Wednesday 10 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভুলিনি তোমায়: অভিমান ভাঙানোর, একটি দিন

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:২৭

যে যুগে মানুষ হাতের মুঠোয় পৃথিবীকে বয়ে নিয়ে বেড়ায়, সেই যুগেই মানুষকে ভুলে যাওয়া যেন আরও সহজ হয়ে উঠেছে। ব্যস্ততা, দূরত্ব, অভিমান— কোনো না কোনো কারণে আমরা জীবনের পথচলায় অনেক প্রিয় মানুষকেই হারিয়ে ফেলি। আর সেই ভুলে যাওয়া কিংবা ভুলে থাকার অভ্যাসটাকেই ভাঙাতে প্রতি বছর ১০ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় এক মজার, হৃদয়গলানো দিবস— Forget-Me-Not Day, অর্থাৎ ‘ভুলিনি তোমায় দিবস’।

শুনতে তো নামটাই গল্পের মতো— একটু রোমান্টিক, একটু আবেগঘন, আবার একটু খেলা-ধরনেরও। কিন্তু এর ভিতরে লুকিয়ে আছে সম্পর্ককে আবার নতুন করে রঙ করে তোলার এক দারুণ সুযোগ।

নামের ভিতরেই থাকা গল্প

‘ফরগেট-টু-নট’ আসলে একটি ছোট নীল ফুলের নাম। ইউরোপ থেকে শুরু করে পৃথিবীর নানা জায়গায় ফুলটি ভালোবাসা, স্মৃতি আর প্রতিশ্রুতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। জনশ্রুতি আছে— মধ্যযুগে এক প্রেমিক তার প্রেয়সীর জন্য নদীর ধারে এই ফুল তুলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। ডুবে যাওয়ার আগে সে প্রেয়সীকে নাকি শেষবারের মতো বলেছিল— ‘Forget me not!’

বিজ্ঞাপন

এই রোমান্টিক কিংবদন্তিই নাকি দিবসটির অনুপ্রেরণা।

মূল ভাবনা

মানুষের জীবনে এমন মানুষ থাকে— যাদের সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে কথা বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কেউ আছে যাদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাওয়া যায় না, আর আছে কিছু পুরনো বন্ধু— যাদের ফোনলিস্টে নাম থাকে, কিন্তু কথা হয় না বছরের পর বছর।

Forget-Me-Not Day মূলত সেই সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার দিন: ‘শুনো, আমি তোমাকে ভুলে যাইনি।’

এটাও একধরনের মানসিক সুস্থতার দিন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, পুরনো বন্ধন মেরামত করা, অথবা কেবল কাউকে ভেবে একটি ছোট্ট মেসেজ পাঠানো—এসবই দিবসটির মজা ও অর্থ।

কেন এই দিবস?

কারণ, এই দিনে মানুষ নানা সৃজনশীল উপায়ে প্রিয়জনদের মনে করিয়ে দেয়—

কেউ মজার মিম পাঠায়— ‘তোমাকে ভুলিনি, রিচার্জ নেই বলে ফোন দিইনি!’
কেউ হঠাৎ করে বহুদিন পর কোনো বন্ধুকে ট্যাগ করে লেখে— ‘মনে আছে? কলেজের সেই দিনগুলো?’
কেউ আবার হঠাৎ করে কেক পাঠিয়ে দেয়— কেকের ওপর আবার লেখা— Forget me not!
অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শৈশবের ছবি পোস্ট করে, সঙ্গে মজার ক্যাপশন— ‘যেমন ছিলাম, তেমন আছি— অনেকটা ভুলে গেলেও আমি ঠিক আছি!’
এই দিনটির ব্যাকরণই হলো— হালকা মজা, নরম আবেগ, আর একটু চমক।

বৈজ্ঞানিক ভাষায়

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের মানসিক সুস্থতার বড় অংশ নির্ভর করে সামাজিক সংযোগের ওপর। মানুষ যদি অনুভব করে—

তাকে মনে রাখা হচ্ছে,
তাকে মূল্য দেওয়া হচ্ছে,
তার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে কেউ আগ্রহী—
তাহলে তার মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তাই এই দিবসটি মোটেও হালকা নয়— এর পেছনে আছে মানবিক মনস্তত্ত্বের গভীর বিজ্ঞান।

কীভাবে পালন করবেন?

হঠাৎ মেসেজ অভিযান: দীর্ঘদিন কথা হয়নি—এমন ৩ জনকে বেছে নিন। শুধু লিখুন
‘Forget me not!’ তারপর অপেক্ষা করুন তাদের অবাক প্রতিক্রিয়ার জন্য!

পুরনো ছবি শেয়ার: ক্লাস টেনের বিরিয়ানি খাওয়ার ছবি, বা কোনো ফ্যামিলি ট্রিপ—যেকোনো একটা পোস্ট করুন। ক্যাপশন দিন— ‘যারা ছবিতে আছ, ভাবছ না— সবাইকে মনে আছে!’

ফুল পাঠানো: অনলাইনে সত্যিকারের ফরগেট-টু-নট ফুল পাওয়া কঠিন হলেও, কার্ড বা ডিজিটাল স্টিকারের মাধ্যমে পাঠানো যায়।

অভিমান ভাঙাও দিবস: যার সঙ্গে অভিমান চলছে, তাকে আজ একটি মেসেজ— ‘আজ তো Forget-Me-Not Day… তাই ভাবলাম অভিমান থাকলেও ভুলে থাকব না।’

নিজেকেও মনে করিয়ে দিন: আপনি যাতে নিজেকেই ভুলে না যান— নিজের পুরনো স্বপ্ন, পুরনো পরিকল্পনাও মনে করার দিন এটি।

শেষ কথা

জীবনে অনেক বড় বড় দিবস আসে—মানবাধিকার, জলবায়ু, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য… কিন্তু এর মাঝে এমন ছোট ছোট দিবসগুলোই আমাদের ব্যস্ত জীবনে একটু হাসি, একটু নরম অনুভূতি এনে দেয়।

Forget-Me-Not Day— মজার, সরল, আর হৃদয়ছোঁয়া একটি দিন। একটা মেসেজ, একটা স্টিকার, একটা ছোট্ট ‘হাই!’— এতটুকুতেই হয়তো ফিরে আসে কোনো হারানো সম্পর্কের উষ্ণতা।

তাই আজ— কাউকে বলুন, হালকা একটু হাসুন, আর মনে করিয়ে দিন—
‘ভুলিনি তোমায়!’

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি
বিজ্ঞাপন

১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা
১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:০৫

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর