শোবিজের ঝলমলে আলোয় যাদের দেখি, তাদের জীবনকে আমরা প্রায়ই নিখুঁত ভেবেই নিই। কিন্তু ক্যামেরার পেছনে ঠিক কতটা অন্ধকার, কতটা অসহায়তা আর কতটা লড়াই লুকিয়ে থাকে— তা জানা যায় কেবল তখনই, যখন তারকারা নিজেরাই খুলে বলেন। সম্প্রতি ভারতীয় টেলিভিশনের আলোচিত অভিনেত্রী দীপিকা কক্কর ঠিক তেমন করেই জানালেন তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়ের গল্প— ক্যানসারের সঙ্গে তার যুদ্ধ।
ইউটিউব চ্যানেলে সহ-অভিনেত্রী রশ্মি দেশাইকে অতিথি করে দেওয়া এক স্বচ্ছ ও আবেগঘন আলাপচারিতায় দীপিকা জানালেন, তিনি এখন আর ক্যামেরায় সুন্দর দেখাতে চান না। কারণ এই মুহূর্তে তার কাছে সুন্দর মুখ নয়, বেঁচে থাকা—এইটাই বড় সত্য। আর বেঁচে থাকার গভীরতম প্রেরণা একটাই— তার ছোট্ট ছেলে।
ক্যানসারের কথা প্রথম জেনে কীভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, দীপিকার কথায় সেই মুহূর্ত যেন আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের মুখে ক্যানসারের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মাথায় প্রথম যে চিন্তাটা আসে—ছেলের মুখ। ও কীভাবে থাকবে? আমি কীভাবে দূরে থাকব ও থেকে?’
হাসপাতালে ভর্তি হতে যাওয়ার মুহূর্তটিই তার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল। এক বছরের শিশু, যে এখনো মায়ের গন্ধ ছাড়া ঘুমোতে পারে না, তাকে রেখে যেতে হলো মায়ের কাছে। ছোট্ট শিশুটি মাকে না পেয়ে সে দিন অঝোরে কেঁদেছিল—একটা মাকে অসহায় করে তোলার জন্য এর চেয়ে বড় দৃশ্য আর কী হতে পারে!
চিকিৎসার প্রভাব পড়ছে শরীরের ওপর—চুল ঝরছে, ওজন বেড়ে যাচ্ছে। অভিনয় জগতে যেখানে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রায়ই মানদণ্ড হিসেবে দেখা হয়, সেখানে দীপিকার কাছে আজ এসবই তুচ্ছ। তার ভাষায়— ‘আমার চুল থাক বা না থাক, আমি মোটা হই বা আরও শুকাই… কিছুই আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার বেঁচে ওঠাটাই মূল।’ এই কথাগুলো যেন প্রতিটি লড়াই করা মানুষের কণ্ঠস্বর— যারা জানেন, জীবনের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে জীবনটাই।
স্বামী শোয়েব ইব্রাহিমও নিজেকে ভেঙে পড়তে বাধা দিতে পারেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’জনে সিদ্ধান্ত নিলেন— যাই হোক, দীপিকাকে সুস্থ করতেই হবে। যে রোগই হোক, লড়াই থেমে থাকবে না। এই দৃঢ়তা, এই পারিবারিক একতা—দীপিকার সুস্থতার পথে সবচেয়ে বড় সাহস।
এই কঠিন সময়ে দীপিকার পাশে রয়েছেন তার মা, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা, বন্ধু—সবাই। তাদের উপস্থিতি তাকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়, দুঃখের সময়ে তারকা—মানুষ—একই।
একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী কখনও কখনও নিজের লড়াইকে আড়াল করে রাখেন, যাতে ভক্তরা তাকে সবসময়ই উজ্জ্বল রূপেই দেখুক। কিন্তু দীপিকা তার দুর্বলতা, ব্যথা, ভয়—সবই নরমভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। কারণ তিনি জানেন, তার গল্প হয়তো আরও কোনো মানুষের মনোবল বাড়িয়ে দিতে পারে।
আজ দীপিকার স্বপ্ন একটাই— নিজের শিশুকে কোলে নিয়ে আবার হাসিমুখে বাড়ি ফেরা। আর এই লড়াইয়ে তিনি কেবল একজন অভিনেত্রী নন, তিনি একজন মা, একজন যোদ্ধাও।