Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নারী শহিদ কবি মেহেরুন্নেসা

রা’আদ রহমান
২৭ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৪

মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হওয়া প্রথম নারী কবি কে ছিলেন? অনেকেই জানি না আমরা। কখনও এই প্রশ্নটা মাথায় এসেছে কিনা সেটাও একটি ভালো প্রশ্ন হতে পারে। যে স্বাধীন জমিনে স্বাধীন নাগরিকের পরিচয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা, যে মুক্ত আলো- হাওয়ায় বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছি, আমার- আপনার এই পরিচয়, এই স্বাধীনতা কিনতে অকুতোভয় সাহসে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন শহিদ মেহেরুন্নেসা। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদ নারী কবি।

যার আঙ্গুল ফুঁড়ে বেরিয়েছিল এই শোষিত- নিপীড়িত পরাধীন জাতির স্বাধীন হওয়ার অমর কাব্য। ষাটের দশকে যখন বাংলা সাহিত্যে ঝড় তুলেছিলেন কিছু শক্তিমান কবি, তাদের মধ্যেও আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন মেহেরুন্নেসা। বাংলা একাডেমির পাঠের আসরে, সদা উপস্থিত প্রাণবন্ত হাস্যোজ্জ্বল শ্যামবর্ণ ছিপছিপে এই কবিকে প্রায়ই পাওয়া যেত। একাত্তরের উত্তাল মার্চে বাঙালি জাতি যখন মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল আন্দোলনের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সবকিছু, তখন তিনিও একটা স্বাধীন দেশের স্বপ্ন চোখে নিয়ে রাজপথে, মিছিলের সম্মুখে সাহসের সাথে হেঁটে গেছেন, স্লোগানে স্লোগানে ঝরেছে আগুনের ফুলকি।

বিজ্ঞাপন

১৯৪২ সালের ২০ আগস্ট জন্ম নেওয়া মেহেরুন্নেসা ছোটবেলা থেকেই মুখোমুখি হয়েছেন জীবনের কঠিন সংগ্রামের। পিতা আব্দুর রাজ্জাক এবং মা নূরুন নেসারের চার সন্তানের মধ্যে মেহেরুন্নেসা ছিলেন দ্বিতীয়। তখনকার সময়ে মেয়েদের পড়ালেখার সুযোগ খুব বেশি ছিল না, বিশেষ করে মুসলিম মেয়েদের পড়ালেখার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধিনিষেধ ছিল সবচেয়ে বেশি। স্কুলের ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও মেহেরুন্নেসা পড়তে পারেননি, বেশ কয়েকটা স্কুল থেকে তাকে ফিরে আসতে হয়েছিল। মেহেরুন্নেসার বড় বোন মোমেনা বেগমও বিভিন্ন স্কুল ঘুরে কিছু পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ফলে বাবা এবং বড় বোনের উৎসাহ ও সহায়তায় এক পর্যায়ে ঘরেই পড়ালেখা শুরু করেন তিনি এবং স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হন। মেহেরুন্নেসাদের কলকাতার কালিবাজারে কাপড় ও ভবানীপুরে জুতার দোকান ছিল। দোকানের আয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দাঙ্গায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের দোকান এবং লুট হয়ে যায় বাড়ি। নিঃস্ব হয়ে পড়েন তারা। এসময় জীবিকার জন্য কয়লার দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করতেন শিশু মেহেরুন্নেসা।

বিজ্ঞাপন

বাঙালি মুসলমান সমাজের ক্ষেত্রে একটি পরিবারের মেয়ে ঘরের বাইরে বাবার সঙ্গে কাজ করছে এই দৃশ্য খুব সহজ ছিল না। ফলে আশেপাশের অনেক দোকানদার এবং এলাকাবাসী এর বিরোধিতা করে। কিন্তু আধুনিক ও উদার মানসিকতার বাবা আবদুর রহমান কারও বিরোধিতায় কান না দিয়ে এটিকে খুবই সহজভাবে নিয়েছিলেন। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামিমুক্ত অসাম্প্রদায়িকতা এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদহীন সমতা ও মানবিকতার কবি হিসেবে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে বাবার এই শিক্ষা ছিল মেহেরুন্নসার প্রথম পাঠ। তখন থেকেই পেশা, জাতি- ধর্ম- বিত্ত নির্বিশেষে মেহেরুন্নেসা মানবিকতার ঔদার্যে বড় হতে থাকেন। তবে অভাব আর দুর্ভাগ্যের সঙ্গে তার লড়াইটা চলছিলই। এক পর্যায়েটিকতে না পেরে নামমাত্র মূল্যে কলকাতার বাড়ি বিক্রি করে সপরিবারে ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে আসে মেহেরুন্নেসার পরিবার। জানা যায় তাদের বাড়িটি বর্তমানে সেখানকার বিধানসভার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশে প্রথমে তার পরিবার পুরানো ঢাকার তাতিবাজার এলাকায় একটি ছোট্ট ভাড়া বাসায় উঠে। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সহায়তায় আবদুর রাজ্জাক শুরু করেন কাগজের ব্যবসা। এতে সুবিধা না হওয়ায় তিনি নাবিস্কো কোম্পানিতে এবং পরে হক কোম্পানিতেও সামান্য বেতনে চাকরি করেন। ১৯৫৪ সালে ভালো ঘরে বড় বোন মোমেনা বেগমের বিয়ের পর মেহেরুন্নেসা প্রিয় বাবাকে সাহায্য করার জন্য শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। ছোট্ট মেহেরুন্নেসার হয়তো জীবনের এতো কঠিন হিসাবনিকাশ বোঝার বয়স হয়নি, কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে, আপনজনদের জন্য অল্প বয়সেই পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সংসার পরিচালনার জন্য একসময় তিনি বাংলা একাডেমিতে অনুলিখনের কাজ শুরু করলেন।

দীর্ঘদিন অসুখে ভুগে ১৯৬৯ সালে পিতা আবদুর রাজ্জাক ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন। মা ও দুই ভাইয়ের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। ভালো জায়গা থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসার পরেও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তার পরিবারের জন্য, নতুন কিছু সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায়। দায়িত্বের বেড়াজালে সৃজনশীল কবি মনকে শক্ত বাঁধনে বেঁধে পত্রিকায় কপি লেখা আর প্রুফ দেখার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেসময়ের প্রায় সব পত্রিকাতেই তার কবিতা ছাপা হতো, কিন্তু সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে একটা সময় আর শিল্প- সংস্কৃতিতে সময় দিতে পারলেন না তিনি। নিজের অপার সম্ভাবনাময় প্রতিভা ছোট ভাই দু’টোকে মানুষ করার পেছনেই ব্যয় হচ্ছিল।

তবুও, এতো কষ্টের ভেতরেও মার্চের সেই উত্তাল সময়ে কবিতা লেখা থেমে ছিল না তার। পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী, বিহারী ও রাজাকারদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ২৩ মার্চ সকাল ১০টায় পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের ডি- ব্লক, ১২ নম্বর রোডে নিজ বাড়িতে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়িয়েছিলেন তিনি। গিজগিজে বিহারীদের ভেতর স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবার মতো অকল্পনীয় দুঃসাহস তিনি দেখাতে পেরেছিলেন কারণ এই জন্মভূমির প্রতি তার নিবেদনটুকু ছিল নিঃশর্ত, নিঃস্বার্থ। অবাঙালি ও বিহারীদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত মিরপুরের বাঙালিদের রক্ষার জন্য যিনি প্রিয় বান্ধবী কাজী রোজীকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেছিলেন–‘অ্যাকশন কমিটি’ । ২৩ তারিখেই ‘বেগম’ পত্রিকায় তার শেষ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। বারুদে এই কবিতা রীতিমতো তুমুল সাড়া ফেলে সেই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে।

“জনতা জেগেছে…
মুক্তি শপথে দীপ্ত আমরা দুরন্ত দুর্বার,
সাত কোটি বীর জনতা জেগেছে এই জয় বাংলার।
পাহাড় সাগর নদী প্রান্তর জুড়ে-
আমরা জেগেছি নব চেতনার ন্যায্য নবাঙ্কুরে
বাঁচবার আর বাঁচাবার দাবী দীপ্ত শপথে জলি-
আমরা দিয়েছি সব- ভীরুতাকে পূর্ণ জলাঞ্জলি-
কায়েমি স্বার্থবাদীর চেতনা আমরা দিয়েছি নাড়া
জয় বাঙলার সাত কোটি বীর, মুক্তি সড়কে খাড়া।
গণতন্ত্রের দীপ্ত শপথ কণ্ঠে কণ্ঠে সাধা-
আমরা ভেঙ্গেছি জয় বাঙলার বিজয়ের যত বাধা।
কায়েমি স্বার্থবাদী হে মহল কান পেতে শুধু শোন
সাত কোটি জয় বাংলার বীর ভয় করিনাকো কোন।
বেয়নেট আর বুলেটের ঝড় ঠেলে-
চির বিজয়ের পতাকাকে দেবো, সপ্ত আকাশে মেলে।
আনো দেখি আনো সাত কোটি এই দাবীর মৃত্যু তুমি,
চির বিজয়ের অটল শপথ “জয় এ বাংলা ভূমি। ”

একজন মুক্তিযোদ্ধা, সাহসী বিপ্লবী কবির পরিচয়টা এক পাশে রাখলেও সেই ৫০ বছর আগে একজন নারীর এমন অসামান্য তেজ ও দীপ্তিভরা পথচলা আমাদের বিস্ময়াভিভূত করে। অথচ তাকে ন্যূনতম স্বীকৃতি তো দূরে থাক, আমরা তাকে ভালোভাবে চেনা তো দূরে থাক, আমরা তার নামটাও জানি না! তার এই প্রবল সাহসী যুদ্ধ পাকিস্তানিরা এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদরেরা মেনে নিতে পারলো না। ২৫ মার্চের সেই পৈশাচিকতম গণহত্যার পর মিরপুর এলাকা পুরোপুরি চলে গেল অবাঙালি বিহারী নরপিশাচদের হাতে। তারা মেতে উঠলো জবাই- কুপিয়ে বাঙালি হত্যার বর্বরোচিত উৎসবে! সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের এক পর্যায়ে মার্চের ২৭ তারিখ মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদের মোল্লার (যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসী হয়েছে) নেতৃত্বে বিহারী এবং রাজাকারদের একটি দল মিরপুর ৬ নম্বর ডি ব্লকে কবি মেহেরুন্নেসার বাড়িতে আক্রমণ করে। মানুষটা স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, অনলবর্ষী কবিতা বেরোত তার আঙ্গুল ফুঁড়ে।

তাই মুশরিক, কাফের, ভারতের দালাল ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে প্রথমে ওরা মেহেরুন্নেসার ভাই দু’জনকে কোপাতে শুরু করল। এটা দেখে মেহেরুন্নেসার মা কোরআন শরীফ বুকে চেপে ধরে ওদের কাছে কাকুতিমিনতি করে বলতে লাগলেন, আমরা মুসলিম, আমাদের মেরো না। কিন্তু ওই বর্বর নরপিশাচগুলো সেদিন কিছুই শোনেনি। চোখের সামনে মেহেরুন্নেসার ভাই দু’জনকে জবাই করে ওরা ওই মায়ের সামনেই মেহেরুন্নেসাকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা আর নির্যাতনে একটু একটু করে হত্যা করে। মেহেরুন্নেসার দুই ভাইয়ের মাথা নিয়ে ফুটবলের মতো খেলেছিল সেদিন ওরা। আর মেহেরুন্নেসার দেহ থেকে মাথা আলাদা করে চুল দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে মাথাটা টাঙ্গিয়ে দিয়েছিল কাদের মোল্লা, আর দেহটা কাপড় শুকানোর তারে কাপড় শুকানোর মতো করে ঝুলিয়ে রেখেছিল বিহারীরা।

এই বীভৎস পৈশাচিকতার পুরোটাই তারা দেখতে বাধ্য করেছিল ওরা মেহেরুন্নেসার মাকে। যখন তিন সন্তানকে মায়ের সামনেই মেরে ফেলা হলো, এরপর ওরা কোরআন শরীফ বুকে চেপে থাকা মাকেও জবাই করে। কত বড় নৃশংস জালিম হলে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে কিছু মানুষ এমন অচিন্তনীয় নৃশংসতা চালাতে পারে, ভাবতে পারেন? পাশের বাসার এক প্রতিবেশী দেখেছিলেন এই পুরো ঘটনা, পরে তিনি পাগল হয়ে যান, সবসময় বলতে থাকতেন কিভাবে এই পুরো পরিবারের চারজনকে কসাই কাদের মোল্লা এবং বিহারী এবং রাজাকারেরা মেরেছে। হা হা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল সেদিন কাদের মোল্লাসহ পাকিস্তানিরা। কোরআন শরীফ বুকে জড়িয়ে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে প্রাণভিক্ষা চেয়েও বাঁচতে পারেননি মেহেরুন্নিসার মা।

প্রিয় পাঠক, আর কিছু না, স্রেফ এটুকু চিন্তা করুন তো, আপনার সামনে আপনার সন্তানকে কেউ জবাই করছে, আর আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছে শুধুমাত্র আপনার সন্তানকে বীভৎসভাবে জবাইয়ের সেই দৃশ্য দেখবার জন্য। একটা সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করুন তো দৃশ্যটা! কি, পারছেন? কসাই কাদের মোল্লার বিচার চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দী দিয়েছিলেন শহিদ কবি মেহেরুন্নেসার বন্ধু কবি কাজী রোজী। তার বর্ণনা থেকে উঠে এসেছে কবি মেহেরুন্নেসার উপর নির্যাতনের চিত্র।

কবি কাজী রোজী বলেন, “একাত্তরে নিহত কবি মেহেরুন্নেসা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। আমরা একই এলাকায় থাকতাম। একাত্তরে মিরপুরে অবাঙালি ও বিহারীরা বাঙালিদের ভীষণভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করত। এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ওই নির্বাচনের সময় আমরা একটা অ্যাকশন কমিটি গঠন করি। আমি ছিলাম ওই কমিটির সভাপতি, কবি মেহেরুন্নেসাসহ আরও অনেকে ছিল সদস্য। মিরপুরের অবাঙালিরা এজন্য আমাদের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করত। এটা বুঝতে পেরে আমরা অ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন মিটিং- মিছিল করতে থাকি“। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে আমি ও মেহেরুন্নেসাসহ অনেকেই রেসকোর্স ময়দানে গিয়েছিলাম। এই ভাষণ ছিল স্বাধীনতার ডাক। এরই মধ্যে চলে আসে ২৫ মার্চ। সেদিন সকালে আমি মিটিং করছিলাম। বুঝতে পারছিলাম একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে। মিটিং শেষ করে বাসায় ফেরার পর খবর পেলাম, আমার ও কবি মেহেরুন্নেসার বাসায় তল্লাশি হবে। কারণ, এ্যাকশন কমিটিতে আমরা দুজন ছিলাম নারী সদস্য। আমি যখন জানতে পারলাম, আমার বাসায় তল্লাশি হবে, তখন মেহেরুন্নেসার বাসায় খবর পাঠালাম। বললাম, আমি আজই বাসা ছেড়ে চলে যাব। তোমরাও অন্যত্র চলে যাও। এ খবর পাবার পর মেহেরুন্নেসা তার ছোট ভাইকে দিয়ে আমার বাসায় খবর পাঠাল যে, সে, তার মা ও দুই ভাইকে নিয়ে কোথায় যাবে? আমি বুঝালাম, বাড়ি থেকে চলে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন। তারপর ২৫ মার্চের কালরাতের ঘটনা সবাই জানেন। দিন চলে গেল। ২৭ মার্চ বিকেলে আমি খবর পেলাম, মেহেরুন্নেসা, তার দুই ভাই ও মা কে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী অবাঙালিরা হত্যা করেছে। অবাঙালিদের মধ্যে কেউ কেউ মাথায় সাদা ও লাল পট্টি বেঁধে মেহেরুন্নেসার বাসায় সকাল এগারটায় ঢুকে যায়”।

কবি কাজী রোজী আরও বলেন, “মেহেরুন্নেসা যখন দেখল, ওরা তাদের মারতে এসেছে, তখন তিনি বুকে কুরআন শরীফ চেপে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওরা কবি মেহেরুন্নেসাসহ চারজনকে জবাই করে। পরে গুলজার ও আরও অবাঙালির কাছ থেকে শুনেছিলাম, কবি মেহেরুন্নেসাকে গলা কেটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। মেহেরুন্নেসা তখন গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছিল। এই বীভৎস সংবাদ পেয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম। মেহেরুন্নেসার জন্য আজ অবধি আমি কষ্ট পাই। আজ আমি এখানে কাঁদতে আসিনি। এ হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে এসেছি। আমি সত্যিকার অর্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। আমি বিচার দেখে যেতে পারব কিনা জানিনা। আমার ভিতর কোন রাগ নেই, আছে শুধুই ঘৃণা”।

কবি মেহেরুন্নেসার অবিনাশী আত্মত্যাগ এবং জন্মভূমির প্রতি নিবেদন ও নিঃশর্ত ভালোবাসা এই জাতির অনাগত ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী দিকনির্দেশনা হয়ে রবে তখনই, যখন আমরা তার সম্পর্কে জানতে চাইবো, জানাতে চাইবো। শ্রদ্ধায় স্মরণ করব তাকে ও তাদের সবসময়। কবি মেহেরুন্নেসার প্রতি অতল শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা।

লেখক: একটিভিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

ফিচার মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নারী শহিদ কবি মেহেরুন্নেসা রা'আদ রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর