বিশ্ব সংগীতের মঞ্চে কার্দি বি মানেই উচ্চকণ্ঠ, সাহসী লিরিক আর আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি। কিন্তু এবার সেই পরিচিত র্যাপারই সৌদি আরবের রিয়াদে একেবারে ভিন্ন রূপে। কালো ঢিলেঢালা পোশাক, মাথায় হিজাব— এ দৃশ্য শুধু ভক্তদের চমকায়নি, বরং আলোচনার কেন্দ্রে এনে দিয়েছে সংস্কৃতি, সম্মান আর বৈশ্বিক বিনোদনের নতুন গতিপথকে।
রিয়াদের এমডিএলবিস্ট সাউন্ডস্টর্ম উৎসব— সৌদি আরবের অন্যতম বড় সংগীত আয়োজন। ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ হিসেবে দেশটি যখন তেলনির্ভর অর্থনীতির বাইরে বিনোদন, সংস্কৃতি ও পর্যটনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, তখন কার্দি বি–র মতো আন্তর্জাতিক তারকার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে প্রতীকী। মঞ্চে ওঠার আগে তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বললেন, ‘সালামু আলাইকুম’। সঙ্গে ‘মাশাল্লাহ’— শব্দগুলো যেন মুহূর্তেই দূরত্ব কমিয়ে দিল শিল্পী আর দর্শকের।
ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে কার্দি বি নিজেকে পরিচয় করালেন মজার ছলে— ‘হ্যালো সৌদি আরব। হালাল বি এসেছে’। ক্যাপশনের শেষে সৌদি পতাকার রঙের লাভ ইমোজি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল মুহূর্তেই। রিয়াদের শপিং মল, শহরের রাস্তায়—সবখানেই একই পোশাকে তার উপস্থিতি। তার স্বাভাবিক মঞ্চ-স্টাইলের সঙ্গে এই সংযত রূপের বৈপরীত্যই হয়তো সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে।
লাইভ ব্রডকাস্টে তিনি অকপটে বললেন, সৌদি আরবে এসে মনে হয়েছে— ‘এখানকার ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়রা সবাই আমাকে চেনে।’ মানুষজন ভদ্র, শালীন— এই অভিজ্ঞতা তার চোখে শহরটাকে করে তুলেছে ‘একেবারে নতুনের মতো’। হোটেলের আপ্যায়ন, কক্ষের ভেতর জিম— সব মিলিয়ে সফরটি যে তার জন্য আরামদায়ক ছিল, সেটাও গোপন রাখেননি।
তবে এই গল্পের আরেকটি দিকও আছে। সৌদি আরব আন্তর্জাতিক তারকাদের টানছে, মঞ্চ খুলছে— একই সঙ্গে মানবাধিকার ইস্যুতে সমালোচনাও থেমে নেই। তবু বাস্তবতা হলো, সংগীত আর বিনোদন এখন কূটনীতির নরম ভাষা। কার্দি বি-এর হিজাব পরা, সংযত আচরণ— এ যেন দুই ভিন্ন বিশ্বের মাঝে এক মুহূর্তের সেতুবন্ধন।
শেষ পর্যন্ত এই সফর কার্দি বি-কে নতুন করে চিনিয়েছে কি না, সেটাই প্রশ্ন। হয়তো তিনি আগের মতোই থাকবেন— র্যাপের রানি। কিন্তু রিয়াদের সেই মঞ্চে, হিজাবের নীরবতায়, তিনি দেখিয়ে দিলেন— সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানাতে জানলে শিল্পীর ভাষাও বদলায়, আর সেই বদলই কখনো কখনো সবচেয়ে জোরালো বার্তা হয়ে ওঠে।