Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গল

আসিফ আল নাঈম
১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩১

শ্রীমঙ্গল মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। যদিও আমাদের কাছে মৌলভীবাজার জেলার থেকে শ্রীমঙ্গল নামটিই বেশি পরিচিত। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। আর এখন যেহেতু শীতকাল, ভ্রমণের কাল, তাই চলুন জেনে নিই কীভাবে শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান গুলোতে একদিনে ঘুরে আসা যায়।

পাহাড়, রেইন ফরেস্ট আর হাওড় ঘেরা এই শ্রীমঙ্গল চায়ের জন্য বিখ্যাত হলেও আমরা অনেকেই জানি না এখানে চায়ের পাশাপাশি রাবার, আনারস এবং লেবুর খুব ভালো ফলন হয়। তাছাড়া শ্রীমঙ্গলের পাশেই রয়েছে একসময়ের বৃহত্তর সিলেটের মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত হাইল হাওরের বাইক্কা বিল। যারা শ্রীমঙ্গলে বিলাস বহুল ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল, হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান, দুসাই রিসোর্স্ট এন্ড স্পা ইত্যাদি। অনেক কিছুই তো জানা হলো এবার ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে যান শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের জন্য। তবে হ্যাঁ ভ্রমণ সাশ্রয়ী করতে চাইলে ৮ থেকে ১০ জনের গ্রুপ করে ট্রেনের টিকেট কেটে ফেলুন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা, দুই ট্রেন রুটেই পাবেন সিলেটগামী ট্রেন। ঢাকা থেকে সিলেট রুটে কালনী এক্সপ্রেস (শুক্রবার বন্ধ) আর চট্টগ্রাম থেকে সিলেট রুটে উদয়ন এক্সপ্রেস (শনিবার বন্ধ) এ উঠে গেলে আপনাকে সকাল ভোরে নামিয়ে দিবে শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন। ট্রেনের টিকেট না পেলে সিলেটগামী বাসে চেপে চলে আসুন শ্রীমঙ্গল। আপনি যদি বাসে আসেন সেক্ষেত্রে বাস আপনাকে নামিয়ে দিবে চৌমোহনাতে। চৌমোহনা এবং রেলস্টেশন হাঁটার রাস্তায় ৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত, তাই চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন

শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন

শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন থেকে বের হয়ে পাশেই পেয়ে যাবেন সকালে নাস্তা করার জন্য দুইটি মোটামুটি মানের হোটেল। সেখান থেকে সেরে নিতে পারেন আপনার সকালের নাস্তা। আর যদি ভালো মানের ভালো হোটেলের খাবার চান তাহলে রেলস্টেশন থেকে সোজা রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকুন চৌমোহনার দিকে। কাছেই পেয়ে যাবেন কিছু ভালো মানের হোটেল। আর নয়তো গুগল ম্যাপ চালু করে ১০ মিনিট হেঁটে চলে যান বিখ্যাত পানসি রেস্টুরেন্টে।

বিজ্ঞাপন

সকালের নাস্তা করতে যাওয়ার সময় বা নাস্তা শেষে শ্রীমঙ্গলে দিনব্যাপী ভ্রমণের জন্য জীপ ভাড়া করে নিন। রেল স্টেশনের বাইরে থেকে শুরু করে চৌমোহনা এবং পানসি রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত রাস্তার পাশে এগুলোর দেখা পাবেন। আপনারা যদি সংখ্যায় ২ থেকে ৫ জন হন, তাহলে সিএনজি হবে আপনাদের জন্য উপযুক্ত বাহন। কোন কোন দর্শনীয় স্থানে যাবেন তা ভেদে সিএনজি ১ হাজার থেকে ১২ শ এবং জীপ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে রাখে*। দরদাম কষে জীপ/সিএনজি ঠিক করার পর জীপ/ সিএনজিতে করে বেরিয়ে পরুন দর্শনীয় স্থানগুলোর উদ্দেশ্যে।

ওই দেখো, এখনোতো আপনাদের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কেই বলা হয়ে উঠেনি। চলুন তাহলে এবার দর্শনীয় স্থানগুলোর কোনটার পর কোনটায় ঘুরবেন সেটা জেনে নেয়া যাক।

বাইক্কা বিলের একাংশ

বাইক্কা বিলের একাংশ

মাধবপুর লেকে শাপলা ফুল।

মাধবপুর লেকে শাপলা ফুল

 

