নিরাপদ পুষ্টির নিশ্চয়তায় মাইক্রোগ্রিন
২৯ জুন ২০২৪ ১৮:১০ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৫৫
প্রবাদ আছে, ‘টাকা থাকলে বাঘের চোখ মেলে।’ কিন্তু বর্তমানে যতই টাকা থাকুক নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্যের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। কারণ চারদিকে ভেজাল খাদ্যের ছড়াছড়ি। খাদ্য ভেজাল ও পুষ্টির ঘাটতি বাংলাদেশের অন্যতম একটি জাতীয় সমস্যা। বিজ্ঞানের ঈর্ষণীয় সাফল্যের ফলে এ সমস্যা আশীর্বাদ হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে মাইক্রোগ্রিন। এটি এক ধরনের নরম সবজি, যা রোপণের সাধারণত এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কাটা হয়। এর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা সবকিছুই সালোকসংশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। সুসংবাদ হলো, সাধারণ সবজিতে তুলনায় মাইক্রোগ্রিনে কয়েক গুণ বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। একই সাথে খাবারের যুক্ত করে ভিন্নতা। মাইক্রাগ্রিনে চাষকৃত সবজিতে রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ এতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া মাইক্রোগ্রিনে রয়েছে মানবদেহ গঠনের অন্যতম মৌলিক উপাদান আয়রণ, জিঙ্ক, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। তাই পুষ্টিবিদগণ মাইক্রোগ্রিনকে আর্দশ খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একদল শেফদের হাত ধরে উদ্ভাবিত হয় মাইক্রোগ্রিনের। এই শেফরা শুরুতে খাবার পরিবেশনের আগে খাবারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মাইক্রোগ্রিনের প্রচলন শুরু করে। অর্থাৎ খাবারে সালাদ হিসেবে শেফরা মাইক্রোগ্রিন ব্যবহার শুরু করেছিল। সময় সাথে মাইক্রোগ্রিনের জনপ্রিয় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে এটি গবেষণার অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। গবেষণায় উঠে আসে মাইক্রোগ্রিনের উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন গুণের কথা। এভাবে মানুষ দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মাইক্রোগ্রিন যুক্ত হতে শুরু হয়।
নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত। অর্থের অভাবে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিসম্পন্ন খাবারের যোগান দিতে পারে না। ফলে পুষ্টির ঘাটতিজনিত কারণে গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়। বলে রাখা ভালো, পুষ্টির ঘাটতির ফলে নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন: শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ, বয়স্কদের কর্মক্ষমতায় বিঘ্ন দেখা যায়। মোটকথা, অধিকাংশ মানুষ অপ্রাপ্ত বয়সে বিভিন্ন অসুখবিসুখ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। তবে আশার কথা হলো, সঠিক মাত্রায় সবুজ সবজি গ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টির ঘাটতি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই মাইক্রোগ্রিনকে নিরাপদ পুষ্টির আধারও বলা হয়। সাধারণ বাসার ছাদ কিংবা বারান্দায় শখের বশে বাগানের মতো মাইক্রোগ্রিন চাষাবাদ করা যায়। তাই যারা শহরের শখের বশে ছাদ বাগান করে, তারা সহজেই মাইক্রোগ্রিন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে পরিবারের সবুজ সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
মাইক্রোগ্রিনে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বিশ্বের উন্নত দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় তা বেড়ে চলছে। বর্তমানে মাইক্রোগ্রিন বেশ চড়া দামে বিশ্ব বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাই বলা যায়, আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে মাইক্রোগ্রিন। অন্য সব সবজি চাষের তুলনায় মাইক্রোগ্রিনের চাষ অনেকটা সহজ। প্রয়োজন হয় না বড় কোনো চাষাবাদ যোগ্য জমির। একই সাথে পরিবারের সদস্যদের কায়িক শ্রমে সহজেই মাইক্রোগ্রিন পদ্ধতিতে কাজ করা সম্ভব। তাই এ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে অদূর ভবিষ্যতে বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে।
আমাদের দেশে মাইক্রোগ্রিন নিয়ে খুব বেশি প্রচারণা না থাকার পেছনে অন্যতম কারণ হলো তা তুলনামূলক ব্যয়বহুল। আশার কথা হলো, শহরে ছাঁদ বাগান করে বর্তমানে অনেকে শৌখিন মানুষ মাইক্রোগ্রিন চাষাবাদ করছে। তাদের কাছে মাইক্রোগ্রিন ব্যয় বহন করা আহামরি কিছু না। বর্তমান সময়ে খরচের কথা চিন্তা না করে পুষ্টিগুণের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে রোগে ভুগে নাকাল অবস্থার মধ্যে পড়তেই হবে। তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা মাইক্রোগ্রিনের গুনাগত মান সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। বেকার তরুণদের মাইক্রোগ্রিন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষাবাদের জন্য উৎসাহী করতে হবে। এতে মাইক্রোগ্রিন শুধু বিদেশেই নয়, আমাদের দেশীয় খাবারে নতুনত্ব বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এজেডএস