প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য
১৪ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৪৮ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ১৬:৫৮
সাত মাস পরে প্রথম কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক ক্রিকেট! এত লম্বা বিরতির পরে নেমে ব্যাটসম্যানেরা এতটু আধটু ভিমড়ি খাবেন এটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া দুটি ম্যাচই ওভারকাস্ট কন্ডিশন দেখল। আর ওভাকাস্ট কন্ডিশন মানেই তো বোলারদের জয়জয়কার। তাই লো স্কোরিং ম্যাচ হওয়াটা দোষের নয়। কিন্তু তাই বলে ১০৩ রানে অলআউট? দেশের এত হাক ডাকওয়ালা ব্যাটসম্যানেরা ডাবল ডিজিট ছুঁতেও হিমশিম খাবেন! হিসেব যে মিলছে না কিছুতেই। তামিম, লিটনরা কী ব্যাটিং ট্যাটিং বেমালুম ভুলে গেলেন?
পড়ুন: প্রেসিডেন্ট’স কাপ: দুই ম্যাচেই পেসারদের রাজত্ব
বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপ টুর্নামেন্টের প্রথম দুটি ম্যাচেই নাম মাত্র রানের খেলা চোখে পড়ল। প্রথমটিতে আগে ব্যাটিং করা দল ১৯৭ রান, আর দ্বিতীয়টিতে ১০৩! অথচ খেলছেন দেশ সেরা সব ব্যাটসম্যানেরা। কিন্তু হায় তাদের অবিমৃশ্যকারী ব্যাটিং দেখে দেখে ঘুণাক্ষরেও তা বোঝার উপায় নেই যে তাদের হাত ধরেই ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলো কুপোকাত হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রশ্নবিদ্ধ তাদের সামর্থ্য।
হতে পারে, করোনা অতিমারির দীর্ঘ সাত মাস বিরতির পরে এই প্রথম কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক টুর্নামেন্টে নেমেছেন বলেই হয়ত ব্যাটসম্যানদের এতটা ভুগতে হচ্ছে। তাছাড়া দুটি ম্যাচই ওভারকাস্ট কন্ডিশনে খেলা হয়েছে। প্রথম ম্যাচের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়টিও বৃষ্টির বাগড়ায় ন্যূনতম ৪০ মিনিট বিরতিতে শুরু হয়েছে। ওভার কাস্ট কন্ডিশন মানেই তো বোলারদের দাপট। উইকেট নরম হয়ে আসে ফলে বলও কখনো ধীরগতিতে, কখনো ডাবল পেস আবার কখনও বা ডাবল বাউন্স দেখা যায়। দুই ম্যাচে হয়েছেও তাই। সঙ্গত কারণেই পেসারদের এতটা দাপট।
কিন্তু তাই বলে ১০২ রান! এটা কি বোধ করি কেউ মানতে পারবেন না। তার ওপরে দেশটি আবার বাংলাদেশ। ওয়ানডে যাদের প্রিয় ফরম্যাট এবং এই ফরম্যাটে যারা ইতোমধ্যেই এশিয়ার উঠতি পরাশক্তির তকমা পেয়ে গেছেন। অন্য আট দশজন ক্রিকেট অনুরাগীর মতো বিষয়টি মানতে পারছেন না বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনও। তার বটম লাইন হলো- ‘তাই বলে ১শ রানের খেলা হয় কী করে? দেখেন, এখানে খেলছে কিন্তু আমাদের সেরা ব্যাটসম্যানেরা। তাছাড়া এমন নয়, যে কেউ ফিফটি করেনি।’
বিন্দু মাত্র ভুল বলেননি হাবিবুল বাশার। কেননা এই টুর্নামেন্টে ইতোমধ্যেই তিন ব্যাটসম্যান ফিফটির কোটা স্পর্শ করেছেন। প্রথম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৫১, ইরফান শুক্কুর ৫৬ ও তৌহিদ হৃদয়ের নামের পাশে ৫২ রান যোগ করে তবেই ফিরেছেন। তাছাড়া গতকাল তামিম ইকবাল একাদশের বিপক্ষে মুমিনুল হকের ৩৯ ও নুরুল হাসান সোহানের ৪১ রানের ইনিংস দেখেও কিন্তু মনে হয়েছে উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য কিছু হলেও আছে। তাহলে তামিম কেন ২ রানে ফিরে গেলেন? লিটন দাসই বা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ কেন (১১, ০)। মুশফিকুর রহিমকে কেন ১ রানেই ফিরতে হবে? তিন দলের চলমান ওয়ানডে সিরিজের আগে দু’দিনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ হলো। সেখানে তো একমাত্র মুমিনুল হকের ব্যাট ছাড়া আর কারো ব্যাটই হাসেনি। কিন্তু কেন?