লাল পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা

লাল পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা

 

BTRI এর গবেষণা প্রকল্পের চা বাগান

BTRI এর গবেষণা প্রকল্পের চা বাগান

 

আদি নীলকন্ঠ চা কেবিনের ৭ রঙয়ের চা

আদি নীলকণ্ঠ চা কেবিনের ৭ রঙয়ের চা

বধ্যভূমি ৭১

বধ্যভূমি ৭১

ভোরের কুয়াশা মাখা বাইক্কা বিলের সৌন্দর্য অবলোকন করতে চাইলে প্রথমেই চলে যেতে হবে বাইক্কা বিলে। বাইক্কা বিলে সম্পূর্ণ সকালটা কাটিয়ে তারপর চলে যান বিখ্যাত স্পট লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভালোভাবে ঘুরে শেষ করতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে। বাইক্কা বিল আর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এই দুইটি জায়গা চেষ্টা করবেন দুপুরের মধ্যে ঘুরে শেষ করার। কারণ তো সবারই জানা শীতকাল ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত হলেও এর একটি খারাপ দিক হলো শীতকালের দিন ছোট। যাই হোক, লাউয়াছড়া উদ্যান ঘুরা শেষ হলে ড্রাইভারকে বলুন একটি ভালো খাওয়ার হোটেলের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সাথে এটাও মনে করিয়ে দিবেন আপনাদের পরবর্তী গন্তব্য হবে মাধবপুর লেক। খাওয়ার হোটেল যদি এর মাঝামাঝি হয় তাহলে সেটা আপনাদের জন্যই ভালো, সময় বাঁচবে। আর হ্যাঁ, ড্রাইভারের খাওয়ার বিল কিন্তু আপনাদেরকেই দিতে হবে। খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে এবার বেরিয়ে পরুন মাধবপুর লেকের উদ্দেশ্যে। মাধবপুর লেক থেকে এরপর যথাক্রমে যাবেন নূর জাহান টি স্টেট, লাল পাহাড়, বি টি আর আই, আদি নীলকন্ঠ চা কেবিন এবং বধ্যভূমি-৭১। আদি নীলকন্ঠ চা কেবিনের ৭ রঙয়ের চা দেশব্যাপী বিখ্যাত। তবে খেয়াল রাখবেন ওদের একটা শাখা কেবিন আছে ওখানে না গিয়ে প্রধান শাখায় যাওয়াটাই উত্তম হবে। এসব দর্শনীয় জায়গায় যাওয়ার পথে চারপাশের রাবার বাগান, চা বাগান, গাছগাছালি ঘেরা রাস্তা দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।

সবগুলো স্থান ঘুরাশেষে জীপ/সিএনজি ড্রাইভার আপনাকে নামিয়ে দিবে আপনার গন্তব্য অনুযায়ী শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন বা বাস স্টেশনে। হাতে সময় থাকলে আশেপাশে একটু ঘুরে দেখতে পারেন, আর চাইলে আশেপাশের অসংখ্য দোকান থেকে বাছাই করে কিনে নিতে পারেন চা পাতা। তারপর সন্ধ্যার নাস্তা সেরে চেপে পড়ুন বাসে বা ট্রেনে। আর যদি নিজেকে খুব বেশি ক্লান্ত মনে হয়, আর হাতে থাকে পর্যাপ্ত টাকা, তাহলে রাতটি শ্রীমঙ্গলে কাটিয়ে পরদিন আবার বাদ পরে যাওয়া কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে (যেমন: সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, হাম হাম ঝর্ণা ইত্যাদি) ফিরে যান আপন নীড়ে, জাঁপিয়ে পরুন নতুন উদ্যামে আপনার দৈনন্দিন কার্যকলাপে।

*এখানে উল্লেখিত ভাড়া বছরখানেক পুরোনো ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে লেখা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্যের জন্য ভাড়ার তারতম্য হতে পারে।

টিপস: আপনি চাইলে সময় বেশি নিয়ে শ্রীমঙ্গল এবং সিলেট একবারে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। যেকোন জায়গায় ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই ঐ এলাকা এবং বাজেট সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে যাবেন। দর্শনীয় স্থান সহ যত্রতত্র ময়লা ফেলে সুন্দর বাংলাদেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য অবাসযোগ্য করে তুলবেন না।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এজেডএস

আসিফ আল নাঈম শ্রীমঙ্গল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর