কোন কোন আয়ে কর দিতে হবে না

আয়কর রিটার্ন লেখা প্রতীকি ছবি। ছবি: গ্রাফিক্স

বছর ঘুরে চলে আসে। আয়কর রিটার্ন দেওয়ার সময় চলে আসে প্রতিবছর। ২০২৪-২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যারা এখনও রিটার্ন জমা দেননি তারাও এই সময়ের মধ্যে কোনও জরিমানা ছাড়া কর বা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশেষ আদেশে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অবস্থিত সব সরকারি কর্মচারী, সারাদেশের সব তফশিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারী, সারাদেশের সব মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং ওই আদেশে উল্লেখিত বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে।

কথা হচ্ছে, সব আয়ের ওপর কি কর দিতে হয়? কিছু কিছু আয় আছে, যা করমুক্ত, অর্থাৎ তার ওপর কর দিতে হয় না। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেসব আয় সম্পর্কে। করদাতার করমুক্ত ও কর অব্যাহতিপাওয়া আয় থাকলে তা রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। ব্যক্তিকরদাতার করমুক্ত আয়ের কয়েকটি খাত (উদাহরণ) নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. সরকারি পেনশন তহবিল থেকে করদাতা কর্তৃক গৃহীত বা করদাতার বকেয়া পেনশন;
২. সরকারি আনুতোষিক তহবিল থেকে করদাতা কর্তৃক আনুতোষিক হিসেবে গৃহীত অনধিক ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয়;
৩. কোনও স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল, পেনশন তহবিল ও অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল হতে সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণকৃত আয়, যা ওই তহবিল থেকে করারোপিত হয়েছে;
৪. ভবিষ্য তহবিল থেকে আইন, ১৯২৫ (১৯২৫ সনের ১৯ নং আইন) প্রযোজ্য এরূপ কোনও ভবিষ্য তহবিলের উদ্ভূত বা উপচিত অথবা ভবিষ্য তহবিল থেকে কোনও আয়;
৫. সরকারি সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনও কর্মচারী স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের সময় এ উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনও পরিকল্প অনুসারে গৃহীত যে কোনও পরিমাণ অর্থ;
৬. পেনশনারস সেভিংস সার্টিফিকেট থেকে সুদ হিসেবে গৃহীত কোনও অর্থ বা গৃহীত অর্থের সমষ্টি, যে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষ শেষে ওই সার্টিফিকেটের বিনিয়োগকৃত অর্থের মোট পুঞ্জীভূত অর্জিত মূল্য, প্রকৃত মূল্য, আক্ষরিক মূল্য, ক্রয়মূল্য অনধিক ৫ লাখ টাকা হয়;
৭. কোনও নিয়োগকারী কর্তৃক কোনও কর্মচারীর ব্যয় পুনর্ভরণ যদি—(ক) ওই ব্যয় সম্পূর্ণভাবে ও আবশ্যকতা অনুসারে কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সূত্রে ব্যয়িত করা হয়; এবং(খ) নিয়োগকারীর জন্য ওই কর্মচারীর মাধ্যমে এরূপ ব্যয় নির্বাহ সর্বাধিক সুবিধাজনক ছিল;
৮. কোনও অংশীদারি ফার্মের অংশীদার হিসেবে কোনও করদাতা কর্তৃক মূলধনি আয়ের অংশ হিসেবে পাওয়া আয়ের অংশ, যার ওপর ওই ফার্ম কর পরিশোধ করেছে;
৯. হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে একজন করদাতা যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া হন, যার ওপর ওই পরিবার কর পরিশোধ করেছে;
১০. বাংলাদেশি কোনও স্বাভাবিক ব্যক্তিকরদাতা কর্তৃক বিদেশে উপার্জিত কোনও আয়, যা তিনি বৈদেশিক রেমিট্যান্স-সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন অনুসারে বাংলাদেশে এনেছেন;
১১. কোনও করদাতা কর্তৃক ওয়েজ আর্নারস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড, ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, পাউন্ড স্টারলিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা পাউন্ড স্টারলিং প্রিমিয়াম বন্ড থেকে গৃহীত আয়;
১২. রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কোনও স্বাভাবিক ব্যক্তির আয় যা কেবল ওই পার্বত্য জেলায় পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত;
১৩. কোনও স্বাভাবিক ব্যক্তির ‘কৃষি হতে আয়’খাতের অন্তর্ভুক্ত অনধিক ২ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনও আয়, যদি ওই ব্যক্তি— (ক) পেশায় একজন কৃষক হন;(খ) এর সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে নিম্ন বর্ণিত আয় ব্যতীত কোনও আয় না থাকে, যথা—(অ) জমি চাষাবাদ থেকে উদ্ভূত আয়;(আ) সুদ বা মুনাফা বাবদ অনধিক ২০ হাজার টাকা আয়;
১৪. সফটওয়্যার তৈরিসহ তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কয়েকটিখাতের ব্যবসায় আয়। খাতগুলো হচ্ছে— (ক) সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, (খ) সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, (গ) নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এটিটিএ), (ঘ) ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, (ঙ) ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, (চ) ওয়েবসাইট সার্ভিস, (ছ) ওয়েব লিস্টিং, (জ) আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং; (ঝ) ওয়েবসাইট হোস্টিং, (ঞ) ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, (ট) ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং, (ঠ) ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, (ড) গ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (জিআইএস), (ঢ) আইটি সহায়তা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, (ণ) সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, (ত) কল সেন্টার সার্ভিস, (থ) ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন, (দ) সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, (ধ) ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং, (ন) রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং, (প) সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, (ফ) ক্লাউড সার্ভিস, (ব) সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, (ভ) ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, (ম) ই-বুক পাবলিকেশন, (য) মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও (র) আইটি ফ্রিল্যান্সিং।
১৫. জুলাই ১, ২০২০ থেকে ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখের মধ্যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে উদ্ভূত কোনও আয়;
১৬. যে কোনও পণ্য উৎপাদনে জড়িত ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প থেকে উদ্ভূত আয়, যার—(ক) শিল্পটি নারীর মালিকানাধীন হলে বার্ষিক টার্নওভার অনধিক ৭০ লাখ টাকা;(খ) অন্যান্য ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার অনধিক ৫০ লাখ টাকা;
১৭. নিম্নবর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে ব্যাংক, বিমা বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যক্তি কর্তৃক জিরো কুপন বন্ড থেকে উদ্ভূত কোনও আয়, যথা—(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করে কোনও ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উক্ত জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করা হয়েছে;(খ) বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করে কোনও ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করা হয়েছে;
১৮. ‘চাকরি হতে আয়’ হিসেবে পরিগণিত আয়ের ১/৩ বা ৪ দশমিক ৫ লাখ টাকা, যেটি কম;
১৯. কোনও ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে গৃহীত সম্মানী বা ভাতা প্রকৃতির কোনও অর্থ বা সরকার থেকে গৃহীত কোনও কল্যাণ ভাতা;
২০. সরকারের কাছ থেকে গৃহীত কোনও পদক/পুরস্কার; এবং
২১. কোনও বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা থেকে উদ্ভূত কোনও আয়
২২. ২০৩০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কোনও সমুদ্রগামী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ কর্তৃক অর্জিত ব্যবসার আয় রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বিধান অনুসরণ করে বাংলাদেশে আনা হলে অনুরূপ আয়। করমুক্ত আয়গুলো করদাতার মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এটি রিটার্নে করমুক্ত আয়ের কলামে প্রদর্শন করতে হবে।

লেখক: আয়কর আইজীবী

সারাবাংলা/এসবিডিই

আয়কর রিটার্ন