বেরোবিতে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের উপস্থিতপত্রে শেখ মুজিবের ছবি নিয়ে সমালোচনা
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৫২ | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০৯
রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষিগুচ্ছ ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দুই ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের এটেনডেন্স শিটে মুজিববর্ষের লোগো ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবনে অনুষ্ঠিত এসব পরীক্ষায় এটেনডেন্স শিটে ব্যবহার হয়। তবে বিষয়টি শিক্ষকদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তালিকাটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক ও ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে এখনো শেখ মুজিবের লোগো থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জুলাই আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকালে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে কবি হেয়াত মাহমুদ ভবনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরীক্ষার রিজার্ভ ডিউটির তালিকায় দেখা গেছে, আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন ও নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. আপেল মাহমুদসহ পাঁচ শিক্ষকের তালিকায় শেখ মুজিবের জন্ম শতবার্ষিকীর লোগো রয়েছে।
এ ছাড়া একই দিন শনিবার সকালেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও একই লোগো সংবলিত শিক্ষকদের রিজার্ভ ডিউটির তালিকাও সব ভবনে সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, শেখ মুজিবের লোগো সংবলিত সবগুলো উপস্থিতিপত্রে শিক্ষকরা সইও করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজে এখনো এ লোগো দেখে উপস্থিত অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে অনতিবিলম্বে ওইসব উপস্থিতপত্র বাতিলেরও দাবি জানান তারা। বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয় বলে সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সকালের পরীক্ষাটির সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনস সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামীপন্থি নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. আপেল মাহমুদ। এর আগে তিনি আবু সাঈদ বই মেলা কমিটিতে থেকেও বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কট্টর আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ড. আপেল মাহমুদ ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহসীন হলে ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। ক্যাম্পাসে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েই ২০১৪ সালে নীলদল প্রতিষ্ঠা করে নিজেই সভাপতি হন। এর পর হয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে রয়েছেন কার্যকরী সদস্য পদে। এ ছাড়াও নীল দলের প্যানেলে থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ২০২৩ সালে জয়লাভও করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক জানান, অনুষদে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থাকার পরও বারবার উপাচার্য বিতর্কিত আওয়ামীপন্থি শিক্ষক আপেলকেই দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পরীক্ষায়ও এ শিক্ষককে দায়িত্বে রাখা হতে পারে।
এ বিষয়ে আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল শুধু যোগাযোগ করা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে টিম আসছে তাদের সঙ্গে থাকা। রাজশাহী টিমের যাবতীয় সবকিছু আমি দেখাশোনা করছি। তাদের নিরাপত্তা, কেন্দ্র ভিজিট, খাওয়া ইত্যাদি আমার দায়িত্ব ছিল। এখানে ফোকাল দায়িত্বে ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস রহমান স্যার। এখানে কাজের সুবিধার জন্য কয়েকটি উপ-কমিটি করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা রাখা একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধনের জন্য যখন দল মত নির্বিশেষে কাজ করছে তখনো পরাজিত শক্তি বিভিন্নভাবে সেটিকে প্রতীয়মান করে যাচ্ছে, এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম