কিছু গান থাকে, যেগুলো শুধু কানে শোনা যায় না— মনের ভেতর নীরবে দরজা খুলে দেয়। স্মৃতির ধুলো জমা অ্যালবাম থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসে শৈশব, মানুষ আর সময়। কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার কণ্ঠ ঠিক তেমনই— যেখানে গান মানেই আবেগ, আর আবেগ মানেই ফিরে যাওয়া।
রাজধানীর এক সংগীতানুষ্ঠানে সেই ফিরে যাওয়ার মুহূর্তটাই অনুভব করলেন অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। শেরাটন ঢাকার বলরুমে আয়োজিত ‘বাংলা গানের প্রাণ’ অনুষ্ঠানে রুনা লায়লার লাইভ পারফরম্যান্স শুনে যেন সময়ের ঘড়ি উল্টো দিকে ঘুরে গেল। গানের সুরে নাবিলা ফিরে গেলেন সৌদি আরবে কাটানো শৈশবের দিনগুলোতে। চোখের কোণে জমে উঠল জল— অজান্তেই।
মঞ্চে যখন রুনা লায়লা গেয়ে উঠলেন, ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব’, তখন পুরো মিলনায়তনে নেমে এলো এক অদ্ভুত নীরবতা। সেই নীরবতার ভেতরেই যেন হাজারো মানুষের ব্যক্তিগত গল্প লুকিয়ে ছিল। দর্শকসারিতে বসে থাকা নাবিলার কাছে সে মুহূর্তটা ছিল ভীষণ ব্যক্তিগত—শৈশবের স্মৃতি, পরিবারের সঙ্গে কাটানো সন্ধ্যা, বিটিভি থেকে রেকর্ড করা ভিডিও ক্যাসেট, ভিসিআরের সামনে বসে গান শোনা।
অনুষ্ঠান শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অনুভূতি ভাগ করে নেন নাবিলা। লেখেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে তিনি গর্বিত—কারণ এই দেশের একজন রুনা লায়লা আছেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর রং ফিকে হয়ে যায়, কিন্তু রুনা লায়লার কণ্ঠে আজও সেই একই শক্তি, একই বিস্ময়। নিজের কানে না শুনলে তা বোঝা যায় না—এ কথাও অকপটে স্বীকার করেন তিনি।
নাবিলার শৈশবের স্মৃতিতে রুনা লায়লার গান ছিল নিত্যসঙ্গী। তিন-চার বছর বয়স থেকেই ‘শিল্পী আমি শিল্পী’ কিংবা ‘বন্ধু তিন দিন’ ছিল তার প্রিয় গানের তালিকায়। এমনকি একবার ‘বন্ধু তিন দিন’ গানটি শুনতে না পেয়ে ভিসিআর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছোট্ট নাবিলা কেঁদে ফেলেছিলেন—সে স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি।
হয়তো এটাই সংগীতের শক্তি। একটি গান, একটি কণ্ঠ—আর মুহূর্তেই মানুষ ফিরে যায় বহু বছর পেছনে। রুনা লায়লার গানে নাবিলার সেই ফিরে যাওয়া আসলে শুধু একজন অভিনেত্রীর গল্প নয়; এটি আমাদের সবার। কারণ আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই এমন কিছু গান থাকে, যেগুলো শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মধুমাখা দিন, ভালোবাসা আর হারিয়ে যাওয়া সময়।