Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবে পাব আত্মমুক্তির প্রশস্ত রাস্তা?

শায়রুল কবির খান
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:১২ | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:১৩

একটি দেশ লক্ষ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার নিয়ে গড়ে ওঠে। আর গড়ে ওঠা দেশে সমাজবাদি শক্তি সাম্যের নামে ৫৬ হাজারের বর্গমাইলকে ঘিরে সাম্প্রদায়িকতা, জাতিগত বৈরিতা, রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি ও শক্তিমত্তার আগ্রাসনও গড়ে ওঠে। আর একে উপজীব্য করে দেশকে কৃত্রিমভাবে সংকটের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কিংবা নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মূল্যবোধের কোনো পরিবর্তন হয় না।

দেশ ও সরকার একটি একীভূত রূপ। দেশহীন সরকার যেমন অকল্পনীয় তেমনি সরকারহীন দেশও অকল্পনীয়। মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজ গড়ে ওঠে আর সমাজের নির্ভরতায় দেশ তার অস্তিত্বের যৌক্তিকতা খুঁজে পায়।

বিজ্ঞাপন

গণতান্ত্রিক দেশে মানুষের রাজনৈতিক অধিকারকে ধূলিসাৎ করে মানুষের মুক্তির কল্পনা অবান্তর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ব্যতিরেকে আদর্শ রাষ্ট্র কেবল কল্পলোকেই থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই দেশের ভেতরে সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে সুস্থিরতা আসে।

গণতান্ত্রিক পন্থায় যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয় আত্মমুক্তির পথ বাতলে দেওয়ার প্রশস্ত রাস্তা। সে মুক্তির পথ ধরে দেশের ভেতর গড়ে ওঠে নানা মত ও পথের সম্মিলন।

বাংলাদেশের অভ্যূদয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শতবর্ষের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। এর মধ্যেও বাংলাদেশের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবি বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন, কখনও পরাধীন ব্যখ্যা করে নিজেদের সাংস্কৃতিক প্রবণতায় বিভেদ তৈরি করতে চান। প্রতিটি দেশেই স্বাধীন সাংস্কৃতিক বিবেচনায় তৈরী হয় নিজস্ব জাতীয়তাবাদের মূল্যবোধ। আর এ মূল্যবোধটা থাকে অনেক বেশি উদার। কিন্তু আমাদের বাস্তবতায় বুদ্ধিজীবীদের ছবি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ভাবনায় রাজনৈতিক ও মানবিক আদর্শের একটা নৈতিক সংকট তৈরী করে দেয়। বাস্তবতার সুকঠিন প্রয়োজনে রাজনীতি চালিত হয় কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা আর নৈতিকতার সরল পথ একত্রে মিলিত হয় না।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা রাজনীতির নৈতিকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সারাদেশে বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে সরকার বার বার সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে থাকেন। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ার স্বপ্ন নিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বল্পসময়েই সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক গড়ার ভাবনাটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।

তখন সমাজতান্ত্রিক ভাবনাটা ছিল সাধারণ নাগরিকদের চাওয়া পাওয়ার মাঝে।  সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির জন্য মুল সংগ্রামটা করেছেন দরিদ্ররাই, বড়লোকেরা নন। অথচ সমাজের সকল সুবিধা ভোগ করছেন তথাকথিত শিক্ষিত বড়লোকেরা। ফলে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মধ্যখানে মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্তের নাগরিকদের সংগ্রামের মধ্যকার সুবিশাল পার্থক্যটা তৈরি হয়। সরকারের ভেতর শিক্ষিত সুবিধাভোগীরা মধ্যবিত্তের রাজনীতির নামে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে যেভাবে আপোস করছিল তারাই  চারিদিকে সুবিধাভোগী গোষ্ঠী হয়ে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে দেশকে স্বাধীনতার স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

আজকের বাংলাদেশও যথার্থভাবে প্রকৃত কল্যানমূখী রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারছে না সরকারের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা উপলব্ধির অভাবে। অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আজ যে স্থানে সরকার দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে এককভাবে দেশের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার দেশের সকল মথ ও পথের সঙ্গে সমস্ত জনগোষ্ঠীর সমন্বয়।

দেশ আর জন্মভূমি যাই বলা হোক না কেন, আমাদের সমাজের সাংস্কৃতিক চেতনার সঙ্গে দেশের রাজনীতির সংযুক্তি অনিবার্য। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার রূপকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সাংস্কৃতিক চেতনা বলতে ধর্ম, শিল্প-ভাবনা, বিজ্ঞানমনস্কতা, সামাজিক রুচি ও মানবিক গুণাবলিকে বুঝে থাকি। কিন্তু এ গুণগুলি বিকাশের জন্যে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনের সঙ্গে দেশের আলোকিত মুখগুলোর সংযোগ ঘটানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই ধরণের সংযোগ খুব কমক্ষেত্রেই ঘটে। এদিকে আবার সামাজিক সাংস্কৃতিক মুল জায়গায় নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন ছাড়া যে কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য।

সমাজ উন্নয়নে সুষম বণ্টনের ব্যর্থতার কারণে ভৌগোলিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক বাস্তবতা কোনোটাই কাজ করে না। ভৌগোলিক সীমারেখা চিহ্নিত হবার পরও ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি এমনকি পানি প্রবাহের মতো বিষয়গুলো বিরোধের স্থলে দাঁড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা আর দখলদারিত্বের রাজনীতির পাশাপাশি সরকার ব্যবস্থা একটি কল্যানমূখী রাষ্ট্র গঠেনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবিক মূল্যবোধ তৈরীর সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে উৎপাদনমুখী রাজনীতি কোনভাবেই সম্ভব নয়।

অথাৎ ফসল উৎপাদনের সঙ্গে ন্যায়সংগতভাবে কৃষকের জীবন ভাবনা বিকাশের পরিবেশ তৈরী সরকারের দ্বায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে মানবিক জ্ঞান বিকাশের সামাজিক জীবন যাপনের উপকরণ ধর্মীয়, স্বতন্ত্র ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের নাগরিক অর্থাৎ ভৌগোলিক সীমারেখার অন্তর্গত নাগরিকরা একত্রে এসে দাঁড়ায়। সেই স্হানটিকে নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করে তোলা, এই একটি বিষয় নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত হলে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা কল্যানমূখী হবেই। উদাহরণস্বরূপ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় বলা যায় মালয়েশিয়ার নাম। মালয়েশিয়া সামাজিক বিকাশের মাধ্যমে এক মুসলিম এশীয় দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে বিকশিত দেশ হিসেবে পরিণত হয়েছে।

আমাদের উচিত নাগরিকদের রুচিকে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রেখে জীবনযাপনের আধুনিকরণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা। এখনও যদি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে সরকার দেশের নাগরিকদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং সুষম বণ্টনে উন্নয়ন অগ্রাধিকার মনে করে, তাহলে দেশের রাজনীতি গুণগত মান এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন সম্ভব।

লেখক: রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

শায়রুল কবির খান

বিজ্ঞাপন

শেষ কবে এতটা নিচে ছিলেন কোহলি?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৪

মুম্বাই যাচ্ছেন শাকিব খান
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর