শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথায়— বড় প্রেম কখনো শুধু কাছে টানে না, কখনো দূরেও সরিয়ে দেয়। টলিউডের আলোচিত জুটি দেব-শুভশ্রীর গল্পটাও ঠিক তেমনই। পর্দায় শুরু, বাস্তবে গভীর— আবার বাস্তবের কঠিন মোড়ে এসে থমকে যাওয়া এক সম্পর্কের নাম এই দুজন।
‘চ্যালেঞ্জ’ ছবির সেট থেকেই শুভশ্রীর জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। বক্স অফিস কাঁপানো সাফল্যের পাশাপাশি গড়ে ওঠে প্রেমের বন্ধন। সেই সময়টা ছিল উজ্জ্বল, স্বপ্নময়। কাজ, ক্যারিয়ার— সবকিছুর মধ্যেই প্রেম ছিল কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কেন্দ্রটাই বদলে যেতে থাকে।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে শুভশ্রী অকপটে স্বীকার করেছেন, প্রেমের টানেই একসময় অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ‘পরাণ যায়…’ ছবির পর চার বছর ইচ্ছাকৃত বিরতি— সেটি ছিল কোনো বাধ্যবাধকতা নয়, বরং ভালোবাসার জন্য নেওয়া সচেতন সিদ্ধান্ত। কাজ থেকে ফোকাস সরে গিয়েছিল, আর সেই সরেই যাওয়াটা ছিল তার নিজেরই পছন্দ।
তবে জীবনের অনিশ্চয়তা খুব দ্রুতই সামনে এনে দেয় আয়না। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর বুঝতে পারেন— জীবনে সবকিছু এক জায়গায় রেখে দিলে হারানোর ভয়টা আরও বড় হয়ে ওঠে। তবুও সেই চার বছরের জন্য কোনো আফসোস নেই শুভশ্রীর কণ্ঠে। কারণ, ভালোবাসার সময়টাকে তিনি কখনো ‘নষ্ট’ বলে মনে করেন না। বাবা-মায়ের কাছে সব বলা না গেলেও নিজের খুশিটুকু ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন— এটুকুই ছিল তাঁর সত্য।
বিচ্ছেদের পরের সময়টা ছিল শূন্যতার। নিজেই বলেছেন, তখন তিনি ‘জিরো’ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই শূন্যতাই তাঁকে নতুনভাবে গড়ার সাহস দিয়েছে। হারানোর আর কিছু নেই— এই উপলব্ধি থেকেই শুরু হয় নতুন যাত্রা। তারপর থেকেই তাঁর ক্যারিয়ারে আসে ভিন্ন মোড়, ভিন্ন শক্তি।
শুভশ্রীর গল্প আসলে কেবল এক তারকার প্রেমভাঙার কাহিনি নয়। এটি এক নারীর নিজের সিদ্ধান্ত, নিজের ত্যাগ এবং নিজের ভেতর থেকে আবার উঠে দাঁড়ানোর গল্প। প্রেম এসেছিল, প্রেম গিয়েছিল— কিন্তু সেই পথ পেরিয়ে আজ তিনি আরও পরিণত, আরও দৃঢ়।
কখনো কখনো জীবনের সবচেয়ে নীরব সিদ্ধান্তগুলোই সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের সূচনা করে। শুভশ্রী গাঙ্গুলীর জীবনে সেই নীরব সিদ্ধান্তের নাম— ভালোবাসার জন্য চার বছরের বিরতি, আর তারপর নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।