মানুষ মিথ্যে বলে, লুকায়, ভুল করে— এসব তো সম্পর্কের স্বাভাবিক ওঠানামা। কিন্তু ধোঁকা? শব্দটা শুনলেই একটা ভারী, ব্যথা-ধরা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে মনে। আমরা বিশ্বাস ভর করে সম্পর্ক গড়ে তুলি, আর সেই বিশ্বাসেই ফাটল ধরলে প্রশ্নটা সামনে এসে দাঁড়ায়— মানুষ সঙ্গীকে ধোঁকা দেয় কেন?
আসলে সম্পর্ক ভাঙার পেছনে খুব কমই ‘একটা’ কারণ থাকে। বরং থাকে একগুচ্ছ অনুভূতির মিশ্রণ, অধরা চাওয়া, ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা আর অমীমাংসিত টানাপোড়েনের গল্প। সেগুলোর নরম দিকগুলোই তুলে ধরা হলো—
আবেগের ক্ষুধা— যা কথায় প্রকাশ পায় না
অনেক সময়ে মানুষ শারীরিক কারণে নয়, আবেগের তৃষ্ণায় অন্যের দিকে হাত বাড়ায়।
যখন সঙ্গীকে বলতে পারে না— ‘তুমি আর আগের মতো আমাকে শোনো না’, ‘আমাকে আর কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না’— ঠিক সেই জায়গাটাতেই ফাঁক তৈরি হয়। এই নীরব ক্ষুধা ধীরে ধীরে তাকে ঠেলে দেয় ভুল পথে।
নিজের প্রতি অনিশ্চয়তা
আত্মবিশ্বাস কম থাকা মানুষ প্রায়ই বাহিরের স্বীকৃতির দিকে ছুটে যায়। কেউ যদি তাকে বলে— ‘তুমি দারুণ!’, ‘তোমার হাসি খুব সুন্দর!’ সে আবার নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এই অনুভূতি কখনো কখনো সম্পর্কের সীমা পেরিয়ে যেতে বাধ্য করে।
সম্পর্কের রুটিনে বিরক্তি
দীর্ঘ সম্পর্কের বড় চ্যালেঞ্জ—একঘেয়েমি। একই কথা, একই ঝগড়া, একই প্রত্যাশা… আর মানুষ তো স্বভাবতই নতুনত্বের প্রতি দুর্বল। এই দুর্বলতাই অনেককে ভুল সিদ্ধান্তে টেনে নিতে পারে।
সুযোগ— যা মুহূর্তের আবেগে ভুলে যেতে বাধ্য করে
সব প্রতারণা পরিকল্পিত নয়। কখনো কখনো শুধু সুযোগটাই মানুষকে নরম করে দেয়। অফিস ট্রিপ, বন্ধুর আড্ডা, হঠাৎ কাছাকাছি হওয়া —এগুলোতে মুহূর্তের আবেগ কাজ করে। পরের দিন সে নিজেও অবাক হয়, ‘আমি এটা করলাম কীভাবে?’
অমীমাংসিত অভিমান
অনেকেই নিজের কষ্টটা সঙ্গীকে বলতে পারে না। কখনো মনে হয় বললে ঝগড়া হবে, কখনো মনে হয়— ‘সে তো বুঝবেই না!’ এই চেপে রাখা যন্ত্রণাই তাকে অন্য কোথাও স্বস্তি খুঁজতে পাঠায়।
অতীতের বোঝা
শৈশব, আগের সম্পর্ক, আঘাত— সবই প্রভাব ফেলে। যে মানুষটি আগে অবহেলা পেয়েছে, সে বর্তমান সম্পর্কেও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই ভয়টাই কখনো তাকে এমন পথে নিয়ে যায়, যেখানে সে নিজেও হাঁটতে চায়নি।
নিজেকে ‘হিরো’ মনে করার প্রবণতা
কেউ কেউ সম্পর্কের বাইরে গিয়ে নিজেকে বেশি ‘ইন্টারেস্টিং’ মনে করে। নতুন মানুষ তাকে দেখে, প্রশংসা করে— সে ভাবে, ‘আমি এখনো চাইলে পারি!’ এই ego boost-টাই ভুলের সূচনা।
তাহলে সমাধান কোথায়?
সম্পর্ক বাঁচানোর কোনো জাদু-ফর্মুলা নেই। তবে কয়েকটা নরম কিন্তু কার্যকর উপায় আছে—
খোলামেলা কথা বলা—ভয় ছাড়াই,
একঘেয়েমি এড়াতে ছোট ছোট চমক—ডেট, হাঁটাহাঁটি, চা খাওয়া,
নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে না রাখা,
যদি সমস্যা গভীর হয়—প্রফেশনাল কাউন্সেলিং,
সবচেয়ে জরুরি— দুইজনের জন্যই সময় রাখা।
শেষ কথা
ধোঁকা হয়তো সম্পর্কের ভুল সিদ্ধান্ত, কিন্তু সেই ভুলের পেছনে থাকে অনেক অদেখা আবেগের গল্প। মানুষ ইচ্ছা করে ভুল পথে যায় না; অনেক সময় সে শুধু নিজেকে হারিয়ে ফেলে— সঙ্গীর কাছে নয়, নিজের কাছেও।