এমন প্রশ্নে হাবিবুল বাশারের অকাট্য যুক্তি, ‘এটা স্রেফ ওদের সামর্থ্যের সঠিক প্রয়োগের ঘাটতি। আমরা কিন্তু সম্প্রতি দুই দিনের ম্যাচও খেলেছি সেখানে একদিনও কোনো দল সারাদিন ব্যাটিং করতে পারেনি। মুমিনুলের সেঞ্চুরি (১১৭*) বাদ দিলে কারো ইনিংসও কিন্তু প্রত্যাশিত লম্বা হয়নি।’
তবে করোনার দীর্ঘ বিরতি ও উইকেটের আচরণও তার ভাবনার করিডোরে পায়চারি করছে।
‘করোনার সাত মাস বসে থাকার পর এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এটা আমি আগেও বলেছি সবাইকে একটু সময় দিতে হবে। সাত মাস পরে এসে কিন্তু আগের মতো পারফরম্যান্স হবে না। সবাইকে একটু সময় দিতে হবে। উইকেটও অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর। মোটেও ফ্ল্যাট নয়। তাছাড়া দুই ম্যাচেই কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে। মিরপুরে বৃষ্টি হলে কিন্তু মাঠ নরম হয়ে যায়। তখন স্ট্রোক খেলা কঠিন। বল স্লো হয়ে আসছে, ডাবল পেস হচ্ছে, ডাবল বাউন্সও হচ্ছে। কেউ ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমার মনে হয় না এতটা লো স্কোরিং ম্যাচ হওয়ার মতো খারাপ উইকেট ছিল।’
তবে তার একটি জায়গায় তৃপ্তি আছে। বৃষ্টিস্নাত দিনে বোলিং বান্ধব উইকেট পেয়ে বোলাররা এর সঠিক ব্যবহার করতে পেরেছেন। তাই তাদের প্রশংসা করতে বিন্দু মাত্র কার্পণ্য করলেন না টাইগার নির্বাচক।
‘আমাদের বোলাররা উইকেটের দারুণ ব্যবহার করছে। আমাদের বোলাররা এক্সট্রা অর্ডনারি বল করছে যার ফলে ব্যাটসম্যানদের কাজটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
হাবিবুল বাশার বরাবরই আশাবাদী মানুষ। সঙ্গত কারণেই তিনি আশা করছেন, ব্যাটসম্যানেরা খুব শিগগিরই ছন্দে ফিরে স্ব স্ব নামের সুবিচার করবেন।
‘আমি আশা করছি ব্যাটসম্যানরা ছন্দে ফিরবে। সামনের ম্যাচগুলোতে নিশ্চয়ই উইকেট ভালো হবে। তখন আমরা ভালো ব্যাটিং আশা করতেই পারি। এটা মানছি অনেক দিন পর তারা খেলতে নেমেছে, দুটি ম্যাচই ওভারকাস্ট কন্ডিশন ছিল। কিন্তু তাই বলে কী আমরা আরেকটু ভালো ব্যাটিং আশা করতে পারি না?’
টপ নিউজ তামিম ইকবাল তিন দলের ওয়ানডে টুর্নামেন্ট দুই ম্যাচ শেষ প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটসম্যানরা বিসিবি প্রেসিডেন্ট'স কাপ ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ লিটন দাস