্ত ও যান্ত্রিক শিল্পধারা তৈরি করেছেন, তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করে র‌্যাফায়েল-পূর্ব শিল্পরুচি ও শিল্পশৈলীতে ফিরে যেতে চান। তাঁদের চাওয়া ছবিতে পর্যাপ্ত ডিটেইল থাকবে, গাঢ ও তীব্র রং থাকবে, আর থাকবে ইতালিয় চিত্রকলার শৈলী।
জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউসের আঁকা একো অ্যান্ড নার্সিসাস

বিজ্ঞাপন

ল-নের গাওয়ার স্ট্রিটে মিলেইসের বাবার বাড়িতে ব্রাদারহুড গ্রতিষ্ঠিত হয়। রোসেটি নিজে কবি, তিনি রোমান্টিক কবিতার সাথে ছবির একটি যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন।

প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড ডকট্রিন:
** রংতুলিতে প্রকাশের জন্য বিমূর্ত কিছু নয়, সত্যিকারের আইুডয়া থাকতে হবে।
** প্রকৃতিকে নিবিডভাবে অসুসরণ করতে হবে।
** পূর্বসুরীর আন্তরিক ও সিরিয়াসধর্মী ছবির সাথে যোগসূত্র থাকতে হবে।
** ছবি ও মূর্তি অবশ্যই আকর্ষনীয় ও ভালো হতে হবে।

তাঁরা রোমান্টিসিজম প্রভাবিত রক্ষণশীল রীতিনীতিতে আবদ্ধ নন, ফলে শিল্পীর ব্যক্তিগত দায়িত্বই এখানে মুখ্য। নীতিগতভাবে যারা প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুডের আদর্শ মেনে নিলেন এবং তাদের অনুসরণ ও চর্চা করলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফোর্ড ম্যাডক্স ব্রাউন, জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউস প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

ব্রাদারহুডের শিল্পীদের কাজ দুটি ধারার সৃস্টি করলো। হান্ট ও মিলেইস হলেন রিয়েলিস্ট এবং রসেটি ও তাঁর কঠোর অনুগামীরা হলেন মিডাইভালিস্ট।

প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড শিল্পীদের উপর প্রকৃতি, রং ও সৌন্দর্য প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছে। ব্রাদারহুডের প্রথম প্রদর্শনী ১৮৪৯ সালে। এতে মিলাইসের ইসাবেলা ও হান্টের রিইনজি প্রদর্শিত হয়। ১৮৫০ সালে মিলেইসের খ্রাইস্ট ইন দ্য হাউস অব হিজ প্যারেন্টস প্রদর্শিত হবার পর প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড শিল্পীরা বিতর্কিত হয়ে পড়েন, তাদের ধর্মদ্রোহী মনে করা হয়। এমন কি চার্লস ডিকেন্সের মতো লেখকও তাদের ঈশ্বরবিরোধী মনে করেন। কিন্তু তাদের পক্ষে কলম ধরেন জন রাস্কিন। এদিকে রাস্কিনের স্ত্রী ইফি (ইউফেমিয়া শালমার্স রাস্কিন) মিলেইসের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফলে পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরে। রাস্কিন নিজেকে তাদের কাছ থেকে সরিয়ে নেন।

১৮৫৩ সালে প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড ভেঙ্গে যায়। কেবল হান্ট প্রচারিত ডকট্রিন মেনে শিল্পচর্চা চালাতে থাকেন। ব্রাদারহুড ভেঙ্গে গেলেও সমকালীন ও উত্তর প্রজন্মের আনেক শিল্পী নবজাগ্রত এই ধারার প্রতি আকৃষ্ট হন।

প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড শিল্পীদের একটি স্পষ্ট লক্ষ ছিল: ছবিতে ‘নেয়ার ফটোগ্রাফিক প্রিসিশন’-অনেকটাই ফটোগ্রাফির অনুপৃঙ্খ চিত্ররূপ থাকতে হবে। সাহিত্য উঠে আসবে রংতুলিতে।

দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি

এ পৃথিবী খুব সুন্দর এবং জীবন নিজেও সুন্দর, আমি আনন্দিত যে পৃথিবীতে বাস করেছি।
দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি একই সঙ্গে শক্তিশালী কবি ও চিত্রশিল্পী। তিনি প্রেমিকাকে বলতে পারেন, ‘তোমার চোখে শান্তি হাসে’ কিংবা ‘যেখানে তুমি নেই, জীবনই নেই’। দান্তে তার স্ত্রী এলিজাবেথ সিডালকে এতোই ভালোবাসতেন যে বারবার তাঁকেই এঁকেছেন।

হেলেন অব ট্রয়

১৮২৮ : জন্ম ১২ মে, লন্ডন
১৮৪০ : সাহিত্য ও ছবি আঁকা দুটোই পছন্দ
১৮৪৬ : রয়াল একাডেমির অ্যান্টিক স্কুলে ভর্তি
১৮৪৮ : দান্তে ও ছয় বন্ধুর প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড শিল্প আন্দোলন
১৮৬০ : ৩ মে এলিজাবেথ সিডালকে বিয়ে
১৮৬১ : স্ত্রীর মৃত সন্তান প্রসব, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা
১৮৬২ : এলিজাবেথ সিডালের মৃত্যু
১৮৭০ : দান্তের কবিতার বই প্রকাশিত
১৮৮১ : বাম পা ও বাম হাত প্যারালাইজড
১৮৮২ : ১০ এপ্রিল কেণ্ট-এ মৃত্যু
দ্য বিলাভড- দ্য ব্রাইড ১৮৬৫-৬৬

দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি তরুণী স্ত্রী এলিজাবেথ সিডালকে সমাহিত করার সময় কফিনের ভেতর তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের পা-ুলিপি ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এমনিতে শোকগ্রস্ত, এক সময় মনে হলো লেখার বিষয় খুঁজে পাচ্ছেন না, সাত বছর পর কবর খুঁড়ে পা-ুলিপি বের করলেন এবং কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করলেন।

শৈশবের দান্তে
শৈশবের পাঠ শেকসপিয়র ডিকেন্স, স্যার ওয়াল্টার স্পট, লর্ড বায়রন ও বাইবেল। তাঁর পছন্দ কবিতা এবং মধ্যযুগীয় ইতালির চিত্রকলা; পাঁচ বছর পড়লেন ড্রইং একাডেমিতে, তারপর রয়াল একাডেমির অ্যান্টিক স্কুলে এবং শিল্পী ফোর্ড ম্যাডক্স ব্রাউনের কাছে কিছু সময় শিক্ষানবিশী করলেন। র‌্যাফায়েন্সের আগেকার ইতালিয় ছবির যে সৌন্দর্য, আবেগ ও বস্তুনিষ্ঠতা তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা তাই পুঁজি করে গড়ে তুললেন সি র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড মুভমেন্ট।

ইতালির দান্তে
দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি ইতালির কবি দান্তের ডিভাইন কমেডি অনুবাদে হাত দিলেন। ১৮৪৯ সালে এলিজাবেথ সিডালকে মডেল করে দান্তের অভিমানী প্রেমিকা বিয়াত্রিচের একটি জল রং ছবি আঁকলেন। এই এলিজাবেথই হয়ে উঠেন দান্তের প্রণয়িনী ও অনুপ্রেরণার দেবী এবং স্ত্রী। ১৮৭২-এ আবার দান্তে-রিয়াত্রিচে যুগলকে আঁকেন-স্বর্গে তাদের মধুর মিলন।

