Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসন্তে ভালোবাসায় অনন্য এক দিন

ফিচার ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭

পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস-দুটিতে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ‘ভালোবাসা’। একটু গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যায়, প্রকৃতি ও বিশেষ মানুষের প্রতি ভালোবাসা আলাদা ‘কিছু’ নয়। ভালোবাসার ধরন ভিন্ন হতে পারে। তবে দুটো-ই মানুষের অনুভূতি ও মর্মে প্রবলভাবে নাড়া দেয়।

আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। একটি বাঙালি সংস্কৃতি, অন্যটি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে; একটি প্রকৃতিকে বরণ করার আর অন্যটি আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দিন- এবার দুই-ই মিলেমিশে একাকার। আর এ কারণে আনন্দও যেন দ্বিগুণ!

বিজ্ঞাপন

আজকের দিনটি সবার কাছেই অন্যরকম। প্রকৃতির রঙে ভালোবাসাকে রাঙিয়ে তোলার দিন। কে, কোন উৎসবকে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেই অংক একেবারেই বাদ। উৎসব যাই হোক, ‘পালন’ই বড় কথা। আর উৎসব পালন করার ব্যাপারটি একান্তই ব্যক্তিগত।

পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস- কার কাছে কেমন? তরুণ, ছাত্র, প্রেমিক কী মধ্যবয়স পেরিয়ে যাওয়া মানুষ- এই দিনটি নিয়ে কে, কীভাবে ভাবছেন? সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভালোবাসা দিবস ও পহেলা বৈশাখের তাৎপর্যই বা কেমন? এই বিষয়গুলো নিয়েই আজকের এই লেখা।

দিবস পালনের রেওয়াজ

প্রাচীন আমল থেকেই এদেশে পহেলা ফাল্গুন পালন করা হতো। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালন করার রীতি চলে আসছে। ১৪০১ বঙ্গাব্দে এদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ পালিত হয়।

অন্যদিকে, ভালোবাসা দিবস অতীতে মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অংশ ছিল। তবে ‘ভালোবাসা’ কোন দেশ বা জাতি নয়। তাই ধীরে ধীরে এই দিবসও আমাদের সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। ২৪৬ সালে ইতালীর রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন পাদ্রী চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তাকে বন্দী করা হয়। বন্দী অবস্থায় থেকে তিনি কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পরবর্তীতে দেশে দেশে এই দিবসটি পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

দিনটি কার কাছে কেমন?

অপূর্বা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। এই দিনটি তার কাছে কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বরাবরই পহেলা ফাল্গুন পালন করে আসছি। সত্যি কথা বলতে যাদের সঙ্গী আছে, মানে প্রেমিক বা প্রেমিকা আছে তারাই কেবল ভালোবাসা দিবস ঘটা করে পালন করেন। আর পহেলা ফাল্গুন সবার কাছেই বিশেষ।’

অপূর্বার মতো শুধু পহেলা ফাল্গুন নয়, বরং দুটো দিবসকে একইভাবে পালন করার পক্ষপাতি তরুণদের সংখ্যাও কম না। এই প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তুহিন সাইফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফাল্গুন আমাদের বাঙালি ঐতিহ্যের অংশ। আর প্রেম হলো মানুষের সহজাত প্রবণতা, একে প্রবৃত্তিও বলা যায়। ফলে দিনটিকে আনন্দময় করে তুলতে ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

ভালোবাসা আর বসন্ত- উদযাপনে পিছিয়ে থাকবে না কোন উৎসব। তবুও বাঙালি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে বসন্ত বন্দনাকেই এগিয়ে রাখছেন কেউ কেউ।

সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে দিনটি কেমন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা পারভীন বলেন, ‘পহেলা বসন্তে চারদিকে হলুদ, কী যে ভালো লাগে! এটা আমাদের অরিজিন ধরে রাখে। অন্যদিকে ভালোবাসা চিরন্তন। আমাদের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই চারটি শব্দের সম্মিলন থাকে। ভালোবাসা দিবস পালন করার রেওয়াজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে আসতে পারে। তবে ‘ভালোবাসা’র কোন দেশ, কাল, পাত্র নেই। ভালোবাসার প্রকাশ একেক দেশে একেকরকম হতে পারে। কিন্তু ভালোবাসা চিরন্তন। এই দিবসটি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।’

ফাতেমা রেজিনা পারভীন বলেন, ‘আমরা তো থার্টি ফাস্ট উদযাপন করি। তাই বলে পহেলা বৈশাখের মাহাত্ম্য কমে যায় না। বাস্তব একটি উদাহরণ দিই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের দোকানগুলোতে ভাত-ভর্তা- ডাল দুপুর ২ টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। আর বার্গারসহ অন্যান্য ফাস্টফুড অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকে। বিদেশী খাবার যত ভালোই হোক, দেশী খাবারের প্রতি আমাদের টান একটু বেশি-ই।’ তিনি আরও বলেন, ‘উৎসবের বিষয়ের চেয়ে পালনই আমাদের কাছে বড়। কারণ তাতে অনেক প্রাণের সম্মিলন ঘটে।’

উৎসব পালনের কেন্দ্রবিন্দু ‘অর্থ’

যেকোন উৎসব পালনের কেন্দ্রবিন্দুই হলো অর্থ—এমনই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা হোসেন। তিনি বলেন, ‘টাকা থাকলে উৎসব পালনের প্রতি আগ্রহও বেশি থাকে। যেমন আজ থেকে ২০ বছর আগে আমি এসব পালন করার কথা ভাবতেও পারতাম না। আমার সেই সামর্থ্য ছিল না। আমার মা, নানীরা তো কল্পনাও করতে পারতেন না।’ মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা উৎসব পালনের অন্যতম প্রধান ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্বায়নের ফলে ভালোবাসা দিবস পালনের ব্যাপারটি আমাদের দেশে চলে এসেছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আফরোজা হোসেন বলেন, ‘বিশ্বায়নের ফলে ভালোবাসা দিবস আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়েছে। তবে আমি মনে করি, ভালোবাসা প্রতিদিনের। এজন্য কোন আনুষ্ঠানিকতার দরকার হয় না। তবে আমরা যেহেতু ইতিবাচক আবেগ প্রকাশের দিকে জোর দেই, তাই এই দিবসটিও পালন করি।’

মনোবিজ্ঞানী কী বলছেন?

মনোবিজ্ঞানী ড. আফরোজা হোসেন বলেন, ‘মানুষ ভালো কিছু উপভোগ করতে চায়। সেক্ষেত্রে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একইদিনে পড়ায় মানুষ আরও উপভোগ করবে। দিবসটি আবেগ প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে ধরা দেবে। আগে এই দিবসগুলো এতটা ঘটা করে পালন হতো না। সংস্কৃতিতে খুব দ্রুত পরিবর্তন এসেছে। ফলে এই দিবসগুলো উদযাপনের ব্যাপারটিও চলে এসেছে।’

ভালোবাসা হলো এক ধরনের প্রতিজ্ঞা। আর বসন্ত হলো প্রকৃতির বন্দনা। বসন্ত আর ভালোবাসার মিশেলে আজকের দিনটি হোক অনন্য। বসন্তের নির্মলতায় ভালোবাসা হোক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

সারাবাংলা/এসবিডিই

বসন্তে ভালোবাসায় অনন্য এক দিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর