Monday 13 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে পরিচালক হিসেবে আপনি প্রতিভাবান’

আসাদ জামান
১২ এপ্রিল ২০২১ ১৪:০৭

আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু—৫ বার অস্কার বিজয়ী মেক্সিকান নির্মাতা। নির্মাণ করেছেন আমোরেস পেররোস, টুয়েন্টি ওয়ান গ্রামস, বাবেল, বিউতিফুল, বার্ডম্যান ও দ্য রেভিন্যান্টের মত এর মত দুর্দান্ত চলচ্চিত্র। বিশ্বের এ অন্যতম সেরা এ নির্মাতা সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাপ্তাহিক ‘দ্য টকস’ কে। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন আসাদ জামান

 

একজন নির্মাতার কি তার নির্মিত চলচ্চিত্রে বসবাস একান্ত প্রয়োজন?

আমি মনে প্রতিটি চলচ্চিত্র নির্মাতার নিজের প্রতিচ্ছবি, তা যেভাই হোক না কেন। আমার নির্মিত ছবিগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। নির্মাণের পূর্বে, নির্মাণকালীন বা শেষে কখনও কখনও আমি অনুভব করি যে চলচ্চিত্রগুলি বাস্তবের সাথে মিশে যেতে শুরু করেছে। সেখানে একটি অদ্ভুত অস্পষ্ট রেখা দেখা দেয় এবং হঠাৎ তা অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি আবার চলচ্চিত্রে থিমেটিক্যালি চলে আসে এবং এরকমটা জীবনকে সত্যিকারভাবে ঘিরে রেখেছে। আমার সাথে চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অনেকবার এমন হয়েছে।

এক্ষেত্রে বিশেষ কোন চলচ্চিত্রের কথা বলবেন?

দ্য রেভিন্যান্ট। এই সিনেমার চরিত্র যখন মাইনাস চল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্য দিয়ে হাঁটছিল, ওই সময়ে আমরাও তাই করছিলাম। এক্ষেত্রে কিন্তু চরিত্রের শারীরিক অবস্থান আর আমাদের শারীরিক অবস্থান একই জায়গায় ছিল।

বর্তমানে প্রায় সব বড় প্রডাকশনই সেট বা পরবর্তীতে পোস্ট প্রোডাকশনের মাধ্যমে এ ধরণের পরিবেশ তৈরি করে শুটিং করছে। সেখানে আপনি কেন এমন প্রতিকূল পরিবেশ বেছে নিলেন?

আমি ভীষণ খুশি এমন একটা বন্য পরিবেশের মধ্যে দিয়ে আমার সিনেমাকে নিতে পেরে। এটি কিন্তু একই সঙ্গে সিনেমার ঐতিহ্য আর মূল ধারার অনুসারী। আমরা শুটিং করেছি সত্যিকারের লোকেশনে, সত্যিকারের আবহাওয়া আর প্রতিকূলতার মধ্যে যা রেভারেন্টের গল্পের প্রকৃত শারীরিক ও মানসিক অবস্থান। এর জন্য আমাদের কৃত্রিম সেট বা ডিজিটাল থিমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। আমার লোকেশনের প্রতিকূলতা আর এর চারপাশের প্রাকৃতিক আলো আমাকে যা দিয়েছে তা অন্য কিছুতেই পাওয়া সম্ভব ছিল না। আমি বিশ্বাস করি কোন সুপার কম্পিউটার বা দুর্দান্ত সেট ডিজাইনার কারো পক্ষেই এর সাথে একাত্ম হওয়া সম্ভব না।

বিজ্ঞাপন

কেন নয়?

কারণ শুধুমাত্র রেভারেন্টের লোকেশনের জটিলতা এবং সৌন্দর্যের জন্য নয়। ছবিটি নির্মাণকালীন সময়ে প্রতিটি ক্রুদের মনের অবস্থা ও পুরো সিস্টেমটিতে এক ধরনের বিক্ষুব্ধতা ছিল; আর আমি সত্যিকার অর্থে এ প্রসেসটাকে ভালবাসি। ছবিটি তৈরির ওডিসি নিজেই চলচ্চিত্রে পরিণত হয়েছিল। আমরা ফাঁদে পড়ে গেলাম! এটি দুর্দান্ত ছিল এবং একটি বিশাল সংবেদনশীল অভিজ্ঞতাও বটে। সেই সাথে শারীরিক অভিজ্ঞতাও।

আপনার উত্তর আমাকে হার্জোগের আগুয়েরে-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পেরু রেইনফরেস্টের শুটিংয়ের কঠোর পরিস্থিতি ছবিটির মধ্যে দিয়ে যাবে আর তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের রাগ ফুটে উঠবে বলে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন।

হ্যাঁ, হার্জোগের ‘আগুয়েরে’ বা ‘ফিটজকার্লাল্ডো’ আমার মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল। আকিরা কুরোসাওয়ার ‘ডেরসু উজালা’, ‘অ্যাপোক্যালিস নাও’-এর কথা ধরা যাক। চলচ্চিত্রগুলিতে মানুষরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে থাকে। এগুলোতে এমন কিছু ল্যান্ডস্কেপ রয়েছে যেগুলো চরিত্রের আবেগময় অবস্থাকে নির্দেশ করে। আপনি সেগুলোর দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন চরিত্রের মানসিক বা শারীরিক অবস্থান কেমন করে প্রকৃতির সাথে মিশে গেছে। আমি সত্যিই ছবিগুলি ভালবাসি।