ইলিয়াড ও অডেসির ভুবন
গ্রিক ইতিহাস এবং হোমারের ইলিয়াড ও অডেসি এবং গ্রিক পুরান তাঁর ছবিতে ফিরে ফিরে এসেছে। তাঁর হেলেন অব ট্রয় সারা পৃথিবীতেই হেলেনকে নিয়ে লেখা প্রায় সব কিছুর সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে শেকসিপয়রের চরিত্রও তার ছবির বিষয় হয়ে উঠেছে। ১৮৭৭ সালে অসুস্থ অবস্থায় সূর্যাস্তকে পেছনে রেখে তিনি আঁকেন নীল বসন ভেনাস।
দ্য সি স্পেল

শেষ দিনগুলো
১৮৭২ নার্ভাস ব্রেকডাউন থেকে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন। শেষদিকে তিনি বিশাল বাগানবাড়িতে নিজেকে অনেকটা বন্দি করে রাখেন। পক্ষাঘাতের কারণে পেইন্ট ব্রাশ, রঙ, ইজেল-এসবের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন, কিন্তু তার হাত চলেনি।

কয়েকটি সেরা ছবি : দ্য গার্লহুড অব ম্যারি ভার্জিন, প্রোসারপাইন, বিটা বিট্রিক্স, ল্যাডি লিলিথ, দ্য বিলাভড- দ্য ব্রাইড, দ্য ডে ড্রিম, দ্য সি স্পেল, হেলেন অব ট্রয়।

জন এভারেট মিলেইস

জন এভারেট মিলে

জন এভারেট মিলেইস বলেন, ‘স্টুডিও থেকে ক্যানভাসকে প্রকৃতিতে নিয়ে যাও’। প্রকৃতি যেভাবে নিজেকে সাজিয়েছে সেই অনুপুঙ্খ চিত্র রঙ তুলিতে তুলে আনার যে ভিক্টোরিয়ান আন্দোলন- প্রি-র‌্যাফালাইট মুভমেন্ট তার প্রধান কারুকার জন এভারেট মিলেইস। ‘তোমার যা আঁকার কথা যদি তা ক্যানভাসে উঠে না আসে, তোমার পেইন্টিং যতো সুন্দরই হোক তাতে কিছু এসে যায় না’- শুদ্ধতাবাদী জন এভারেট মিলেইস এভাবেই নস্যাৎ করে দেন বহু সুন্দর ছবি, তিনি বলেন, তাতে আমার আঁকা অর্ধেক ছবিও যদি মহাসাগরে তলিয়ে দিতে হয়, আপত্তি নেই।

ওফেলিয়া ১৮৫২

১৮২৯ : জন্ম ৮ জুন ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন
১৮৪০ : ১১ বছর বয়সে রয়াল একাডেমিতে শিক্ষানবিস শিল্পী হিসেবে যোগদান
১৮৪৮ : প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড আন্দোলনের সূচনা
১৮৪৯ : প্রথম প্রি-র‌্যাফালাইট প্রদর্শনী, লরেঞ্জা অ্যান্ড ইসাবেলা ১৫০ পাউন্ডে বিক্রি
১৮৫১ : প্রি-র‌্যাফালাইট ছবির সমর্থনে জন রাস্কিনের প্রবন্ধ
১৮৫২ : বিখ্যাত কাজ ওফেলিয়া
১৮৫৩ : রাক্সিনের প্রতিকৃতি অঙ্কণ
১৮৫৪ : রস্কিনের স্ত্রী এফিকে বিয়ে
১৮৬০ : দ্য ব্ল্যাক বার্নসউইকার অঙ্কন, ১০০০ গিনিতে বিক্রি
১৮৭০ : চার্লস ডিকেন্সের প্রতিকৃতি অঙ্কণ
১৮৮০ : ছবি এঁকে বার্ষিক আয় ৩০,০০০ পাউন্ড, একটি রেকর্ড
১৮৮৫ : নাইটহুড প্রাপ্তি-স্যার জন এভারেট মিলেইস
১৮৯৬ : রয়াল একাডেমির প্রেসিডেন্ট
১৩ আগস্ট গলনালীর ক্যান্সারে মৃত্যু
২০ আগস্ট সেইন্ট পল গির্জায় সমাহিত

