নানা তর্ক-বিতর্কে আসছে বৈশাখ, বরণে প্রস্তুত ঢাবি
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ২২:২৮
ঢাকা: প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও পালিত হবে বর্ষবরণ উৎসব ও শোভাযাত্রা। আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও নানা আয়োজনের মধ্যে পালিত হওয়ার কথা থাকলে এবার আয়োজনটা যেন বিতর্কময়। শুরুতে শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন, পরে শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন, চারুকলার শিক্ষার্থীদের মনমালিন্যসহ নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই উদযাপন হতে যাচ্ছে এবারের বর্ষবরণ উৎসব। আর এই উৎসবকে ঘিরে চারুকলার শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা অনীহাও দেখা দিয়েছে।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তন করে আনন্দ শোভাযাত্রায় স্থির হয়েছেন। যেখানে পরিবর্তনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও চারুকলার শিক্ষার্থীদের মাঝে একধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তাদের দাবি, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে তাদের মতামত নেয়নি ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাদ দিয়ে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ হোক- এ সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন না তারা। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে নাম পরিবর্তনের ‘যথার্থ’ কারণ উল্লেখ করার দাবি জানিয়েছেন।

আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ছবি: সারাবাংলা
এ ছাড়াও, শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। নামের এ পরিবর্তনকে মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে বর্ণনা করে বিষয়টিকে ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর’ কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে বর্ণনা করে বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। কর্তৃপক্ষকে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসারও আহ্বান জানায় তারা।
ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা মোটিফে আগুন
শনিবার (১২ এপ্রিল) চারুকলায় এবারের শোভাযাত্রার ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা দু’টি পুড়িয়ে দিয়েছে দৃষ্কৃতকারীরা। এতে প্রাথমিকভাবে একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী বলে জানান গেছে। এ ছাড়া সে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানিয়েছে তার সহপাঠীরা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রসংগঠন, শিক্ষক সংগঠন ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বিবৃতি ও বক্তৃতা দিয়েছেন। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘চারুকলাতে বৈশাখের শোভাযাত্রার র্যালির অনুষঙ্গ যারা পুড়িয়ে দিয়েছে তারা জুলাইকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ফ্যাসিবাদের অনুসারীরা এসব ঘটিয়েছে।’

আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ছবি: সারাবাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ একাধিক সংগঠন আলাদা বিবৃতিতে এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার দাবি করেছে। বিবৃতিতে তারা দাবি করে, চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন রহস্যজনক নয়, পরিকল্পিত। নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত নিয়ে অনলাইনে ও বাস্তবে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা ও আইন লঙ্ঘনকারী কার্যক্রমে জড়িত হচ্ছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তিরও দাবি জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে ছাত্রদল দাবি করেছে।
এদিকে মোটিফ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মানববন্ধন করেছে চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে তারা দ্বিগুণ উৎসাহে বর্ষবরণ উৎসব পালিত হবে বলে জানিয়েছেন। মানববন্ধনে শিল্পী কাওসার হাসান টগর বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ গোষ্ঠীর সরকারি হস্তক্ষেপে গভীর রাতে নির্মিতব্য প্রতীকী ফ্যাসিবাদের মুখায়ববে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশে থাকা শান্তির প্রতীক পায়রা মোটিফটিও পুড়ে যায়। আমরা চারুশিল্পীরা এতে দমে যাইনি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে বর্ষবরণ ও আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
যা যা থাকছে এবারের বর্ষবরণ উৎসবে
এবারের বর্ষবরণ উৎসবে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাবির জনসংযোগ দফতর।
ঢাবির এক বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, শোভাযাত্রায় এবছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এবছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ। এছাড়া, ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি মোটিফ তৈরির কাজও শুরু করেছে চারুকলা অনুষদের শিল্পীরা।
তারা জানিয়েছেন, নতুন করে কাজ শুরু করেছেন তারা। তবে আগামীকালকের মধ্যে শেষ হবে কিনা তা নিয়েও নিশ্চিত নয়। তবে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম