Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আসছে, এখনকার সাথে পার্থক্য কী?

সারাবাংলা ফিচার
২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:১৯ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। ছবি: সারাবাংলা গ্রাফিক্স

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার নীতিমালা চূড়ান্ত করতে তৈরি করা একটি খসড়া নির্দেশিকার ওপর মতামত সংগ্রহ করছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। দেশে ডেটা পরিষেবায় বিপ্লব ঘটাবে বিবেচনায় দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর এবং এই খাতের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে এই উদ্যোগ ডিজিটাল বিভাজন দূর করে সেতু বন্ধনে নতুন সুযোগ উন্মোচন করতে পারে। কেননা এর মাধ্যমে ইলন মাস্কের স্টারলিংক এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের খসড়া নির্দেশিকায় কী আছে

খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে ‘জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্ম নিবন্ধক’র অধীনে নিবন্ধিত মালিকানা, অংশীদারিত্ব এবং কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম এবং পরিষেবাগুলো নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। এত আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১০০ শতাংশ এফডিআই বা বিদেশি অংশীদারিত্ব বা যৌথ উদ্যোগ বা অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) থেকে বিনিয়োগ এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম এবং পরিষেবাগুলো নির্মাণ, মালিকানাধীন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে পারবে। খসড়া নির্দেশিকা অনুযায়ী লাইসেন্সের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

খসড়া নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, লাইসেন্সধারী এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবাগুলো প্রদানের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা, ইন্ট্রানেট পরিষেবা (দেশীয় ডেটা যোগাযোগ), ইন্টারনেট অব থিংস ও মেশিন-টু-মেশিন সংযোগ, গতি পরিষেবায় আর্থ স্টেশন, আর্থ এক্সপ্লোরেশন স্যাটেলাইট পরিষেবা, রিমোট সেন্সিং ও আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিষেবা এবং বিটিআরসি দ্বারা অনুমোদিত অন্য কোনও পরিষেবা অনুমোদন পাবে। তবে অপারেটররা সরাসরি-টু-হোম পরিষেবা, সম্প্রচার পরিষেবা, স্যাটেলাইট আইএমটি-ভিত্তিক পরিষেবা বা টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানের জন্য অনুমোদিত নয়।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যেভাবে কাজ করে। ছবি: সারাবাংলা গ্রাফিক্স

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের লাইসেন্সের খরচ কেমন

সাধারণত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনও দেশে কাজ করলে সেই দেশের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ করে লাইসেন্স নিয়ে থাকে। স্টারলিংক বা এ ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাজারে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই লাইসেন্স নিয়েই কাজ করতে হবে। এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা অপারেটরের জন্য আবেদন বা প্রসেসিং ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে অধিগ্রহণ ফি ১০ হাজার ইউএস ডলার এবং বার্ষিক ফি ৫০ হাজার ডলার। এছাড়াও বার্ষিক স্টেশন/টার্মিনাল ফি ২০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। লাইসেন্সধারীকে তার বার্ষিক নিরীক্ষিত মোট রাজস্বের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বিটিআরসিকে দিতে হবে। গ্রস রাজস্বের আরও ১ শতাংশ বাধ্যতামূলক হিসেবে ‘মহাকাশ শিল্পের উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনায় অবদান’র অংশ হিসাবে জমা দিতে হবে। লাইসেন্সধারীকে অবশ্যই সেবা শুরুর আগে বাংলাদেশের মধ্যে অন্তত একটি গেটওয়ে সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। তবে বিটিআরসি লাইসেন্সধারীদের অতিরিক্ত গেটওয়ে স্থাপনে উৎসাহিত করছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে স্থাপন করা যে কোনও ব্যবহারকারীর টার্মিনাল অবশ্যই এই স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে এবং পরিবেশিত হতে হবে। খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিষেবার জন্য এই টার্মিনালগুলো থেকে সমস্ত ট্রাফিক অবশ্যই এই স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে হতে হবে। এনজিএসও গেটওয়ে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্রাফিক পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ের সাথে সংযুক্ত হবে।

স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে অবস্থান করে, যা লেটেন্সি কমিয়ে ইন্টারনেটের গতি বাড়ায়। ছবি: গিগাগ্যাজেট

ইলন মাস্কের স্টারলিংক কেন আলোচনায়?

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার নীতিমালা চূড়ান্ত হলে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক কিংবা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার ব্যবসায় আসার সুযোগ পাবে। মূলত সাধারণ ইন্টারনেট সেবা যেখানে পৌঁছানো যায় না সেখানে সেবা দিতে সক্ষম স্টারলিংক। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিতে পাঁচ বছর আগে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে স্টারলিংক। ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি হওয়ায় গভীর সমুদ্র বা পাহাড়ি এলাকার মতো দুর্গম জায়গাতেও গেমিং, স্ট্রিমিং ও দ্রুত ডাউনলোড নিশ্চিত করতে পারে তারা। স্টারলিংক কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের বাজারে এই সেবা নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি তাদের একটি দল ঢাকায় এসে বিনিয়োগ বোর্ডের সাথে বৈঠক করে গেছে।

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে ইলন মাস্কের স্টারলিংক আছে আলোচনায়। ছবি: গিগাগ্যাজেট

উল্লেখ্য, স্টারলিংক বিশ্বের প্রথম ও বৃহত্তম কৃত্রিম উপগ্রহনির্ভর উচ্চগতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এই নেটওয়ার্ক স্ট্রিমিং, অনলাইন গেমিং, ভিডিও কলসহ নানা কাজের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত বিভিন্ন স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্টারলিংক। স্টারলিংক স্যাটেলাইট স্পেসএক্সের মহাকাশযানে করে পাঠানো হয়। সারাবিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের ব্যবহারকারীর কাছে স্টারলিংক উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে।

স্টারলিংকের সেবায় খরচ কেমন

বাংলাদেশের সাধারণ হোম ব্রডব্যান্ড সেবার তুলনায় স্টারলিংকের সেবা ব্যয়বহুলই বটে। দেশে যেখানে হাজারখানেক টাকায় সংযোগ এবং মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় মোটামুটিমানের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় সেখানে ব্যক্তিগত ব্যবহারের স্টারলিংক যন্ত্রের (স্ট্যান্ডার্ড কিট) এককালীন দামই পড়বে প্রায় ৪২ হাজার টাকা (৩৪৯ মার্কিন ডলার)। আর প্রতি মাসে গ্রাহক ফি হিসেবে দিতে হবে সাড়ে ১৪ হাজার টাকার মতো (১২০ ডলার)। এই প্যাকেজ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ২৫-১০০ মেগাবাইট গতির ইন্টারনেট মিলবে। বাংলাদেশের লোকাল আইএসপিগুলো বাসাবাড়িতে সাধারণত ৫ থেকে ৩০ মেগাবাইট গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে থাকে।

২০২৪ সালের স্টারলিংকের সার্ভিস প্যাকেজ। ছবি: পিসিম্যাগ

মোবাইল ডাটাসহ ক্ষেত্রে স্টারলিংকের সেবা ব্যয় দেশভিত্তিক মাসে ১৫০ ডলার বা আঠারো হাজার টাকা। এবং বৈশ্বিক সেবা ব্যয় ২০০ ডলার বা চব্বিশ হাজার টাকা। ব্যবসা বা হাই ডিমান্ড সেবাগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে ‘প্রায়োরিটি’ নামে আলাদা একটা সেবা রয়েছে স্টারলিংকের। এই সেবায় ‘নেটওয়ার্ক প্রায়োরিটি’, ‘পাবলিক আইপি’ ও সেবার ক্ষেত্রে ‘বিশেষ গ্রাহক হিসেবে সেবা’ পাওয়া যায়। স্টারলিংকে ১ টেরাবাইট গতির প্রায়োরিটি সেবা ব্যয় ২৫০ ডলার বা প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ২ টেরাবাইট গতির প্রায়োরিটি সেবা ব্যয় ৫০০ ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আর ৬ টেরাবাইট গতির প্রায়োরিটি সেবা ব্যয় ১৫০০ ডলার বা এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা।

স্টারলিংকের সেবা নিতে যা যা প্রয়োজন

স্টারলিংকের একটি কানেকটিং প্যাকেটে স্টারলিংক রিসিভার, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও পাওয়ার সাপ্লাই থাকে। স্টারলিংকের অ্যান্টেনা ইলেকট্রনিক ফেজড অ্যারে, যা ১১০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকানো যায়। এর ওজন প্রায় ২ কেজি ৯০০ গ্রাম, কিকস্ট্যান্ডসহ ৩ কেজি ২০০ গ্রাম। এতে আছে এনভায়রনমেন্টাল রেটিং আইপি ৬৭ টাইপ ৪ অ্যান্টেনা, যা হিমাঙ্কের নিচে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং হিমাঙ্কের ওপরে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশ কাজ করে। স্টারলিংক চালাতে শক্তি খরচ হয় ৭৫ থেকে ১০০ ওয়াট। স্টারলিংক ওয়াই–ফাই রাউটারের সঙ্গে ২৩৫টি যন্ত্র যুক্ত করার সুযোগ আছে।

স্টারলিংকের স্যাটেলাইটের ভর অন্য সব স্যাটেলাইটের চেয়ে বেশ কম। স্টারলিংকের নেভিগেশন সেন্সর প্রতিটি উপগ্রহের অবস্থান ও উচ্চতা বিবেচনা করে ব্রডব্যান্ড সেবা দেয়। অপটিক্যাল স্পেস লেজার ব্যবহার করে স্টারলিংক। প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটে তিনটি স্পেস লেজার (অপটিক্যাল ইন্টারস্যাটেলাইট লিংক বা আইএসএলএস) রয়েছে। এই লেজারের মাধ্যমে ২০০ গিগাবাইট পর্যন্ত ডেটা পাঠানোর কাজ করে। স্টারলিংক গ্রাহকদের বেশি ব্যান্ডউইডথের সংযোগ দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইটে পাঁচটি উন্নত কু-ব্যান্ড ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা ও তিনটি ডুয়াল-ব্যান্ড (কা-ব্যান্ড ও ই-ব্যান্ড) অ্যান্টেনা ব্যবহার করে।

স্টারলিংকের বেশির ভাগ স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট–সেবা একক জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট থেকে আসে। যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। ব্যবহারকারী ও স্যাটেলাইটের মধ্যে ডেটা টাইম অনেক বেশি হয়, একে লেটেন্সি বলে। এতে ইন্টারনেট–সেবা পাওয়া কঠিন হয়। অন্যদিকে স্টারলিংক হাজার হাজার উপগ্রহের একটি নক্ষত্রমণ্ডল তৈরি করছে, যা পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দূর থেকে প্রদক্ষিণ করছে। নিম্নকক্ষপথে থাকার কারণে লেটেন্সি উল্লেখযোগ্য হারে কম। এতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবা পাওয়া যায়।

আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটির রায়ানসের আউটলেটে স্টারলিংক রিসিভার প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছবি: প্রতিবেদক

ইতোমধ্যে আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটির রায়ানসের আউটলেটে স্টারলিংক রিসিভার প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই রিসিভার নিয়ে বেশ আগ্রহ তরুণ প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে। রায়ানসের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, দেশে এখনও স্টারলিংক ব্যবহার বা কেনার কোনও সুযোগ নেই। রিসিভারটি কেবল প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।

অন্য ইন্টারনেট সেবাদানকারীর সঙ্গে স্টারলিংকের তফাৎ

ষ্টারলিংক হল ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্স-এর তৈরি একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা। এর লক্ষ্য হল পৃথিবীর প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও দ্রুতগতির, কম লেটেন্সির ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। স্টারলিংক হল লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইটের একটি নেটওয়ার্ক, যা বিশ্বব্যাপী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সাধারণ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যেখানে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে স্থির থাকে, স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে অবস্থান করে, যা লেটেন্সি কমিয়ে ইন্টারনেটের গতি বাড়ায়।

স্টারলিংকের স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৫০ থেকে ১২০০ কিমি উঁচুতে কক্ষপথে ঘোরে। স্যাটেলাইটগুলি গ্রাউন্ড স্টেশন এবং ব্যবহারকারীর ডিশের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে। একাধিক স্যাটেলাইট একসঙ্গে কাজ করে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্পেসএক্স ৫ হাজারেরও বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এরপরের ধাপের প্রথম পর্যায়ে ১২ হাজার স্যাটেলাইট এবং পরে ৪২ হাজার স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশে স্টারলিংক সেবা দেয় এবং তাদের সেবার ক্ষেত্র দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।

স্টারলিংকের ইন্টারনেট তথা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে। যেমন, আমরা বাসাবাড়িতে যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বা ওয়াইফাই ব্যবহার করি সেগুলোতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রাম কিংবা মফস্বল এলাকায় এই ধরনের সার্ভিস নেই। আর তারের সংযোগ দিতে হয় বিধায় নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। ঝড় বৃষ্টিতে অনেক সময় তার নষ্ট হয়ে যায় কিংবা ছিঁড়ে যায়। এমনকি সার্ভিস প্রোভাইডারা যখন সংযোগ এবং মেরামতের কাজ করে তখনও কিছুক্ষণের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা। কিন্তু স্টারলিংক ইন্টারনেট যেহেতু সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রদান করা হয় তাই এই ধরনের কোন ঝামেলা নেই। এর সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি গ্রামে মফস্বলে শহরে পাহাড়ি এলাকায় যে কোন স্থানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন ইন্টারনেটের সাথে। তবে সেবাটির দাম বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ বেশি বলে, এটি আসলে প্রান্তিক পর্যায়ে কতখানি কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে সরকারের কতখানি নিয়ন্ত্রণ থাকবে

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবায় সরকারি আড়িপাতা কিংবা নজরদারির অভিযোগের বিষয়টি বহু পুরোনো। টেলিকম ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিধিসম্মত নজরদারির যে নীতি আছে তার বাইরেও ইন্টারনেট পরিসেবায় নজরদারি করে বলে অভিযোগ আছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো, যা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছিল। জুলাই বিপ্লবের পর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও এই সেবা সরকারের অবৈধ নজরদারির ট্রেন্ডের বাইরে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রেগুলেটরি ও লাইসেন্সিং নীতিমালা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে যে খসড়া গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে তাতে নজরদারি ও আড়িপাতার সুযোগ রাখা হয়েছে এবং সেটি চূড়ান্তভাবে বহাল থাকলে ইন্টারনেট সেবার ওপর সরকারের এখন যে খবরদারির সুযোগ আছে তাতে কোনও পরিবর্তন আসবে না। সাধারণভাবে সব দেশেই ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সরকারের কাছেই থাকে। স্টারলিংককেও বাংলাদেশের গেটওয়ে ব্যবহার করে ঢুকতে হবে। এমন একটা গেটওয়ে দিয়ে তাকে ঢুকতে হবে যার মালিক হলো সরকার। ফলে স্টার লিংক আসলে একটা বিকল্প হতে পারে। কিন্তু আগের মতো নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই থাকবে। তবে অনেক দেশে নাগরিকের ইন্টারনেট সেবার অধিকারের সুরক্ষায় আইনি বিধি থাকলেও তা বাংলাদেশে নেই।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটেই আগামীর সম্ভাবনা। ছবি: পিসিম্যাগ

‘নন–জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর’- শীর্ষক এই গাইডলাইনে বলা হয়েছে- যে লাইসেন্স পাবে তার সিস্টেমে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে করে সরকারি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে। এছাড়া এখন যেমন সরকারি কর্তৃপক্ষের বাংলাদেশের গেটওয়েগুলোতে যে কোনও সময় প্রবেশের অধিকার আছে ঠিক তেমনি ‘আড়িপাতার প্রক্রিয়ায় ডেটা দেওয়ার’ ব্যবস্থা রাখতে হবে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ওপর আড়িপাতার সুযোগ থেকেই যাবে। এছাড়া খসড়া গাইডলাইন অনুযায়ী আড়িপাতা সংক্রান্ত সরকারের যে নীতি সেটিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি বেআইনি কার্যকলাপ বা নাশকতা শনাক্তের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে হবে। তবে বাংলাদেশেও নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর বোঝা যাবে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কোন কোন শর্ত কোম্পানিগুলোকে পূরণ করতে হবে।

দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা খাতে কী প্রভাব

ফাইবার অপটিক বা ক্যাবল ব্যবহার করে এখন যারা ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছেন সেই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি ব্যবসায়ীরা বলছেন স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের শর্ত থাকে- সেটিই নির্ধারণ করবে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা খাতে এর প্রভাব কেমন বা কতটা হবে। বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন চূড়ান্তভাবে সরকারের অনুমোদন নিয়ে স্টারলিংক বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আসলেও সেটি বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের অভিমত, স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা পেতে ব্যয় অনেকটাই বেশি হবে ফলে হোম ইউজারদের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন আসবে বলে তারা মনে করেন না। কর্পোরেট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাকআপ হিসেবে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার সাথে সংযুক্ত হলেও সব মিলিয়ে এটি লোকাল আইএসপিগুলোর ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর