কোরবানির আগের কেনাকাটা
৫ জুলাই ২০২২ ১২:২৭ | আপডেট: ৫ জুলাই ২০২২ ১৮:০৫
দরজায় কড়া নাড়ছে ইদুল আযহা। এই উৎসবের পুরোটাই পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে। কোরবানি, রান্না, অতিথি আপ্যায়ন- সব মিলিয়ে ইদুল ফিতরের চাইতে এই ইদে কাজের ঝামেলাও বেশি। কেনাকাটাও করে রাখতে হয় অনেককিছু। এর মধ্যেও শেষ মুহূর্তে নানা ঝামেলা আসে। দেখা গেল হঠাৎ করেই মনে পড়ছে, ছোটখাট অনেক কিছুই কেনা হয়নি। এটা কিনেছেন তো, ওটা কিনতে একদমই ভুলে গেছেন। এই ইদে কোরবানি, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের বাড়িতে মাংস বিতরণ, দুস্থদের সাহায্য করা ইত্যাদি নানা চাপের মাঝে নতুন করে কোনও কিছুর অভাব আপনাকে শুধু ভোগাবেই না, বরং বেশ বিরক্ত করে তুলবে, কাজের স্বাভাবিক গতিও নষ্ট করে ফেলতে পারে।
তবে আপনার সারাদিনের ব্যস্ততা অনেকাংশেই কমে যাবে যদি আগে থেকেই প্রস্তুত থাকেন। কোরবানির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য বিশেষ কিছু টিপস রইলো সারাবাংলার পাঠকদের জন্য-
রান্নাঘরের স্ট্যাটাস জানুন
প্রথমেই দেখে নিন আপনার রান্নাঘরের অবস্থা। ইদের ঝামেলাহীন আয়োজনে ঠিক কী কী জিনিস আপনার প্রয়োজন, কোন জিনিসটা আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না বা আপনার নেই তা দেখে নিন এবং একটা তালিকা তৈরি করে ফেলুন। পছন্দের খাবার রান্না করতে যেসব উপাদান লাগবে দেখে নিন তার সব কটি আছে কিনা। মাংস রাখার জন্য পর্যাপ্ত পলিথিন বা অন্যান্য সামগ্রীর যোগান দেখুন। এরপর তালিকামতো জিনিসগুলো নিয়ে আসুন আগেই।
মসলার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ রাখুন
কোরবানির মাংসের বিভিন্ন পদ রান্নার জন্য আগেভাগেই মসলার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ রাখুন। অত্যাবশ্যকীয় মসলা যেমন কাবাব মসলা, আস্ত অথবা গুঁড়া গরম মসলা কিনে রেখে দিন। ভেজা মসলা মানে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, জিরা আগে থেকেই কেটে বেটে বা ব্লেন্ড করে নিন। ভেজা মসলাগুলো ব্লেন্ড করে ছোট ছোট বক্স বা আইস-কিউব বক্সে রেখে বরফ করে এরপর সেগুলোকে জিপ-লক ব্যাগ বা পলি ব্যাগে রেখে দিতে পারেন। এতে প্রয়োজনের সময় ১–২টা মসলার কিউব দিয়ে সহজেই তরকারি রান্না সেরে ফেলতে পারবেন।
ঘরে আরেকবার চোখ বুলান
কোরবানির ইদে অতিথি আপ্যায়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বসার ঘরে সবকিছু ঠিকমতো আছে কিনা দেখে নিন। আপনার পছন্দমত ম্যাচিং পর্দা, সোফা এবং কুশন কাভারগুলো ঠিক আছে কিনা একবার যাচাই করে নিন। কোনটা দরকারি এবং কেনার প্রয়োজন বোধ করলে সাথে সাথে তালিকায় লিখে রাখুন জিনিসটির নাম। শোবার ঘরের দিকেও একটু নজর দিন। সবকিছু ঠিকমতো আছে কিনা, নতুন কিছু লাগবে কিনা এসব বিষয়ের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
কাটাকাটির সরঞ্জাম রাখুন আপ টু মার্ক
কোরবানির মাংস কাটাকুটির জন্য দরকার ধারালো ছুরি, বঁটি ও কাটাকাটির অন্যান্য সামগ্রী। তাই এখনই এইগুলোতে ধার করিয়ে, পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে। একটি বড় পাত্রে ফুটানো পানিতে সব সরঞ্জাম ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখতে পারেন অথবা পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন যাতে জীবাণু আর না থাকে।
কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছুরি বা মাংস টুকরা করায় ছুরির দরকার পড়ে। তাই বাসায় ভালো লোহার ছুরি আছে কিনা দেখে নিন। না থাকলে কিনে ফেলুন আর থাকলে ভালো মতো শান দিয়ে রাখুন। কোরবানির মাংসকে ছোট ছোট করে কাটার জন্য দা বা বটি অবশ্যই প্রয়োজন তাই হাতের কাছে না থাকলে ধার করে প্রস্তুত রাখুন।
কোরবানির মাংস কাটার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চাপাতি। শক্ত হাড় কাটায় চাপাতির জুড়ি নেই। আপনার ঘরে পুরোনো চাপাতি থাকলে তা ইদের আগেই ধার করে রাখুন আর না থাকলে নতুন চাপাতি কিনে ফেলুন। রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকেই ২০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে ভালো চাপাতি পেয়ে যাবেন।
প্রস্তুত রাখুন মাংস কাটার সরঞ্জাম
কসাইরা সাধারণত মাংস কাটার জন্য কাঠের খাটিয়া ব্যবহার করে থাকে। কসাইয়ের সাথে আগেই কথা বলে রাখুন। যদি কসাই খাটিয়া না নিয়ে আসে তাহলে আগেই কিনে রাখুন। ৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মাপের ও ওজনের খাটিয়া বাজারে পাওয়া যায়। তেঁতুল গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও মজবুত হওয়ায় সাধারণত তেঁতুল কাঠ দিয়ে খাটিয়া তৈরি করা হয়।
মাংস কাটার জন্য ও রাখার জন্য বড় বড় পাটি বাজারে পাওয়া যায়। তাই ইদের আগেই পাটি কিনে রাখুন এবং ব্যবহারের পর যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
ছোটখাট দুর্ঘটনায় ঘাবড়াবেন না
মাংস কাটার সময় হাত-পা কাটার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতি বছরই কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে অসাবধানতায় হাত-পা কেটে হাসপাতালে যেতে হয় অনেককেই। তাই আগে থেকেই ব্যান্ডেজ, স্যাভলন, তুলা কিনে হাতের কাছে রেখে দিন। যেভাবেই ক্ষত তৈরি হোক না কেন, শরীরের কোথাও কেটে যাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে করণীয় হলো- রক্তপাত বন্ধ করা এবং সংক্রমণ যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আর বড় দুর্ঘটনায় দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
পরিচ্ছন্নতার সরঞ্জাম ভুলবেন না
মাংস ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় শরীর, কাপড় ও ঘরের মেঝেতে রক্ত লেগে যেতে পারে। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে পশুর রক্তে কাপড়চোপর নষ্ট হয়ে যাবার একটা ভয় থেকে যায়। অসাবধানতার কারণে বড়দেরও কাপড়ে লাগতে পারে রক্তের দাগ। এসব দাগ উঠাতে বাজারে বিভিন্ন পাউডার পাওয়া যায়। আগেভাগেই কিনে রাখুন এসব পাউডার। এছাড়া খেয়াল রাখুন, খুব বেশি সময় পর্যন্ত যেন এভাবে রক্ত লেগে না থাকে। রক্ত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ত্বকে লেগে থাকলে চুলকানি এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। কাজ শুরুর আগে পাতলা গ্লাভস পরে অথবা যত দ্রুত সম্ভব সাবান দিয়ে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন। মেঝে পরিষ্কার করতে গরম পানি, জীবাণুনাশক এবং ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা ভালো।
এসব ছাড়াও বাসার পরিচ্ছন্নতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। কোরবানি পরবর্তী দিনগুলিতে বাসা পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্লিচিং পাউডারসহ পরিষ্কারক ও জীবাণুনাশক দ্রব্য কিনে রাখুন।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অংকিতা চৌধুরী ইদুল আযহা কেনাকাটা কোরবানির আগের কেনাকাটা লাইফস্টাইল