তবে এ ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণে ভয়ঙ্কর রকম মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।

চলচ্চিত্র নির্মাণে আমি বরাবরই ক্রেজি! আর হা এটা ভয়ানক হতে পারে। সবকিছু খুব সহজেই ভুল হতে পারে … প্রতিদিন অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ ছিল আর সেই সাথে অজানা আরো কিছু চ্যালেঞ্জ যোগ হচ্ছিল। একটা সময় আমি আমার নিজের নিয়মে আটকা পড়েছিলাম। যদি আমি শেষ না করি, বা আমি যেভাবে চাইছিলাম তা শেষ না করতে পারতাম, তবে বিপর্যয় হয়ে যেত। এটি ম্যারাথনের মতো; এমন কোনো উপায় নেই যা আপনি থামতে পারবেন, আপনাকে শেষ করতে হবে। আপনি অনুভব করছেন যে আপনার চারপাশ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে, তারপরও আপনাকে শেষ করতে হবে! সেই সাথে আরেকটা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আপনার টিমকে বিশ্বাস করতে হবে, মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে পরিচালক হিসেবে আপনি প্রতিভাবান। আপনি দুর্দান্তভাবে সবকিছু করতে সক্ষম এবং টিমের অন্যসব অংশের সবার চেয়ে সেরা। যদি আপনার সিনেমাটোগ্রাফার, এডিটর, মেকআপ আর্টিস্ট কিংবা প্রযোজক মনে করে তারা আপনার চেয়ে চলচ্চিত্র ভালো বুঝে তাহলে সেই চলচ্চিত্রটি যথাযথ নির্মাণ রীতিমত অসম্ভব। অন্তত আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবে তো হবেই না।

বিজ্ঞাপন

একজন নির্মাতার ক্যারিয়ার ব্যক্তিগত জীবনে কতটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি পারে, ধরুন বিয়ের ক্ষেত্রে?

আমি আশা করি খুব শিগগিরই আমার বিবাহবিচ্ছেদ হবে না! (হাসি) এটা সবসময়ই কঠিন। আপনার কাছে সবসময় ফিল্ম মেকিং অনেক কিছু দাবি করে। এটি যেমন আপনার থেকে অনেক উচ্ছিষ্ট নিয়ে যাবে, তেমনি যেসব মানুষদের আপনার দরকার তাদের থেকেও অনেক দূরে রাখবে। বলতে পারেন, এটি অন্যতম কঠিন অংশ।

আপনার পরবর্তী ছবিটিও একটি উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট। যার প্রযোজক হিসেবে আরনন মিলচানের মতো বড় প্রযোজক আছে। যিনি দ্য রেভারেন্ট’, বার্ডম্যানওয়ানস আপন অ্যা টাইম ইন আমেরিকা অ্যান্ড ব্রাজিল-এর মতো ছবির প্রযোজক। এ ধরনের ছবির জন্য তার মতো প্রযোজক কি আসলেই দরকার? 

অবশ্যই। এমন ধরণের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য একই টেস্টের, একই মানসিকতা আর পাগলামীর প্রযোজকের দরকার আছে। যিনি কিনা আপনার ছবিটিকে বাস্তব রূপ দিবে।

অন্যরা কি অর্থ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকে?

তা তো অবশ্যই। এ কারণেই এ ধরণের চলচ্চিত্র আর নির্মিত হচ্ছে না। কারণ এখানে জড়িত বেশিরভাগ লোকই শুধু বিনিয়োগকারী। ফলে তাদের থাকার একমাত্র কারণ ‘লাভ’। যখন সমস্ত কিছু লাভের দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন একটি চলচ্চিত্র হয়ে উঠে শুধুই প্রয়োজনীয় জিনিস বা সহজলভ্য পণ্য; যা কাউকে বিরক্ত করে না এবং অনেক বেশি দর্শক তা দেখে যা তাদেরকে কোন ভাবনায় ফেলে না। এ রকমই বিপদজ্জনক অবস্থায় আমরা রয়েছি। আর এটাই শুধু লাভের জন্য! আমি বলছি না যে এরকমটা আগে অন্যরকম ছিল। সবসময় এরকম ছিল। কিন্তু এখন আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

দ্য রেভিন্যান্টের মত ছবি কি আবার নির্মাণ করতে চাইবেন?

আমার মনে হয় আমি যা যা করেছি তার প্রকৃত মূল্য পাইনি। তবে আমি খুব গর্বিত এবং আমি আর এটি আর করব না। (হাসি) এটা খুবই কঠিন ছিল। চরমভাবে, চূড়ান্ত দাবিদার। সৎভাবে বললে এটি একটি টিকে থাকার মত কাজ হয়েছিল। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমার জন্য মুহুর্তগুলো ছিল খুবই কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং।

সারাবাংলা/এজেডএস

আমোরেস পেররোস আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু টুয়েন্টি ওয়ান গ্রামস দ্য রেভিন্যান্ট বাবেল বার্ডম্যান বিউতিফুল

বিজ্ঞাপন

লিটনের দুই অনুপ্রেরণা কারা?
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৩

আরো

সম্পর্কিত খবর