ট্রাম্পের চাকরিতে কী করবেন ইলন মাস্ক?
১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৫ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছেন টেক জায়ান্ট টেসলার মালিক ইলন মাস্ক। বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারেই কেবল তিনি সক্রিয় ছিলেন না, বিপুল পরিমাণ অর্থও অনুদান দিয়েছেন। অবশ্য ইতোমধ্যে তার প্রতিদানও পেয়েছেন তিনি। ট্রাম্প জেতার পরে মাস্কের সম্পদ বেড়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। এদিকে আবার ভোটে জয় পেয়ে এবার মাস্ককে নিজের প্রশাসনে যুক্ত করে নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’র দায়িত্বে থাকবেন টেসলা বস মাস্ক।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। সে তালিকাতেই যুক্ত হলেন ইলন মাস্ক। ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’তে তার সহকারী হিসেবে থাকবেন রিপাবলিকানদের হয়ে ট্রাম্পের বিপক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকা বিবেক রামাস্বামী। প্রথমে ট্রাম্পের প্রবল বিরোধী থাকলেও পরবর্তীতে অবশ্য ট্রাম্পের পক্ষে সোচ্চার থেকেছেন বিবেক।
কী কাজ করবেন ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী
সরকারি দক্ষতার এই বিভাগ ঠিক কী কী কাজ করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু, এটিকে সরকারের গতানুগতিক কাঠামোর বাইরের একটি প্রতিষ্ঠান বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফেসিয়েন্সির সংক্ষিপ্ত রূপ, ডিওজিই বা ডোজ। এর সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি ডোজকয়েনের নামের মিল লক্ষণীয়। মাস্ক ডোজকয়েনকে ‘দ্য পিপলস্ ক্রিপ্টো’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্পের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের বাইরে থেকে পরামর্শ এবং নির্দেশনা দেবে ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি। এটি সরকারের মধ্যে ‘উদ্যোক্তার দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে আসা নিয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প তার বিবৃতিতে লিখেছেন, “এই দুজন (ইলন ও রামাস্বামী) অসাধারণ আমেরিকান মিলে সরকারি আমলাতন্ত্রের অবসান ঘটানোর পথ তৈরি করবেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সরকারি বিধিবিধান কমিয়ে আনা, অযথা ব্যয় কমানো ও কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলোর পুনর্গঠনের পথকে প্রশস্ত করবেন তারা। যা, ‘সেইভ আমেরিকা’ উদ্যোগের জন্য অপরিহার্য।”
সংক্ষেপে ‘ডোজ’ নামে পরিচিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি এবারই প্রথম মার্কিন প্রশাসনে যুক্ত করছেন ট্রাম্প। তার ভাষ্য, এটা হবে আমাদের সময়ের ‘দ্য মানহাটন প্রজেক্ট’। এই প্রজেক্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে এই দফতরটি সরকারি কাজে গতি সঞ্চার করবে। উল্লেখ্য, ম্যানহাটন প্রজেক্টের মাধ্যমে আমেরিকার প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হয়েছিল। নতুন দপ্তরের প্রসঙ্গে সেই ঘটনার উল্লেখ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এছাড়া তিনি ২০২৬ সালের ৪ জুলাই নাগাদ এ দপ্তরের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।
এই ৪ জুলাই দিনটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। এদিকে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসার পর মাস্ক ও রামাস্বামী জানিয়েছেন, ‘ডোজ’ প্রচলিত সিস্টেমের মধ্যে একটা শকওয়েভ হিসেবে আবির্ভূত হবে। রামাস্বামী তার সামাজিক মাধ্যম এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এটা আমেরিকার স্বার্থের একটা কাজ। আমরা এতে কোনও ভদ্রতা দেখাতে যাবো না।’ আর নিজের মালিকানাধীন এক্সের এক পোস্টে ইলন মাস্ক লিখেছেন, ‘ডোজ সরকারি অপচয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কারও জন্যই কাল হয়ে দাঁড়াবে। সরকারি অর্থ নিয়ে নয়ছয় আর থাকবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, নতুন এই বিভাগটি ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া এই বিভাগ সরকারি ব্যয় কমানো এবং আমলাতান্ত্রিক বাধা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন।
এর আগে ট্রাম্প চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব দিয়েছেন সুসি উইলসকে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিককে মনোনীত করেছেন। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিও। অভিবাসীপ্রধান হবেন টম হোম্যান। ফ্লোরিডার কট্টরপন্থী সিনেটর এবং চীনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত মাইকেল ওয়ালৎসকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) দায়িত্ব পাচ্ছেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম। নিউইয়র্কের কংগ্রেস উইম্যান এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘের দূত হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিও) প্রধান হচ্ছেন ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র লি জেলডিন।
সারাবাংলা/এসবিডিই