দ্য ইভ অব সেইন্ট এগনেস

বিস্ময়কর শিশুমেধা জন এভারেট মিলেইসকে এগার বছর বয়সেই সেলিব্রেটিতে পরিণত করেছিল। এতো কম বয়সে রয়াল একাডেমি অব আর্টস-এ শিক্ষানবিসী করার সুযোগ পাওয়া অবিশ্বাস্যই মনে হবার কথা।

ধণাঢ্য বাবা এবং শিল্পমনা মা ছেলের জন্য উজাড় করে সম্পদ ও শ্রম ঢেলে দিয়েছেন। বন্ধু হিসেবে তিনি পেয়েছেন উইলিয়াম হোলম্যান হান্টকে। মিলের বাড়িতে একটি গ্রিনহাউসকে স্টুডিওতে রূপান্তরিত করা হয়। দুই বন্ধু জন রাস্কিনের মডার্ন পেইন্টার্স বইটি পড়ে সিদ্ধান্ত নেন, অবশ্যই তাদের প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ত হতে হবে।

তাঁদের সাথে যোগ দিলেন দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি; স্টুডিওতে নয়, প্রকৃতির স্টুডিওতে গিয়ে ল্যান্ডস্কেপ আঁকতে হবেÑযেমন আছে তেমন। তারাই শুরু করলেন ভিক্টোরিয়ান যুগের প্রি-র‌্যাফালাইট ব্রাদারহুড আন্দোলনÑপিআরবি। মিলেইস তার লরেঞ্জো ও ইসাবেলা ছবির নিচে লিখলেন পিআরবি।
চেরি রাইপ

ওফেলিয়ার অমরত্ব

চিত্রকলায় মৃত ভাসমান ওফেলিয়ার অমরত্ব এসেছে মিলেইসের হাতে। ১৮৫১-তে তিনি যখন ছবিটি আঁকছিলেন তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির হবার সমন জারি করা হয়-তিনি অরণ্যে অবৈধভাবে প্রবশে করেছেন এবং ঘাস ও খড় মাড়িয়েছেন। ১৯ বছর বয়স্ক এলিজাবেথ সিডাল ভাসমান মডেল হয়েছিলেন। তিনি ঠা-ায় এতোই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাকে সুস্থ করতে মিলেকে ৫০ পাউ- ডাক্তারের ফি দিতে হয়েছে। এলিজাবেথের বাবা মিলেইসের বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। সে বছরই ডিসেম্বরে ছবিটি ৩০০ গিনিতে বিক্রি হয়। এখন এই ছবির মূল্য কমপক্ষে ৩০ মিলিয়ন ডলার।

ছবি এঁকে ধনী
মিলের সময়ে জীবদ্দশায় খুব কম শিল্পীই ছবি বিক্রি করে ধনবান হয়েছেন, ব্যতিক্রম জন এভারেট মিলেইস। তাঁকে দিয়ে পোর্ট্রেট আঁকাবার জ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের লাইন পড়ে থাকত। পোর্ট্রেেটর জন্য তাঁর সামনে এসে বসেছেন বি্েরটেনের দ’ুজন ভাবি প্রধানমন্ত্রী- ডিজরেলি এবং গ্ল্যাডস্টোন; লর্ড টেনিসন, আর্থার সুলিভান, হেনরি আরভিং।

দ্য ফার্মার্স ডটার

পিআরবি’র ভাঙ্গন
জন এভারেট মিলেইসের দ্রুত সাফল্য এবং রয়াল একাডেমিতে যোগদান দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটিও হোলম্যান হান্ট ভালোভাবে নেননি। ১৮৬০ সালে মিলেইস নিজেই এই ধারা থেকে বেরিয়ে স্যার যশুয়া বেয়নল্ড ও র‌্যামব্রান্টকে আরাধ্য মনে করতে থাকেন। মিলেইস শিল্পের প্রতি সৎ থেকেছেন এবং ক্যানভাসে কোনোদিন ব্রাশের অপ্রয়োজনীয় আঁচড়ে দেননি।

কয়েকটি সেরা ছবি : ওফেলিয়া, খ্রাইস্ট ইন দ্য হাউস অব হিজ প্যারেন্টস ম্যারিয়ানা, ইসাবেলা, অটাম লিভস, দ্য অর্ডার অব রিলিজ, দ্য ব্লাইন্ড গার্ল, দ্য ব্ল্যাক বার্ণসউইকার, দ্য বাবল, দ্য নর্থ ওয়েস্ট প্যাসেজ, চিল অক্টোবর, এসথার, দ্য ভেইল অব রেস্ট, ভ্যানেসা।

জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউস
জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউস

নারীকে কতো মনোমুগ্ধকর ভাবে উপস্থাপন করা যায় জন উইলিয়াম ওয়াটার হাউসের আঁকা নারী প্রতিকিৃতিগুলো না দেখলে তা অজ্ঞাতই থেকে যাবার কথা। তবুও জন উইলিয়াম ওয়াটার হাউস একই ধারার ছবি যারা এঁকেছেন সেই প্রি-র‌্যাফেলাইট ব্রাদারহুডের সদস্যদের মতো ততোটা সমাদৃত নন। কারণটা কি এই যে তিনি খুব খুব জনপ্রিয়? তার আঁকা দ্য লেডি অব শ্যালড-এর পোস্টকার্ডের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। খুব জনপ্রিয় উপন্যাসিক যেমন অনেক ক্ষেত্রেই বড় লেখক নন, তাঁর ব্যাপারটা হয়তো সেরকমই।

দ্য লেডি অব স্যালট

১৮৪৯ : জন্ম ৬ এপ্রিল (ব্যাপটাইজড হবার তারিখ) ইতালির রোমে
১৮৫৪ : ওয়াটারহাউস পরিবারের লন্ডনের সাউথ কেনসিংটনে বসতি স্থাপন
১৮৭১ : ভাস্কর্য শেখার জন্য রয়াল একাডেমি অব আর্ট স্কুলে ভর্তি
১৮৭৪ : রয়াল একাডেমির প্রদর্শনীতে তাঁর স্লিপ অ্যান্ড হিজ হাফ ব্রাদার ডেথ
১৮৮৩ : এসথার নেওয়ার্থিকে বিয়ে, এসথার তখন ২৫, শিল্পী ৩৪
১৮৮৫ : রয়াল একাডেমির ‘ফুল একামেমিশয়ান মনোনীত
১৮৮৮ : দ্য লেডি অব শ্যালট অঙ্কন
১৮৮৮ : রয়াল একাডেমিতে ‘ওফেলিয়া’ প্রদর্শন
১৮৯৪ : পুনরায় ওফেলিয়া অঙ্কন, পুনরায় ১৯০৯ ও ১৯১০ সালে
১৯০৮ : দ্য সৌল অব দ্য রোজ অঙ্কন
১৯১৫ : ক্যান্সার সনাক্ত
১৯১৬ : ক্রিস্তা অ্যান্ড ইমোলডে, মিরান্ডা অঙ্কন
১৯১৭ : মৃত্যু ১০ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের কেনসাল গ্রিন সিমেট্রিতে সমাহিত

বছরটা শিল্পের জন্য স্মরণীয়-উইলিয়াম হোলম্যান হান্ট, দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি জন এভারেট মিলেইস প্রি-ব্যাফেলাইট ব্রাদারহুড আন্দোলনের ঘোষণা দিলেন। ইংল্যান্ডের বন্ধা পেইন্টিং-এর ভুবনে সারা পড়ে গেল। সে বছরই চিত্রশিল্পের তীর্থ রোমে শিল্পী দম্পতি উইলিয়াম ও ইসাবেলা ওয়াটারহাউসের সস্তান জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউসের জন্ম। তিনি প্রি-র‌্যাফালাইটদের শৈলী ও ফর্মুলা আংশিক নিলেন, গ্রিক ও রোমান ধ্রুপদ ও রোমান্টিক ধারা থেকে আংশিক। জীবদ্দশায় এবং মরণোত্তর অত্যন্ত জনপ্রিয় এই শিল্পীর কাজকে চিহ্নিত করা হলো মর্ডান প্রি-র‌্যাফালাইট শিল্পকর্ম হিসেবে।
হাইলাস উইথ অ্যা নিম্ফ

দ্য অ্যওয়েকেনিং অর আডোনিস

ইংল্যান্ডের সেরা মডেলদের পছন্দ ওয়াটারহাউস

স্ত্রী এসথার সৎ বোন ম্যারি ও জেসি তো ওয়াটারহাউসের জন্য মডেল হয়েছেনই, আরো এগিয়ে এসেছেন: এলিস আর্থার, মুরিয়েল ফস্টার, গোয়েন্ডোলিন গান, এডিথ রিচার্ডসন, মেরি লয়েড, ক্যাথি বেকার এবং সেকারের খ্যাতনামা আরো অনেকেই।
মিরান্দা

ছবির উৎস সাহিত্য

জন উইলিয়াম ওয়াটার হাউসের অনেক ছবির উৎস বাইবেল, ইতিহাস, পুরাণ, বোক্কাচিত্ত, শেকসপিয়ার, কিটস এবং টেনিসন। রোমান্টিক প্রেক্ষাপটে আঁকা দ্য লেডি অব শ্যালট আলফ্রেড লর্ড টেনিসনের ১৮৩২ সালে লেখা কবিতা আরো ৫৬ বছর পর শিল্পীর হাতে মূর্ত হয়েছে। ১৮৯৪ এবং ১৯১৫ সালে অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি দ্য ল্যাডি অব শ্যালট এঁকেছেন। ১৮৮৮-এর তৈল চিত্রটি স্যার হেনরি টেট ১৮৯৪ সালে টেট গ্যালারিকে দিয়ে দেন।
মারমেইড

ওয়াটারহাউস হ্যামলেটের ওফেলিয়াকে এঁকেছেন চারবার, তাঁর হাতে দু’বার উঠে এসেছে দ্য টেম্পেস্টের মিরান্দা, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের জুলিয়েট। অসুস্থতার কারণে ওফেলিয়া ইন চার্চ ইয়ার্ড- ছবিটি শেষ করে যেতে পারেননি।

কয়েকটি সেরা ছবি : ওফেলিয়া (৪টি), দ্য লেডি অব স্যালট, দ্য এনচান্টেড গার্ডেন, সেইন্ট উইালিয়াম, দ্য সৌল অব দ্য রোজ, গেদারিং সামার ফ্লাওয়ার্স ইন অ্যা ডেভনশায়ার গার্ডেন, সাইকি ওপেনিং দ্য গোল্ডেন বক্স, নিমফস ফাইন্ডিং দ্য হেড অব অর্ফিউস, ইকো অ্যান্ড নার্সিমাস, স্লিপ অ্যান্ড হিজ হাফ ব্রাদার ডেড, মিরান্দা, ফেয়ার রোজমুন্ড আফটার দ্য ভ্যাস, হেলন অব ট্রয়, ক্যাসান্ড্রা মিডিয়া, দ্য অ্যাঞ্জেল অব ডেথ, হাইলাস উইথ অ্যা নিম্ফ, মার্মেইড, দ্য অ্যওয়েকেনিং অর আডোনিস ।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর