ধরুন, একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন— মা হঠাৎ কফির কাপ হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, ‘তোমার বিয়েটা কবে দিচ্ছি?’ অথবা হঠাৎ করে আত্মীয়রা ফোনে বলতে শুরু করলো, ‘ইদানীং তোমাকে দেখি খুবই সেজেগুজে থাকো, বিয়ে করছো নাকি!’ এরপর নিজের মনেও ছোট্ট একটা প্রশ্ন কিলবিল করতে শুরু করে— আমি কি বিয়ের জন্য প্রস্তুত?
চিন্তা নেই। এই প্রশ্নটা যত কঠিন উত্তরটা মজারও হতে পারে। তাই আপ্নিই দেখুন, আপনি বিয়ের জন্য প্রস্তুত কি না!
প্রেম, পছন্দ নাকি অভ্যাস—আপনি কোন পর্যায়ে?
বিয়ে মানে শুধু কাউকে ভালোবাসা নয়— একসাথে থাকা, পরস্পরকে বুঝে নেওয়া, এবং দিনের শেষে কারো কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকা।
আপনি কাউকে ছাড়া সন্ধ্যা কাটাতে কেমন শূন্যতা অনুভব করেন?
তার সাথে ভবিষ্যতের ছবি কি আপনাকে হাসায়?
যদি উত্তর ‘হুম… মনে হয়’ হয়— তাহলে আপনার ভেতরে বিয়ের বীজটা অঙ্কুরিতই হয়েছে!
মানসিক প্রস্তুতি: ঝগড়া-তর্কের পরেও পাশে থাকার শক্তি
বিয়ের পর সব দিন রবিবার নয়— কখনো কখনো বুধবার সকালবেলার মত ক্লান্তিকরও হতে পারে।
মতানৈক্যে রাগ সামলাতে পারেন?
ক্ষমা চাইতে বা ক্ষমা করতে অভ্যস্ত?
নিজের ‘স্পেস’ শেয়ার করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত?
যদি এগুলোতে ইতিবাচক উত্তর থাকে, বুঝবেন—আপনি মানসিকভাবে বেশ পরিণত।
দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা: পকেটের হিসাব থেকে জীবনের হিসাব
টাকা বিয়ের একমাত্র শর্ত নয়, কিন্তু দায়িত্ববোধ যে দরকার—তা মানতেই হবে।
নিজের খরচ কতটুকু প্ল্যান করে চলেন?
ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় আছে?
দু’জনের জীবন গুছিয়ে নিতে কতটা সক্ষম?
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘চেষ্টা করছি’ হয়, তাহলেই ভালো—বিয়ে একসাথে শেখারই আরেক নাম।
পরিবার নিয়ে ভাবনা: দুই পক্ষের মিল, মন আর মানিয়ে চলা
বিয়ে মানে শুধু দু’জন নয়—দুই পরিবারও।
পরিবারকে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা কি আছে?
সংস্কৃতি, রীতি-নীতি বা অভ্যাসে পার্থক্য মানতে পারবেন?
যদি উত্তর হয়— ‘হ্যাঁ, চেষ্টা করব’—তাহলে আপনি অনেক দূর এগিয়ে আছেন।
নিজের সময়, ক্যারিয়ার ও স্বপ্ন—সব কিছুর মাঝে ভারসাম্য
বিয়ে আপনার স্বপ্ন থামিয়ে দেয় না—বরং নতুন একজন সঙ্গী যোগ হয় সেই স্বপ্নযাত্রায়।
ক্যারিয়ার লক্ষ্য কি পরিষ্কার?
বিয়ের পরও সেই লক্ষ্য ধরে রাখতে পারবেন?
লাইফ-ব্যালান্স তৈরি করতে ইচ্ছুক?
যারা ‘বোধহয় পারব’ বলছেন— তারা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতির পথে।
‘না’ বলার স্বাধীনতা—আপনি কি নিজের সিদ্ধান্তের মালিক?
অনেক সময় পরিবার বা সমাজের চাপ আসে। গুরুত্বপূর্ণ হলো— আপনি কি নিজের ইচ্ছায়, নিজের সুখের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’—তাহলেই আপনি সঠিক পথে আছেন।
নিজের সাথে নিজের সম্পর্ক কেমন?
এটাই সবচেয়ে জরুরি। যে নিজেকে ভালোবাসে, নিজের অনুভূতির যত্ন নিতে জানে, সেই-ই অন্যের সুখের সঙ্গী হতে পারে।
নিজেকে কি মূল্যায়ন করেন?
নিজের ভুল স্বীকার করতে পারেন?
একা থাকলে কি ভয় লাগে, নাকি ভালোই লাগে?
নিজেকে ভালোভাবে জানলেই বুঝবেন— আপনি আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে।
বিয়ে কোনো দৌড় প্রতিযোগিতা নয়
বন্ধু–আত্মীয়দের দেখে তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। বিয়ে তখনই সবচেয়ে সুন্দর হয়, যখন আপনি প্রস্তুত, স্বচ্ছন্দ এবং সত্যিকারভাবে কাউকে জীবনে গ্রহণ করতে চান।
তাই প্রশ্নটা আবার করুন—
আপনি কি সত্যিই প্রস্তুত?
যদি হালকা একটা হাসি আসে, আর মনে হয় ‘হ্যাঁ, হয়তো’—তাহলে শুভকামনা!